ঘুমানোর সময়ের ১০টি সুন্নাত কাজ

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৩৯ পিএম, ০৭ মার্চ ২০২০

মানুষের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতরাজির মধ্যে ঘুম একটি। এর মাধ্যমে তিনি বান্দার প্রতি অনেক বড় অনুগ্রহ করেছেন। কুরআনুল কারিমের এ নেয়ামতের কথা তুলে ধরে আল্লাহ বলেন-

- ‘তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ৭৩)
- ‘তোমাদের ঘুমকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী।’ (সুরা নাবা : আয়াত ৯)

দিনের ক্লান্তি কাটিয়ে সুস্থ জীবন যাপনে এবং শরীরের বর্ধন, কাজের জন্য নিজেদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে ঘুমের বিকল্প নেই। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যও ঘুম অনেক জরুরি বিষয়।

ঘুমের মাধ্যমে মুমিন বান্দা নিজেদের দেহ ও মনকে প্রশান্তি দেয়। আর তাতে স্রষ্ঠার প্রতি আনুগত্য ও মনোবল দৃঢ় হয়।

মুমিন মুসলমানের উচিত ঘুমকে ইবাদতে পরিণত করতে সুন্নাত ও শরয়ী আদব মেনেই ঘুমাতে যাওয়া। যাদের ঘুম আসে না তাদের জন্য ঘুমের সুন্নাতগুলো মেনে চলা জরুরি। ঘুমাতে যাওয়া সম্পর্কে হাদিসে একাধিক দিক-নির্দেশনামূলক নসিহত পেশ করা হয়েছে। যা পালনে ঘুমের সময়টিও হবে ইবাদতে পরিপূর্ণ।

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, ‘আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং জাগ্রত হওয়ার পর নামাজ আদায় করি। জেগে থাকা অবস্থায় যেভাবে নামাজের মাধ্যমে সাওয়াবের আশা করি ঠিক সেভাবে ঘুমের মধ্যে সাওয়াবের আশা করি।’ (বুখারি)

ঘুমকে ইবাদতে পরিণত করতে ১০টি সুন্নাতি আদব তুলে ধরা হলো-

>> ঘুমের আগে বিছানা ঝেড়ে নেয়া
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি তোমাদের কোনো ব্যক্তি বিছানায় (ঘুমাতে) যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানে না যে, বিছানার উপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কিনা। তারপর পড়বে-

بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ
উচ্চারণ : বিসমিকা রাব্বি ওয়াদাতু ঝাম্বি, ওয়া বিকা আরফাউহু, ইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা, ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজ বিহি ইবাদাকাস সালিহিন।’
অর্থ : ‘হে আমার রব্ব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠবো। যদি আপনি ইতোমধ্যে আমার জান কব্‌য করে নেন তা হলে, তার উপর রহম করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হেফাজত করবেন, যেভাবে আপনি আপনার নেক বান্দাদের হেফাজত করে থাকেন।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

>> আল্লাহর নামে দরজা বন্ধ করা
হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখ। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর উপর কোনো বস্তু আড়াআড়ি করে রেখো। আর (শয্যায় যাওয়ার সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দেবে। (বুখারি)

>> ঘুমানোর সময় দোয়া পড়া
হজরত হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে নিজ বিছানায় শোয়ার সময় নিজ হাত গালের নীচে রাখতেন, তারপর বলতেন-

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার নামেই মরি, আপনার নামেই জীবিত হই ‘
আর যখন ঘুম থেকে জাগতেন, তখন বলতেন-
‏الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
উচ্চারণ : ‘আল-হামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’
অর্থ : সেই আল্লাহ্‌র জন্য প্রশংসা, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করলেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের পুনরুত্থান হবে।’ (বুখারি)

>> ডান কাতে শোয়া
হজরত বারাআ ইবনু আজিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নিজ বিছানায় বিশ্রাম নিতে যেতেন, তখন তিনি ডান পাশের উপর ঘুমাতেন।’ (বুখারি)

>> অজু করে ঘুমানো
হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানাবাতের (অপবিত্রতা) অবস্থায় ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি লজ্জাস্থান ধুয়ে নামাজের ওজুর মতো ওজু করে ঘুমাতেন।’ (বুখারি)

>> সতর অবস্থায় ঘুমানো
হজরত বাহয ইবনে হাকিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘আমি প্রশ্ন করলাম- হে আল্লাহর রাসুল ! আমাদের লজ্জাস্থান কতটুকু ঢেকে রাখব এবং কতটুকু খোলা রাখতে পারব? তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন- ‘তোমার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া সবার দৃষ্টি থেকে তোমার লজ্জাস্থান হেফাজত করবে।’
তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘পুরুষরা একত্রে অবস্থানরত থাকলে?
তিনি বললেন- ‘যতদূর সম্ভব কেউ যেন আভরণীয় স্থান দেখতে না পারে তুমি তাই কর।
আমি আবার প্রশ্ন করলাম- ‘মানুষ তো কখনো নির্জন অবস্থায়ও থাকে।’
তিনি বললেন- ‘আল্লাহ তাআলা তো লজ্জার ক্ষেত্রে বেশি হাক্বদার। (ইবনু মাজাহ)

>> উপুড় হয়ে না শোয়া
হরজ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে পেটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা এ রকম শোয়া পছন্দ করেন না।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

>> আলো বন্ধ করে ঘুমানো
হজরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শোয়ার (ঘুমের) সময় তোমরা তোমাদের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রেখ না।’ (নাসাঈ)

>> দুঃস্বপ্নে পাশ ফিরে ঘুমানো
হরজত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন সে যেন তার বামপাশে তিনবার থু থু ফেলে এবং শয়তানের (অনিষ্টতা) থেকে আল্লাহর কাছে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর যে পাশে ঘুমানো ছিল তা থেকে যেন বিপরীত দিকে ফিরে ঘুমায়।’ (মুসলিম)

>> ঘুমের খারাপ কিছু দেখার পর করণীয়
হজরত আবু কাতাদাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর দুঃস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন এমন কোনো ব্যাপারে স্বপ্নে দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন সে যেন তার বাম পাশে তিন বার থু থু ফেলে এবং (আউজুবিল্লাহ বা সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পড়ে) স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চায়। কারণ (এভাবে করলে) তাতে তার কোনো ক্ষতি হতে পারে না।’ (মুসলিম)

- অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন স্বপ্ন দেখল আর এতে কোকো কিছু পছন্দ হলো না, তখন সে যেন তার বাম পাশে থু থু ফেলে এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করে, (তাহলে) তা তাকে কোন সমস্যায় ফেলবে না। আর কারো কাছেই এ স্বপ্নের কথা বর্ণনা করবে না। আর যদি কোনো ভাল স্বপ্ন দেখে তাহলে সু-সংবাদ গ্রহণ করবে। আর যাকে সে মুহাব্বাত করে এমন ব্যক্তি ছাড়া কারো কাছে যেন তা বর্ণনা না করে।ক’ (মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘুমের উল্লেখত সুন্নাতগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। এ সুন্নাতগুলো আদায়ের মাধ্যমে ঘুমকে ইবাদতে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। সার্বিক ক্ষতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।