কোয়ারেন্টাইন অমান্য করা হারাম!

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ০৫ এপ্রিল ২০২০


যে কোনো মারাত্মক সংক্রামক মহামারিতে আক্রান্ত হলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করা আবশ্যক। কোয়ারেন্টাইনে থাকার এ বাধ্যবাধকতাকে অমান্য করা হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন মিসরের আল-আজহার।

বর্তমান সময়ের প্রাণঘাতী সংক্রামক মহামারি করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করা ধর্মীয় বিধানে বাধ্যতামূলক। তা অমান্য কিংবা অস্বীকার করা হারাম। এটিকে ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ঘোষণা করেছেন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইলেক্ট্রনিক ফতোয়া বিভাগ।

ইসলামের দৃষ্টি হারাম কাজে অংশগ্রহণ কিংবা জড়িত হওয়া যেমন অপরাধ তেমনি কোয়ারেন্টাইনে থাকতে অস্বীকারকারী বা অমান্যকারী ব্যক্তিও অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে।

মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইলেক্ট্রনিক ফতোয়া সেন্টার তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে এক ফতোয়ায় এ তথ্য প্রকাশ করেন। ফতোয়া বিভাগ আরো জানায়-

কোয়ারেন্টাইন অস্বীকার করা শুধুমাত্র ধর্মীয় অপরাধই নয়, বরং এটি লঙ্ঘনের মাধ্যমে ধর্ম ও জন্মভূমির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধও বটে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকার গুরুত্ব ফতোয়া বিভাগ এভাবে তুলে ধরেছেন যে-
সংক্রামণ রোগের জন্য ইসলামই সর্ব প্রথম কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতির কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে সংক্রমণ মহামারিতে কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতি অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং যারা কোয়ারেন্টাইনে থাকবে তদের জন্য বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন।

বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস শোনালেন। আর তাহলো-
‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় মহামারি প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়েও যেও না।’ (বুখারি)

যারা মহামারির সময় কোয়ারেন্টাইন তথা ঘরে অবস্থান করবে তাদের জন্য রয়েছে মহা সুসংবাদ। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসনাদে আহমদ এর বর্ণনায় এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যদি মহামারি আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করে। আর নিজ বাড়িতে ধৈর্য সহকারে সাওয়াবের নিয়তে এ বিশ্বাস নিয়ে (ঘরে) অবস্থান করে যে, আল্লাহ তাআলা তাকদিরে যা চূড়ান্ত করে রেখেছেন, তার বাইরে কোনো কিছু তাকে আক্রান্ত করবে না, তাহলে তার জন্য রয়েছে একজন শহীদের সমান সাওয়াব।’ (মুসনাদে আহমদ)

মিসরের ফতোয়া সেন্টারও হাদিসের ওপর ভিত্তি করে সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন এবং এটিকে ধর্মীয় বিধান হিসেবে মনোনীত করেছেন।

ফতোয়া সেন্টার হাদিসের বিবৃতি উল্লেখ করে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ লোকেদের সাথে মেলামেশা না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।'

আর বাস্তবেও এটি একটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি যে, সংক্রামক মহামারির বিস্তারে একে-অপরের থেকে দূরে অবস্থান করাই সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি। যা মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একান্ত আবশ্যক।

করোনার প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে এ মহামারিতে নিরাপদ থাকতে হোমকোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করা সবার জন্যই জরুরি। সুতরাং বাইরে না থেকে হোমকোয়ারেন্টাইন তথা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করাই শ্রেয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠীর বৃহত্তর স্বার্থে হাদিসে ঘোষিত কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতির ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। করোনামুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।