ইরিনা হানদোনো যে কারণে ইসলাম গ্রহণ করেছেন

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৬ এএম, ৩১ আগস্ট ২০১৯

ইরিনা হানদোনো। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার এক সম্পদশালী ধার্মিক খ্রিষ্টান পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ১৯৮৩ সালে পবিত্র ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তারপর নিজেকে ধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেছেন। নওমুসলিমদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ইরিনা সেন্টার’ নামে একটি স্কুল।

মুসলিম হওয়ার আগে মুসলমানদের সম্পর্কে তার ও খ্রিষ্টানরদের ধারণা ছিল অনেকটা এ রকম- ‘খ্রিষ্টানরা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। তারা ধনী, শিক্ষিত। সুন্দর সুন্দর পোশাক ও জুতা পরে তারা। আর মুসলিমরা গরিব, অশিক্ষিত এবং তাদের ইবাদতের স্থান মসজিদের সামনে থেকে তাদের কম দাবি জুতাও চুরি হয়ে যায়।’

স্রষ্টার জন্য জীবন উৎসর্গ করার প্রবল ইচ্ছার কারণে ছোটবেলা থেকেই ইরিনা হানদোনো ধর্মীয় আবহে নিজেকে তৈরির আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতো। কিন্তু পরিবারের ৫ সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে হওয়ায় প্রথম দিকে তার এ আকাঙ্ক্ষা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

পরবর্তীতে কিশোর বয়সে স্থানীয় গির্জার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেয়া শুরু করে ইরিনা হানদোনো। প্রবল ইচ্ছার কারণে পরিবার থেকে নান হওয়ার সম্মতি মেলে তার। তাই ধর্মীয় কাজে অংশগ্রহণ ও দীক্ষা নিতে প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগদান করতে কোনো অসুবিধা হয়নি ইরিনার।

গির্জার বাইরে ধর্ম-দর্শন বুঝার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেন তিনি। সে সময়ই প্রথম ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারে ইরিনা। এটিই ছিল বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার দেশে জন্ম নেয়ার ইরিনার ইসলাম সম্পর্কে প্রথম জ্ঞানার্জন।

গির্জার সেই প্রশিক্ষণে ইসলাম সম্পর্কে কিছু কুসংস্কারের চর্চা দেখানো হয়। যা খ্রিষ্টান সমাজেও আগে এগুলো দেখা যেত। সে সময় ২০ বছর বয়সী ইরিনা অন্তরে স্থান দেয়নি। সেখানে মুসলিমদের দরিদ্র, অশিক্ষিত ও অসভ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

সত্যের সন্ধানে ইরিনা
ইসলাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভে ইরিনা শিক্ষকের কাছে অনুমতি চায়। তার ইচ্ছে ছিল ইসলাম সম্পর্কে ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে বের করা। সে আলোক ইসলামের বিরোধিতা করার রসদ খুঁজতে কুরআন অধ্যয়ন শুরু করে ইরিনা।

কুরআনুল কারিম ডান দিক থেকে পড়া শুরু করতে হয় তখনো জানতো ইরিনা হানদোনো। তাইতো সে বাম দিক থেকে পড়তে শুরু করে। শুরুতেই তার চোখে পড়ে কুরআনুল কারিমের অন্যতম প্রসিদ্ধ সুরা। আর তাহলো সুরা ইখলাস। তাতে তিনি পড়েন-
‘বলুন! তিনি আল্লাহ! তিনি এক। তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। কেউ তার সমকক্ষ নয়।’ (সুরা ইখলাস)

ইসলামের বিরোধিতার বিপরীতে ইরিনা এ সুরাতেই মুগ্ধ হয়ে যায়। তার অন্তরে এ কথারই সাক্ষ্য দেয় যে, ‘আল্লাহ এক। স্রষ্টার কোনো সন্তান নেই। আর তিনি কারো সৃষ্টি নন। আর কোনো কিছুই তার সমকক্ষ নয়।’

ধর্মযাজকের সঙ্গে ইরিনার আলোচনা
অতঃপর ইরিনা একজন ধর্ম যাজকের কাছে স্রষ্টায় বিশ্বাসের মূলকথা কী? তা জানতে চাইলাম। তার কাছে আরও জানতে চাইলাম। একই সঙ্গে একজন স্রষ্টা কীভাবে একজন ও তিনজন হয়?

ধর্মযাজক বললেন, ‘মূলতঃ স্রষ্টা একজনই। তবে তার ৩টি স্বত্তায় তার প্রকাশ রয়েছে। আর তাহলো স্রষ্টা যিনি পিতা, স্রষ্টা যিনি পুত্র, স্রষ্টা যিনি পবিত্র আত্মা। এটিই ত্রিত্ববাদ।

ধর্মযাজকের এ ব্যাখ্যা মেনে নিয়ে রাতে বিছানায় ফিরল ইরিনা। কিন্তু সুরা ইখলাসের বক্তব্যগুলো বারবার মাথায় উঁকি দিতে থাকে। যেখানে তিনি (আল্লাহ) বলেছেন, ‘তিনি এক। তিনি কারো সৃষ্টি নন। কেউ তার সন্তান নয়।’ তবে ত্রিত্ববাদের অস্তিত্ব কোথায়?

ইরিনা হানদোনো পরদিন আবার ধর্মযাজকের কাছে গিয়ে বললেন, ‘ত্রিত্ববাদের ধারণাটি আমার বুঝে আসছে না। এবার ধর্মযাজক তাকে একটি বোর্ডের কাছে নিয়ে গেলেন এবং একিট ত্রিভুজ আঁকলেন। তিনি বললেন, ‘এখানে একটি ত্রিভুজ। আর এটির দিক বা বাহু তিনটি। ত্রিত্ববাদের ধারণাও ঠিক এমন।

ধর্মযাজকের এ কথা শুনে ইরিনা বলে ওঠলেন, ‘তাহলে এটিও সম্ভব যে, আমাদের প্রভুর ৪টি দিক বা বাহু থাকবে।
ধর্মযাজক বলে উঠলেন, তা সম্ভব নয়।
ইরিনা জানতে চাইলেন, ‘সম্ভব নয় কেন?
ইরিনা এভাবে ত্রিত্ববাদ নিয়ে নানা প্রশ্ন করতে থাকলেন। ইরিনার প্রশ্নে ধর্মযাপক অধৈর্য হয়ে উঠলেন। অতঃপর একপর্যায়ে ধর্মযাজক বললেন-
‘ত্রিত্ববাদের এই ধারণা আমি গ্রহণ করেছি। তবে তা আমারও বুঝে আসে না। তুমিও (ইরিনা) এটি মেনে নাও, হজম করো। বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা পাপ।’

ইসলাম গ্রহণে ইরিনার সিদ্ধান্ত
ইরিনা বিষয়টি হজম করতে পারে না। রাতে সে আবারও কুরআন অধ্যয়ন শুরু করে। সুরা ইখলাস আবারও পড়ে সে। মনে হয় যেন তার অন্তরে কিছু প্রবেশ করছে। আর সে বিনা সন্দেহে এ কথা বিশ্বাস করে যে, ‘আল্লাহ এক’। আর এটিই সত্য।

প্রকৃত স্রষ্টার পরিচয় লাভ করার পরও মুসলিম হওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে ৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ইরিনা। তিনি ১৯৮৩ সালে পবিত্র ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করলেন।

ইসলাম গ্রহণের পর জীবনে তিনি বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি পরিবার হারিয়েছেন। সম্পদ হারিয়েছেন। আর তা তিনি সফলভাবে কাটিয়ে উঠেছেন। এ প্রসঙ্গে ইরিনা হানাদোনো বলেছেন-
‘আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করে পরিবার থেকে একা হয়ে যাই। চরম চ্যালেঞ্জের মুখে আল্লাহ আমার সঙ্গে ছিলেন। আমি আল্লাহর আশ্রয়ে ছিলাম। তিনি ছিলেন আমার আশ্রয়। একমাত্র আশ্রয়। আর আমি অমূলক মনগড়া কোনো মতবাদ নিয়ে পড়ে থাকার মতো লোকও ছিলাম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন নওমুসলিম হিসেবে আমি আমার করনীয় সম্পর্কেও ছিলাম সতেচন। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতাম। রমজানে রোজা রাখতাম এবং ফরজ বিধান হিজাব পরতাম। কেননা আমিতো স্রষ্টার জীবন উৎসর্গ করতেই গির্জায় গিয়েছিলাম। আর এখন প্রকৃত স্রষ্টার কাছেই আমার জীবন উৎসর্গিত।

আলহামদুলিল্লাহ! আমার জীবন আল্লাহর জন্য নিবেদিত। আমার জীবন শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।

ইরিনা হানদোনো নিজেকে দ্বীনে দাঈ হিসেবে উৎসর্গ করেছেন। নওমুসলিমদের জন্য স্কুল খুলেছেন। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন। ইরিনার জন্য শুভকামনা...

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।