মানুষের পতনের যে দুই কারণ বলেছেন বিশ্বনবি

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১০ পিএম, ১০ জুন ২০২০

সবর, সহনশীলতা, পরিশ্রম, কষ্ট ও বীরত্বপূর্ণ জীবন-যাপন মুমিন জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-মুসিবত সব সময়ই মুমিন এ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবে। মুমিন মুসলমান কখনো আরাম প্রিয়, পরিশ্রমবিমুখ, কোমলতা প্রিয়, অলস, সুখপ্রত্যাশী, অমনোযোগী ও দুনিয়া পূজারি হতে পারে না।

এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিয় সাহাবি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়েমেনের গভর্নর করে পাঠানোর সময় এ মর্মে নসিহত করেছিলেন যে-
'হে মুয়াজ! আরাম প্রিয়তা থেকে বিরত থাকবে। কেননা, আল্লাহর বান্দারা আরাম প্রিয় হন না।' (মিশকাত)

ইমাম আবু দাউদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বিখ্যাত গ্রন্থ আবু দাউদে, হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় উল্লেখ করেন-
‘সাদাসিধে (সাধারণ) জীবন-যাপনকে ঈমানের নিদর্শন বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।'

যারাই আরাম প্রিয়তার দিকে ঝুঁকে পড়েছে, দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়েছে, ইসলামের জন্য মৃতু্যকে ভয় করেছে, তাদের অনিবার্য ধ্বংসের ব্যাপারে সতর্ক বার্তা তুলে ধরেছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে সম্বোধন করে বললেন- 'আমার উম্মতের উপর ঐ সময় খুবই কাছাকাছি, যখন অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, যেভাবে লোকেরা খাবার গ্রহণে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

তখন এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমাদের সংখ্যা কি এতই কম হবে যে, আমাদের ধ্বংসের জন্য অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর লোকেরা একত্রিত হয়ে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- 'না', সে সময় তোমরা সংখ্যায় কম হবে না বরং সে সময় তোমাদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। কিন্তু তোমরা বন্যায় ভাসমান খড়কুটার মতো হালকা হবে। তোমাদের শত্রুুদের অন্তর থেকে তোমাদের প্রভাব দূর হবে আর হীনমন্যতা ও কাপুরুষতা তোমাদের ঘিরে ধরবে।
একজন সাহাবি জানতে চাইলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কেন এ হীনমন্যতা আসবে?

তখন তিনি (প্রিয় নবি) বললেন- এ (দুইটি) কারণে যে-
- ঐ সময় দুনিয়ার প্রতি তোমাদের ভালোবাসা বেড়ে যাবে। আর
- মৃত্যুকে ভয় করতে থাকবে।'

বাস্তবেই দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে মুসলমানের মাঝে এ দুইটি বিষয় লক্ষ্যণীয় হারে বেড়েছে। পরকালের তুলনায় দুনিয়াকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে মানুষ। পক্ষান্তরে পরকালের ভয়ে মৃতু্যকে স্মরণ না করে বরং ইসলামি জীবন-যাপনে মৃতু্যর আশংকায় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছে মুসলমান।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেখে যাওয়া হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত হচ্ছে। যা থেকে বেরিয়ে আসা মুমিন মুসলমানের জন্য একান্ত আবশ্যক। তবেই মুমিন মুসলমান আবার সঠিক পথ ফিরে পাবে।

মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়ার ভালোবাসা ও ফেতনা থেকে বিরত থাকা। ইসলামি জীবন-যাপনে মৃত্যুর ভয়কে দূরে সরিয়ে দেয়া। পরকালের কল্যাণে মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথ ও মতে জীবন পরিচালনা করা। আর এ দোয়া করা-
اَللَّهُمَّ اِنِّى اَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّم وَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِوَمِنْ فِتْنَةَ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ
উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন আজাবিল কবর, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল।'
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের আজাব ও কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। জীবন ও মৃত্যুর ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই। আর দাজ্জালের ফেতনা থেকেও আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি।'

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার আসক্তি তথা ভালোবাসা থেকে হেফাজত করুন। পরকালের জবাবদিহিতায় ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। ইসলামি জীবনযাপনে মৃত্যুর ভয় থেকে বেঁচে থেকে পরকালের নাজাত লাভে বেশি বেশি মৃত্যুর স্মরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।