মারিয়ার ইসলাম গ্রহণ যে কারণে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন...

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:০১ এএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯

মারিয়া কিলারা মাহমুদ। ক্যাথেলিক চার্চে পড়াশোনা করা এ নারীকে জন্মের পরই খ্রিস্টান শিশুদের মতো যথারীতি ব্যাপ্টাইজ করা হয়। খ্রিস্টান মা ও মুসলিম বাবার সন্তান মারিয়া কিলারা। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি। বর্তমানে ফিলিস্তিনি শিশুদের কুরআন শেখানোর কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

মারিয়া কিলারা মাহমুদের ইসলাম গ্রহণ স্বাভাবিক ছিল না। তার বাবা মাহমুদ ওয়াযবিজ ছিলেন ফিলিস্তিনি মুসলিম। আর মা ইলিদা ছিলেন প্যারাগুয়ান খ্রিস্টান। মা ইলিদা মনে প্রাণে চেয়েছিলেন মেয়ে মারিয়া কিলারা বড় হয়ে কোনো ক্যাথেলিক চার্চের সেবিকা হবেন। সে মতেই তাকে খ্রিস্টান শিক্ষা ও চার্চের দীক্ষা গ্রহণের পরিবেশে বড় করছিলেন।

মারিয়া কিলারা মাহমুদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় বৃহত্তম শহর শিকাগোতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে ফিলিস্তিন, প্যারাগুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রে। খ্রিস্টান শিশুদের মতো ব্যাপ্টাইজ করার পাশাপাশি তার পড়াশোনাও হয়েছিল ক্যাথলিক চার্চ স্কুলে।

সর্বোপরি মারিয়া কিলারা পেয়েছেন সত্যের সন্ধান। তিনি ফিলিস্তিনি শিশুদের কুরআন মাজিদ শেখানোর পাশাপাশি ইসলামের দাওয়াতি মিশনের শিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

মারিয়া কিলারা যেভাবে মুসলিম হন
মারিয়া কিলারার বয়স যখন ৯, তখন তার মা অসুস্থ হয়ে যান। মা অসুস্থ হওয়ার কিছু দিন আগে বাবা মাহমুদ ওয়াযবিজ গুরুত্বপূর্ণ এক কাজে আমেরিকা থেকে ফিলিস্তিন চলে যান। যাওয়ার সময় মারিয়ার ভাই ইউসুফকে সঙ্গে নিয়ে যান।

মারিয়ার বাবা ফিলিস্তিন যাওয়ার পর মারিয়ার মা অসুস্থ হয়ে যান। চিকিৎসার জন্য সে আর্জেন্টিনা চলে যায়। নিরুপায় হয়ে মা ইলিদা মেয়ে মারিয়াকে তার বাবা কাছে ফিলিস্তিনে পাঠিয়ে দেন।

বাবা মাহমুদ ওয়াযবিজের একান্ত ইচ্ছা তার ছেলে মেয়েরা মাদরাসায় পড়বে এবং অন্তত তারা ইসলামের কালেমা শিখবে এবং পড়বে। এ সুযোগে বাবা মাহমুদ মারিয়া ও ইউসুফকে ফিলিস্তিনের মাদরাসায় ভর্তি করে দেন। মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর তারা খুব দ্রুতই আরবি শেখে ফেলেন।

এরই মধ্যে স্ত্রী ইলিদা সুস্থ হয়ে ফিলিস্তিনে চলে আসেন। ফিলিস্তিনে এসেই মা ইলিদা মেয়ে মারিয়াকে গির্জায় পাঠিয়ে দেন। নানা প্ররোচনায় মারিয়াকে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী করে তোলেন।

মারিয়া কিলারা ইসলামের প্রতি এতটাই বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন যে, যখন আজান হতো তখন তিনি কানে আঙুল চেপে ধরতেন। এমনকি ইসলামি বই-পুস্তক মাটিতে ফেলে তা পায়ে মাড়িয়ে চলতেন। ইসলামের বিপক্ষে খ্রিস্টানদের জন্য অবদান রাখার মতো বিশেষ কিছু করার সংকল্প করেন।

মায়ের অসুস্থতার সময় মারিয়া যখন আরবি শিখেছিলেন, সে সময় থেকে আরবি ভাষাটা তার ভালো লেগেছিল। আরবি বই পড়তেও তার ভালো লাগতো। মাঝে মাঝে তিনি কুরআন মাজিদ খুলে দেখতেন এবং পড়তেন।

Convert

একদিন…
মারিয়ার মা ইলিদা মেয়েকে কুরআনের একটি কপি থেকে ‘মা মেরি’ (মারইয়াম) ও ‘যীশু’র (ঈসা) আলোচনা পড়তে দিলেন। এ ঘটনা মারিয়া কিলারার মনে গভীর রেখাপাত করে।

মারিয়া কিলারা তখন ত্রিত্ববাদ এবং একেশ্বরবাদ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দে পড়ে গেলেন। এদিকে মাকেও ভয়ে কিছু বলতে পারছিলেন না। আবার কুরআন পড়াও ছেড়ে দিতে পারছিলেন না।

ইতোমধ্যে তার বাবা ওয়াযবিজ আবার আমেরিকায় ফিরে গেলেন। যদিও মারিয়ার ফিলিস্তিন ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো না। তবুও তার মা ইলিদার কড়া শাসন তাকে আর্জেন্টিনার এক চার্চে যেতে হয়েছিল। তিনি সেখানে ছিলেনও কিছুদিন।

পরবর্তীতে মারিয়া একটি স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় চলে যান। এ সময় ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয় তার। বাবা মাহমুদ তাকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে বেশ সহযোগিতা করেন। সে সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এক ফিলিস্তিনি যুবককে বিয়ে করে ফিলিস্তিন চলে আসেন।

ফিলিস্তিনে মারিয়ার তেমন জানাশোনা ছিল না। একাকি জীবন কাটাতেন। নিঃসঙ্গতা কাটাতে তিনি বাচ্চাদের কুরআন পড়াতে শুরু করলেন। মাঝেমাঝে বয়স্ক নারীরাও আসতো তার সাথে আলাপ করতে। দিন দিন মারিয়া কিলারার পরিচিতি বাড়তে থাকে।

বর্তমানে মারিয়া কিলারা মাহমুদ প্রতিদিনই আল-কুদসের কোনো নির্জন স্থানে বসে শিশুদের কুরআন মাজিদ শেখাচ্ছেন। নবি-রাসুল ও সাহাবাদের গল্প শোনান। শিশুদের মাঝে চকলেট বিতরণ করেন।

বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে আরবি ও ইংরেজিতে কুরআন সম্পর্কে আলোচনা করেন। ইসলামের দাওয়াতি মিশন পরিচালনা করেন। ফিলিস্তিনে আগত বিদেশি নারীদের তিনি কুরআন শেখানোর কাজেও সময় ব্যয় করেন।

সত্যিই…
মারিয়া কিলারা মাহমুদের ইসলাম গ্রহণ অন্যদের চেয়ে ভিন্ন ও অনন্য। কেননা তার মা চাইতেন তিনি ক্যাথলিক চার্চের সেবিকা হন। আর সে পথে তিনি এগিয়েছেনও বহুদূর। সেখান থেকে বাবার ঐকান্তি ইচ্ছায় ও আল্লাহর রহমতে তিনে হও ওঠলেন ইসলামের একজন সেবিকা।

যিনি মনে প্রাণে খ্রিস্টান মিশনারির দীক্ষা গ্রহণ করার পরও পেয়েছেন সত্যের সন্ধান। নিরলস কুরআনের খেদমত করে চেলেছেন। খ্রিস্টান চার্চের সেবিকা হওয়ার পথ থেকে তিনি ফিরে এসেছেন ইসলামের আলোর পথে।

নিজে ইসলাম গ্রহণ করেছেন আবার অন্যদের মাঝেও বিলিয়ে যাচ্ছেন ইসলামের সুমহান আলো। আল্লাহ যাকে সঠিক পথের সন্ধান দেন, তার জন্য এরচেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কি হতে পারে…

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।