করোনা : ‘ইসলামে কোয়ারেন্টাইন সর্বোত্তম প্রতিরোধ ব্যবস্থা’

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪০ পিএম, ২১ মার্চ ২০২০

বিশ্বজুড়ে নতুন এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসে নিজেদের সতর্ক অবস্থানে রাখতে দেশবাসীর প্রতি দিকনির্দেশনামূলক আহ্বান জানিয়েছেন মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমির, গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব আল্লামা মাহমুদুল হাসান। তিনি তার বয়ানে উল্লেখ করেন-

সুনির্দিষ্টভাবে করোনাভাইরাসকে কেয়ামতের আলামত বলা না গেলেও হাদিসের আলোকে মহামারি বা মওতে আম তথা দুর্ভিক্ষ কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বলক্ষণ। কেয়ামতের আগে পৃথিবীতে অঞ্চলভেদে একেকবার একেক ধরনের প্রাণঘাতী মহামারি, দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসবে।

তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বে পৃথিবীতে মহামারিরূপে কলেরা, বসন্ত, যক্ষ্মা, সোয়াইন ফ্লু, ইবোলাসহ নানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৯ সালের দু-একদিন বাকি থাকতে পৃথিবীতে নেমে এসেছে প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাস।

চীনের উহান প্রদেশে নেমে এসেছে এ মরণব্যাধি। যার নামকরণ করা হয়েছে কোভিড-১৯। ইতিমধ্যে বিশ্বের দেড়শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ভাইরাসে আক্রান্ত। এতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩২০ জন। এ রোগে মারা গেছে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৫৮৭ জন। সম্প্রতি বাংলাদেশও এ মরণব্যাধি করোনায় আক্রান্ত।

করোনার প্রাদুর্ভাবের এই পরিস্থিতিতে ইসলামের সুমহান শিক্ষা হলো কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহামারির সংক্রমণরোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করে বলেছেন-
‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা ছেড়ে চলে এসো না। আবার কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করে থাকলে, সে জায়গায় গমন করো না।’

করোনার সময় করণীয় তুলে ধরে তিনি সিরিয়ায় মহামারি প্লেগের প্রাদুর্ভাবের সময়ে হজরত ওমরের মদিনায় ফিরে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন।

একবার হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সফরে বের হয়েছিলেন। সিরিয়া মহামারি প্লেগ দেখা দিলে তিনি সে সফর বাতিল করে মদিনায় ফিরে গিয়েছিলেন।

সে সময় মুসলিম সেনাপতি হজরত আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফাকে বলেছিলেন, আপনি কি সফর স্থগিত করে আল্লাহর তকদির থেকে পলায়ন করছেন?

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত দূরদর্শিতার সঙ্গে সেনাপরি সে কথার জবাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আল্লাহর তকদির থেকে পালিয়ে আল্লাহর তকদিরের দিকেই অগ্রসর হচ্ছি।’

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের দেশেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে দেশ। বিশ্বের অনেক দেশ করোনার কারণে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

চিকিৎসকদের মতে, এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়ায়, তাই অন্যজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত, শরীর স্পর্শ ও কথাবার্তায় সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

তিনি বলেন, ‘গোটা বিশ্ব এই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করতে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করেছে। তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন, ফলে এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সব শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছেন। সরকারের এটি সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত। ইসলামি শরিয়তও এটি সমর্থন করে। আমার কাছেও সরকারের এই সিদ্ধান্ত কল্যাণকর মনে হয়েছে, এটি যদি আমরা গ্রহণ করি তাহলে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকেও তাতে কোনো বাধা নেই।

আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘এ মুহূর্তে আরেকটি বিষয় বিবেচনার দাবি রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমাদের ওপর আরোপিত সব বালা-মসিবত আমাদের কৃতকর্মেরই প্রতিফল।’ এই আয়াতের ধারাবাহিকতায় হাদিসেও এসেছে-
‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ব্যাপক আকার ধারণ করবে।’

এই হাদিসের ভাষ্য মতে আমাদের মাঝে অশ্লীলতা, জিনা-ব্যাভিচার এবং অনাচারমূলক সব অন্যায় কাজ পরিহার করে আল্লাহর তাআলার কাছে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আর তাহলো-
- মহামারি থেকে মুক্তির জন্য একনিষ্ঠতার সঙ্গে প্রার্থনা করতে হবে।
- ঘরে ঘরে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে।
- তাসবিহ-তাহলিল এবং আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিমগ্ন থাকতে হবে।

বিশেষ করে
- খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং
- জনসমাগমস্থল পরিহার করে চলতে হবে।

তিনি বলেন, ‘শুধু শরীরের ভাইরাস দূর করলেই চলবে না। মানুষের আত্মারও পরিশুদ্ধিকরণ প্রয়োজন। উদাহরণ পেশ করেন তিনি বলেন-
‘আমাদের শরীরে যদি ঘা হয়, তাহলে স্রেফ আক্রান্ত জায়গায় মলম লাগিয়ে ক্ষান্ত হয়ে যাওয়া উচিত নয়। রক্ত পরিষ্কারের জন্যেও ওষুধ সেবন প্রয়োজন। তদ্রূপ মানুষের শরীর যদি হয় একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র তাহলে সে শরীরের রাজধানী হলো কলব, যেটি আয়ত্তে চলে এলে বাকি অঙ্গসমূহও আপনা-আপনি আয়ত্তে চলে আসবে। ঠিক যেমন কোনো দেশ দখল করতে হলে প্রথমে সে দেশের রাজধানী দখল করতে পারলে গোটা দেশটি দখলে আনতে তেমন বেগ পেতে হয় না। তেমনি কলবকে আয়ত্তে আনতে পারলে অন্যান্য অঙ্গগুলোও আয়ত্তে আনা সহজতর হয়ে যাবে।’

এ সম্পর্কে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি প্রসিদ্ধ হাদিস তুলে ধরেন। আর তাহলো-
‘(মানুষের) শরীরের মধ্যে একখণ্ড মাংসপিণ্ড আছে। সেটি পরিশুদ্ধ হলে পুরো শরীর পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে সেটি নষ্ট হলে পুরো শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। আর সেই মাংসপিণ্ডটি হচ্ছে ‘কলব’ বা ‘অন্তর।‘

তাই অন্তর পরিশুদ্ধিতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য অন্যায়কে বর্জন করে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিমগ্ন রাখতে হবে। আরও বেশি বেশি রোনাজারির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়া পড়তে হবে-

اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُوْنِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّءِ الأَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল ঝুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বামি।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে বাহ্যিক পরিশুদ্ধির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং আইইডিসিআর-এর নির্দেশিত পন্থায় নিজেদের পরিচালনা করতে হবে এবং প্রয়োজনে হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে তওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।