রমজানের পরিপূর্ণ ফজিলত লাভের উপায়
সপ্তাহে পার হলেই শুরু হবে রমজান। বরকতময় এ মাসের পরিপূর্ণ রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভে চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময় এখনই। রমজান মাস বছরের ১১টি মাসের চেয়ে মর্যাদাবান। এটি মহান আল্লাহর মাস। এ মাসজুড়ে বান্দা আল্লাহর জন্য রোজা রাখে। আর আল্লাহ তাআলা নিজেই এ রোজা প্রতিদান দান করেন।
আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য এ মাসটি এ জন্য নাজিল করেছেন যে, এ মাসে বান্দা আল্লাহ তাআলার হেদায়েত লাভ করবে। মাসটি বান্দার হেদায়েত লাভের মাস। কেননা বান্দার জন্য রোজা ফরজের ঘোষণা করেই আল্লাহ তাআলা হেদায়েত লাভের ঘোষণা দেন-
রমজান মাস। যা রমজানে নাজিল হয়েছে। মানুষের হেদায়েত লাভের জন্য।’ (সুরা বাকারা আয়াত : ১৮৫)
>> প্রশান্ত মনে ইবাদত
বান্দা যেন খুশি মনে কোনো সমস্যা ও চিন্তামুক্তভাবে আল্লাহ তাআলার জন্য রোজা রাখার মাধ্যমে তার হেদায়েত লাভ করতে পারে, এ জন্য তার মানসিক প্রশান্তি লাভে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন সর্বোত্তম ঘোষণ-
‘যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া। কুমন্ত্রণাদানকারী শয়তানদের বন্দী করে রাখা হয়।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমান জান্নাতি পরিবেশে শয়তানের ওয়াসওয়াসামুক্ত হয়ে মহান আল্লাহর জন্য ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত হবে। কুরআন, হাদিস, নফল নামাজ, জিকির-আজকারসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করবে মহান আল্লাহর জন্য নির্ধারিত মাস রমজান। লাভ করবে মহান আল্লাহ ঘোষিত মুমিনের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ হেদায়েত।
>> ইফতারের সময় জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ
রমজান হলো নিজেকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির অন্যতম মাস। এ মাসের মহান আল্লাহ খুশি হয়ে অনেক জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। এমনটিই ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-
‘আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রতিদিন ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ)
তাই মুমিন মুসলমানের উচিত ইফতার সামনে নিয়ে মহান আল্লাহ জিকির-আজকারে অতিবাহিত করা। আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
>> সাহরি গ্রহণে বরকত লাভ
এ মাসের অন্যতম সুন্নাত আমল হচ্ছে ভোর রাতে সাহরি গ্রহণ করা। ক্ষুধা না থাকলেও ন্যূনতম একটি খেজুর ও এক গ্লাস পানি হলেও সাহরি গ্রহণ করা।
কারণ ইয়াহুদি ও নাসারারা তাদের রোজায় ভোর রাতে সাহরি গ্রহণ করে না। তাই মুমিন মুসলমান ক্ষুধা না থাকলেও অল্প হলেও সাহরি গ্রহণ করবে। ভোর রাতে সাহরি গ্রহণে বান্দার জন্য অনেক কল্যাণ রয়েছে।
যে ইবাদতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখবে মুমিন
রমজানে রোজা পালন ফরয ইবাদত। এ ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে আল্লাহর ভয় অর্জনে যথাসাধ্য ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করবে দিন ও রাত।
রাতের তারাবিহ, তাহাজ্জুদ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার থাকবে অব্যাহত। সুযোগ থাকলে তারাবিহ ও তাহাজ্জুদে পুরো কুরআন তেলাওয়াত সম্পন্ন করা হবে সবচেয়ে উত্তম ইবাদত।
তাই এখন থেকেই দীর্ঘ কেরাতে নামাজ পড়ায় অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। বেশি বেশি রুকু সেজদায় অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। তবেই রমজানের পরিপূর্ণ ফজিলত লাভ করা সম্ভব হবে।
মুমিন মুসলমানের উচিত তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জনে কুরআনের ঘোষণায় নিজেদের প্রস্তুত করা। যে ঘোষণা ছিল আমাদের আগে চলে যাওয়া নবি-রাসুলদের উম্মতের জন্য ও প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও রোজা ফরজ ছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)
সুতরাং প্রতিটি ইবাদত তখনই আল্লাহর জন্য হবে যখন মানুষের ইবাদতে থাকবে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। তাকওয়া অবলম্বন করে ইবাদতও হবে পূর্ণ ফজিলত লাভের অন্যতম উপায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইবাদত, ইফতার, সাহরিসহ যাবতীয় নফল ইবাদতে আল্লাহর ভয়ের সঙ্গে আদায় করার তাওফিক দান করুন। রমজানের পরিপূর্ণ ফজিলত ও উপকারিতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ