ত্যাগ ও খুশির কোরবানির ঈদ
ত্যাগ ও খুশির ঈদুল আজহা আজ। এই ঈদের আনন্দ সবার ঘরে ঘরে। ধনী-গরিব, উচু-নিচু সবাই আজ এক কাতারে। কি আনন্দ! ইসলামের সুশোভিত সুন্দর শুধু মুসলমানকেই আকৃষ্ট করেনি। বরং সমগ্র বিশ্ব মানবতাকে করেছে অলংকৃত। এ সবই প্রভুর একান্ত রহমত স্বরূপ বান্দার জন্য এক বিশেষ নিয়ামত। এ ঈদ শুধু আনন্দের ঈদ নয়। এ ঈদ উপলব্ধির ঈদ, এ ঈদ ত্যাগ ও উৎসর্গের ঈদ। তাইতো এ ঈদকে বলা হয় কোরবানির ঈদ।
কোরবানির ফজিলত ও তাৎপর্য জাগো নিউজে সংক্ষেপে তুলা ধরা হলো-
কোরবানি শব্দের আভিধানিক অর্থ উৎসর্গ করা, রক্ত প্রবাহিত করা, যবেহ করা, আত্মত্যাগ, অপরের জন্য ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করা।
ইসলামের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালাকে নিজের জীবন ও ধন-সম্পদের প্রকৃত মালিক স্বীকার করে সেই মহান মালিকের ইচ্ছানুযায়ী তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এগুলোকে তাঁরই পথে ত্যাগ করার নিদর্শন স্বরূপ নির্দিষ্ট পন্থায়, নির্দিষ্ট দিনে পশু যবেহ করার নামই হচ্ছে কোরবানি।
সামর্থবান মুসলমানদের জন্য এ কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানি হচ্ছে মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দায়েমি আমল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাদানি জীবনের প্রত্যেক বছরই কোরবানি করেছেন। পাশাপাশি সাহাবাদেরকেও কোরবানির নির্দেশ দিয়েছেন।
কোরবানির ফজিলত ও মর্যাদা
কোরবানির মর্যাদা অনেক। হজরত জায়িদ ইবনে আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا هذِهِ الْاَ ضَاحِىْ؟ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ الـسَّلاَمُ- قَالُوْا فَمَا لَنَـا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ- قَالُوْا فَالصُّوْفُ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِّنَ الصُّوْفِ حَسَنَةٌ - অর্থাৎ ‘রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! এই কোরবানিটা কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেন, এটা তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত বা আদর্শ। অতঃপর তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, এতে আমাদের জন্য কি ফায়দা বা, ছাওয়াব রয়েছে হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। সাহাবীগণ আবার জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়া, দুম্বার পশমের ব্যপারে কি কথা? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে ও একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন : اَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلعم بِالْمَدِيْنَةِ عَشْرَ سِنِيْنَ يُضَحِّىْ - অর্থাৎ ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় দশ বৎসর জীবন যাপন করেছেন সেখানে প্রত্যেক বৎসরই তিনি কোরবানি করেছেন।’ (তিরজিমি) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো এরশাদ করেন, مَنْ كَانَ لَه سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرُبَنَّ مُصَلَّانَا - অর্থাৎ “যে ব্যক্তি কোরবানি করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে কাছে ও না আসে।’ (ইবনে মাজাহ)
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- مَا عَمِلَ ابْنُ ادَمَ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ اَحَبَّ اِلَى اللهِ مِنْ اِهْراقِ الدَّمِ وَاِنَّه لَيَأْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُوْنِهاَ وَاَشْعَارِهَا وَاَظْلاَ فِهَا- وَاِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِـمَكَانٍ قَبْلَ اَنْ يَّقَعَ فِى الْاَرْضِ- فَطِيْبُوْابِهَا نَفْسَهاَ - অর্থাৎ ‘মানুষের আমল সমূহ হতে কোনো আমলেই আল্লাহর নিকট কোরবানির দিন কোরবানি হতে অধিক পছন্দনীয় নয়, অবশ্যই কিয়ামতের দিন কোরবানির জানোয়ার শিং, লোম ও খুর নিয়ে উপস্থিত হবে। যে কোরবানি শুধু আল্লাহর জন্য করা হয়, নিশ্চয়ই সেই কোরবানির রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে উহা কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা ভক্তি ও আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে কোরবানি কর।’ (তিরমিজি)
পরিশেষে...
আল্লাহ তাআলা প্রক্যেক বনি আদমকে কোরবানির ফজিলত, বরকত, মর্যাদা লাভের তাওফিক দান করুন। আত্ম-ত্যাগ তথা কোরবানির শিক্ষা আমলি জিন্দেগিতে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/একে