গোনাহ না করলেও তাওবাহ-ইসতেগফার করবেন যে কারণে

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫৫ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘সময়ের কসম! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে। যারা পরস্পরকে সত্যের দিকে আহ্বান করে এবং সবরের আহ্বান করে।’ (সুরা আসর)

এ সুরা থেকেই বোঝা যায়, মানুষ গোনাহ করে এবং গোনাহের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শয়তানও আল্লাহর কাছ থেকে মানুষের ক্ষতি করার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেই দুনিয়ায় নেমে এসেছে।

তবে হ্যাঁ, সব মানুষ সমানভাবে গোনাহ করেন না। কিন্তু কোনো মানুষ যদি গোনাহ না করে, তবে সে কেন তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা করবে? এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন উম্মতের দরদি নবি মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগের ও পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-
‘আল্লাহ আপনার অতিত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরলপথে পরিচালিত করেন।’ (সুরা ফাতাহ : আয়াত ২)

কারণ কুরআনুল কারিমের অন্য আয়াতে তাওবা-ইসতেগফারকে বান্দার কল্যাণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা কর, তাহলে তোমরা কল্যাণ লাভ করবে।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)

কুরআনুল কারিমে তাওবার নির্দেশমূলক অনেক আয়াত নাজিল হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিষ্পাপ ঘোষণা করে আয়াত নাজিল করার পরও তিনি প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবা-ইসতেগফার করতেন। তাঁর উম্মতকে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফারের কথা বলেছেন। হাদিসে এসেছে-
>> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ কসম! আমি এক দিনে সত্তর বারের চেয়েও বেশি তাওবা করি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।’ (বুখারি)

>> হজরত আগার ইবনে ইয়াসার মুযান্নি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর এবং (গোনাহের জন্য) তার কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবা করি।’ (মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাওবা করা বা গোনাহ মাফ চাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাহলে আপনি কেন প্রতিদিন এত বেশি তাওবা-ইসতেগফার করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন-
‘আমি কি তাঁর (আল্লাহর) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হবো না?’ (বুখারি, মুসলিম)

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, শুধু গোনাহ করলেই তাওবা ও ইসতেগফার করতে হয় এমনটি নয় বরং আল্লাহর একান্ত কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার অন্যতম মাধ্যমও এ তাওবা-ইসতেগফার।

সুতরাং যারা গোনাহ পরিত্যাগ করে চলেন বা গোনাহের কাজে কম লিপ্ত হন, তাদের জন্য সহজ উত্তর হলো-
প্রথমত : তাওবা-ইসতেগফার আল্লাহর নির্দেশ এবং কল্যাণ লাভের উপায়।
দ্বিতীয়ত : তাওবা-ইসতেগফার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত একান্ত আমল।
তৃতীয়ত : তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার বিষয়টিও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার নির্দেশ পালন, কল্যাণ লাভ এবং একান্ত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে বেশি বেশি তাওবা ও ইসতেগফারের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।