হে আল্লাহ, তোমার দয়ায় বিশ্ববাসীকে রক্ষা কর!

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ১৯ মার্চ ২০২০

মাহমুদ আহমদ : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪। ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও মারা গেছে একজন। আল্লাহ তাআলা সবাইকে এ ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখুন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কেবল আল্লাহ তাআলাই এ মহামারির আক্রমণ থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করতে পারেন।

প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসসহ বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন। আর আল্লাহর নেকট্য অর্জন ও ভালোবাসা লাভের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে তার কাছে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে দেয়া। আল্লাহর কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার অন্যতম মাধ্যম হলো একনিষ্ঠতার সঙ্গে নামাজ আদায় করা। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ার সময় হতে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ প্রতিষ্ঠা করুন, আর ফাজরের নামাজে কুরআন পাঠ (করার নীতি অবলম্বন করুন), নিশ্চয়ই ফাজরের নামাজের কুরআন পাঠ (ফেরেশতাগণের) সরাসরি সাক্ষ্য হয়। আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়ুন, ওটা আপনার জন্য নফল, শীঘ্রই আপনার প্রভু আপনাকে প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৭৮-৭৯)

আয়াত দুইটিতে আল্লাহ তাআলার মানুষকে তার নৈকট্য লাভের পদ্ধতি শিখিয়েছেন। তাহলে প্রশ্ন জাগে-
বর্তমান সময়ের মহামারি করোনাভাইরাসের আতঙ্কে সারা বিশ্বের মানুষ যখন আতঙ্কিত তখন আমরা কি আমাদের ইবাদত-বন্দেগিতে পরিবর্তন এনেছি? আমরা কি আমাদের পরিবার ও মুসলিম উম্মার নিরাপত্তার জন্য রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেছি?
যদি আমরা তা না করে থাকি তাহলে আমরা চিন্তা করে দেখি যে, আমার অবস্থান কোথায়?

আমরা যদি সংক্রামক মহামারিসহ সব ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকতে চাই তাহলে আমাদের নীরবে-নির্জনে পবিত্র হৃদয় নিয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে আমাদের পাপসমূহ থেকে ক্ষমা চাই।
আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তিনি ইচ্ছা করলেই আমাদের ক্ষমা করতে পারেন। সুতরাং আমাদের কাজ হচ্ছে নামাজ পড়ে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া। গভীর রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে তার দরবারে কান্নাকাটি করা। হাদিসে এসেছে-
- হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিয়মিত তোমাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উচিত। কেননা এটা অতীতের সব সৎকর্মশীলদের পদ্ধতি ছিল এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম ছিল। এই অভ্যাস পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, মন্দ কাজ দূর করে আর শারীরিক রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করে।’ (তিরমিজি)

- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রাতে শেষ প্রহর যখন আসে তখন আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন আর বলেন, আছো কী কেউ? যে আমার কাছে দোয়া প্রার্থনা করবে আর আমি তার দোয়া কবুল করবো। কেউ কী আছো? যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আর আমি তাকে ক্ষশা করবো। কেউ কী আছো? সে তার নিজের দুঃখ-ক্লেশ দূর করার জন্য প্রার্থনা করবে? আমি তার দুঃখ-কষ্ট বিদূরিত করে দেবো। এভাবে আল্লাহ তাআলার এই আহ্বান (ততক্ষণ পর্যন্ত) চলতেই থাকে এমন কি সুবেহ সাদেক তথা সকালে আলোক রেখা ফুটে ওঠে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, যে আমার বন্ধুর সাথে দুশমনি করেছে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দা, যতটা আমার নৈকট্য, যা কিছু আমার পছন্দ আর আমি তাদের জন্য যেসব ফরজ করে দিয়েছি, তা থেকে লাভ করতে সক্ষম হবে, ততটা অন্য আর কিছু থেকে লাভ করতে পারবে না। আরও নফলের মাধ্যমে আমার বান্দা আমার এমন নিকটতর হয়ে যায় যে, আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করে দিই। আর আমি তাকে যখন নিজের বন্ধু বানিয়ে নেই তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শুনে, চোখ বনে যাই যাই যা দ্বারা সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দ্বারা সে ধরে রাখে, তার পা হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলা-ফেরো করে, অর্থাৎ আমি-ই তার রূপকার-নির্মিতা। আমার কাছে চাইলেই আমি তাকে দিই, সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আমি তাকে নিরাপদ আশ্রয় দান করি।’ (বুখারি)

- হজরত আবু হুরায়ারা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তির ওপরও আল্লাহ তাআলা রহম করুন, যে রাতের বেলায় জেগে ওঠে ও নামাজ পড়ে আর প্রিয়তমা স্ত্রীকে জাগিয়ে দেয়। স্ত্রী জেগে ওঠতে গরিমসি করলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় যাতে সে সজাগ হয়ে ওঠে পড়ে। অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা সেই নারীর প্রতিও রহম করেন, যে প্রথমে জেগে ওঠে, নামাজ পড়ে আর প্রিয়তম স্বামীকেও জাগিয়ে তুলে। স্বামী জেগে ওঠতে গড়িমসি করলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় যাতে সে জেগে ওঠে।’ (আবু দাউদ)

সুতরাং প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসসহ যাবতীয় রোগ-ব্যাধি ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকতে কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনাগুলো মেনে চলি। ব্যক্তি পরিবার দেশসহ পুরো বিশ্ববাসীর জন্য দোয়া করি। সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনার আহ্বান জানাই।
আমরা সবাই যদি হৃদয়কে পবিত্র করে তাহাজ্জুদ নামাজে একান্তভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তবেই আল্লাহ তাআলা আমাদের রক্ষা করবেন।

হে আল্লাহ, তোমার দয়াই এ প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাস থেকে বিশ্ববাসিকে মুক্তি দিতে পারে। তুমি আমাদের প্রতি রহম করো। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।