আসছে মাহে রমজান : কতটা প্রস্তুত আমি
মহান আল্লাহর অপার কৃপায় বরকতপূর্ণ পবিত্র শাবান মাস অতিবাহিত করছি আমরা। ইতিমধ্যে মাসটির অর্ধেকেরও বেশি চলে গেছে। করোনাভাইরাসের আক্রমণে সারাবিশ্ব এক আতঙ্কের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। আমরা কেউ বলতে পারি না পবিত্র মাহে রমজানের রোজা রাখার তাওফিক আমাদের হবে কিনা।
তাই শাবান মাসের এ দিনগুলোতে রমজান পাওয়ার জন্য অনেক বেশি দোয়া করা উচিত। আল্লাহ তাআলা যেন তার অপার অনুগ্রহে এই মহামারি থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করেন।
মুমিন-মুত্তাকি বান্দা বরকতময় শাবান মাস থেকেই পবিত্র মাহে রমজানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তারা শাবান মাসেই একটি রুটিন তৈরি করে নেয় যে, গত বছরের রমজান থেকে এবারের রমজানে কী কী নেক আমল বেশি করবেন।
হাদিস পাঠে জানা যায়, শাবান মাস আসার আগেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদেরও পড়তে বলতেন-
اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবাও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান।’ (মুসনাদে আহমাদ)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।’
এ মাসকে বলা হয় মাহে রমজানের আগমনী বার্তার মাস। শাবান মাস মূলত পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি বেশি নফল রোজা, কুরআন তেলাওয়াত ও নামাজ আদায়ের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো নফল রোজা রাখতে শুরু করলে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি বিরতি দেবেন না। আর রোজার বিরতি দিলে আমরা বলতাম যে, তিনি মনে হয় এখন আর নফল রোজা রাখবেন না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ব্যতীত অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি নফল রোজা রেখেছেন।’ (মুসলিম)
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত অধিক হারে নফল রোজা আদায় করতেন না।’ (বুখারি)
তামাম মাখলুকাতের মধ্যে সেরা সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণের আগে থেকেই রোজা রাখা শুরু করতেন। বেশি বেশি নফল নামাজ, ইবাদত-বন্দেগিও করতেন।
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আপনার কাছে মাহে রমজানের পর কোন মাসের রোজা উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মান প্রদর্শনকল্পে শাবানের রোজা উত্তম।’ (তিরমিজি)
তাই আমাদের এখনই রমজানের পরিপূর্ণ কল্যাণ লাভে শাবান মাস থেকে কল্যাণের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। শুধু রোজা রাখলেই কি রমজান মাসের সার্থকতা? অবশ্যই ‘না’। রমজানে রোজাও রাখতে হবে এবং অধিকহারে নফল ইবাদত, দান-খয়রাত এবং পুণ্যের কাজও করতে হবে।
পরিশেষে-
আমরা যদি শাবান মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোতে নফল ইবাদতে অতিবাহিত করি আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এভাবে দোয়া করতে শুরু করি যে-
‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুস্থ রাখ, আমি যেন আগত রমজানে আগের তুলনায় অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগি, দান-খয়রাত, কুরআন তেলাওয়াতসহ সব নেক কাজ করতে পারি।’
একই সাথে আমাদের এই দোয়াও করা উচিত, আল্লাহ তাআলা যেন তার অপার মহিমায় রমজানের আগেই সারাবিশ্বকে প্রাণঘাতী মহামারি করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন আর মুসলিম উম্মাহ যেন সুন্দরভাবে রমজানের দিনগুলো অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পান।
আসুন একাগ্রচিত্তে প্রভুর দরবারে সকাতর দোয়া করি-
‘হে দয়াময়! তুমি তোমার অপার রহমতে বিশ্বমানবতাকে ক্ষমা কর। রহমত, বরকত আর ক্ষমার দিনগুলোতে নিষ্ঠার সাথে তোমার ইবাদত করার সুযোগ করে দাও। মসজিদে গিয়ে ইবাদত করা থেকে আর বিরত রেখো না। আমরা আমাদের গোনাহের জন্য তোমার কাছে ক্ষমার ভিখারী, তুমি আমাদের ক্ষমা করে তোমার রহমতের চাদরে আবৃত করে নাও। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ