আশরায়ে জিলহজ’ বছরের শ্রেষ্ঠ দশক
সময়ের মর্যাদা অনেক বিধায় আল্লাহ তাআলা সময়ের কসম খেয়েছেন। সময়ের কোনো অংশকেই তাই অবহেলা করা ঠিক নয়। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর দ্বারাই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি বান্দার ফায়েদার জন্য কিছু সময়কে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। তাই কিছু সময়, এমন রয়েছে, যা অন্য সময়ের চেয়ে অধিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও মহিমাময়। তার মধ্যে ‘আশরায়ে জিলহজ্ব’ অর্থাৎ যিলহজের প্রথম তেরটি দিন এমনি মহিমান্বিত। জাগো তা তুলে ধরা হলো-
যিলহজ মাসের প্রথম দশককে ‘আশরায়ে জিলহজ’ বলে। এই দশ দিন হচ্ছে বছরের সর্বোত্তম দশ দিন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে এই দশকের রজনীগুলোর শপথ করে বলেছেন, ‘ভোর বেলার কসম আর কসম দশ রাত্রির। (সূরা ফজর : আয়াত ১-২)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ অনেক সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ ও মুফাসসিরের মতে এখানে দশ রাত্রি দ্বারা আশরায়ে জিলহজই উদ্দেশ্য। এবং এটিই বিশুদ্ধ মত। (তাফসিরে ইবনে কাছির)
অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতেও পুরো বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘দশক’ হল আশরায়ে জিলহজ। রমজানের শেষ দশকের চেয়েও যার ফজিলত ও গুরুত্ব বেশি। কেননা জিলহজের এই প্রথম দশকে এমন দু’টি ইবাদত রয়েছে যা পুরো বছরের অন্য কোনো সময় আদায় করা সম্ভব নয়। এমনকি রমজানেও নয়। এই দু’টি ইবাদতের জন্য আল্লাহ তাআলা আশরায়ে জিলহজকেই নির্ধারিত করেছেন।
এই দু’টি ইবাদতের একটি হল হজের নিয়্যাতে বাইতুল্লায় গমণ, আর দ্বিতীয়টি আল্লাহর জন্য কুরবানি। কুরবানি যদিও ১১ ও ১২ জিলহজেও দেয়া যায়, কিন্তু বছরের অন্য কোনোদিন এই ওয়াজিব কুরবানি সম্ভব নয়। এই ক্ষেত্রে রমজানের শেষ দশকের চেয়ে আশরায়ে জিলহজের হজ ও কুরবানির রয়েছে বাড়তি ফজিলত।
আবার অনেক ওলামায়ে কেরামের মতে রমজানের শেষ দশকই উত্তম। কারণ তাতে রয়েছে হাজার মাসের চাইতে উত্তম লাইলাতুল কদরের মতো মহিমান্বিত রজনী। ওলামায়ে কেরামের এই দু’টি মতের সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে অনেক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, আশরায়ে জিলহজের দিন ও রমজানের শেষ দশকের রাত্রি উত্তম। এভাবে উভয় দলীলের মাঝে সমন্বয় করা যেতে পারে। (তাফসিরে ইবনে কাছির)
যাই হোক, রমজানের পরে আশরায়ে জিলহজের চেয়ে শ্রেষ্ঠতম কোনো দিন যে নেই, এটা সুস্পষ্টভাবেই বোঝা যায়। হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আশরায়ে জিলহজের দিনের চেয়ে কোনো দিনই আল্লাহর নিকট উত্তম নয়।’ (ইবনে হিব্বান) আর যিলহজ্বের প্রথম দশকের মধ্যে শেষ দু’দিন নবম তারিখ ও দশম তারিখ হল পুরো বছরের সর্বোৎকৃষ্ট দিন। যাকে হাদিসের ভাষায় ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমে নাহর বলা হয়। (মুসনাদে আহমদ)
আশরায়ে জিলহজের আমল
কুরআন-সুন্নাহে আশরায়ে যিলহজ্বের এই আলাদা গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যের দরুণ এ দশটি দিন হল আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ভরপুর মৌসুম। এই দিনগুলোতে করা ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- ‘আশরায়ে জিলহজের নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিন নেই।’ (বুখারি, মুসনাদে আহমদ)
পরিশেষে...
এই দশ দিনের যে কোনো আমল চাই নফল নামাজ-রোজা হোক বা জিকির-তাহাজ্জুদ, তা আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয় ও অতি পছন্দনীয়। তাই যে কোনো নফল ইবাদত যেমন নামাজ-রোজা, জিকির-তাহাজ্জুদ ও দান-খয়রাত ইত্যাদি এই দশ দিনে করা হলে তার ফজিলত ও মর্যাদা বছরের অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা আশারায়ে জিলহজের ইবাদতে মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/আরআইপি