মায়ের মর্যাদা ও সম্মান
‘মা বড় ধণ সবচেয়ে আপন, নেইকো যার তুল্য; এক ফোঁটা দুধ অনেক দামি, কে দিবে তার মূল্য’ মা মুসলমান হোক আর মুশরিকা হোক, মায়ের সঙ্গে বেয়াদবি করা যাবে না। তাইতো কবি বলেন, ‘বিদেশে বিরাজ্যে যাদের সন্তান মারা যায়; পশুপাখি না জানিতে আগে জানে মায়।’ মায়ের মর্যাদা ও সম্মানে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যবহার জাগো নিউজে তুলে ধরা হলো-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মায়ের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে কাঁদছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হুরায়রা তুমি কেন কাঁদছ? আবু হুরায়রা বললেন, আমার মা আমাকে মেরেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কেন, তুমিকি কোনো বেয়াদবি করেছ?
আবু হুরায়রা বললেন, না, কোনো বেয়াদবি করিনি। আপনার দরবার হতে বাড়ি যেতে আমার রাত হয়েছিল বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি আপনার কথা বললাম। আমার মা মুশরিকা তাই আপনার কথা শুনে মা রাগে আমাকে মারলেন আর বললেন, হয় আমার বাড়ি ছাড়বি আর না হয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার ছাড়বি। আমি বললাম, হে আমার মা! আপনি বয়স্ক মানুষ। আপনার গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে মারতে থাকুন। এবং বাড়ি থেকে বের করে দিন। তবুও আমি আমার রাসুলকে ছাড়তে পারবো না।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমার মা তোমাকে মেরে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আমার কাছে নালিশ করতে এসেছ? এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই।
আবু হুরায়রা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি নালিশ করতে আসি নাই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতে চাইলেন, তাহলে কেন এসেছ?
আবু হুরায়রা বললেন, আমি জানি আপনি আল্লাহর নবী। আপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য দোয়া করতেন, যাতে আমার মাকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেন।
রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গে সঙ্গে হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আপনি আবু হুরায়রার আম্মাকে হেদায়েত করে দেন।”
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করলেন আর আবু হুরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়াচ্ছেন। পিছন থেকে কয়েকজন সাহাবা আবু হুরায়রার জামা টেনে ধরে এবং বলে হে আবু হুরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন?
আবু হুরায়রা বললেন, ওহে সাহাবীগণ আমার জামা ছেড়ে দাও।আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দেখতে চাই যে, আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া আগে পৌঁছে গেছে। আবু হুরায়রা দরজায় আওয়াজ দিতেই ভিতর থেকে তার মা যখন দরজা খুললো, আবু হুরায়রা দেখলেন তার মার সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। এবং মা আমাকে বললেন, হে আবু হুরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি, অনুশোচনা করেছি। এবং ভাবলাম আমার ছেলে তো কোনো খারাপ জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? বরং আমি তোমাকে মেরে লজ্জায় পড়েছি। হে আবু হুরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে নিয়ে চল।
আর তখনই আবু হুরায়রা তার মাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে নিয়ে গেলেন। তার মা সেখানেই কালিমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। পিতা মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা রক্ষা করতে পারো। (তিরমিজি)
পরিশেষে...
যত জুলুম-নির্যাতন-অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হয় হোক, মায়ের সঙ্গে অসদাচরণ করা যাবে না। আল্লাহ সবাইকে মায়ের খেদমত করে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/এমএস