‘যাহবান কারাগারে আটক মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আলেমদের দোষ কী?’

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, ১৩ জুন ২০১৯

জনপ্রিয় ৩ ইসলাম প্রচারক, লেখক ও দাঈ শায়খ সালমান আল-আওদাহ, ড. আওয়াদ আল-কারনি এবং আলী আল-ওমারি। সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে সৌদির যাহবান কারাগারে আটক। পবিত্র রমজানের ঈদের পর তাদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা।

ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ৩ আলেমের একজন সালমান আল-আওদাহ। সম্প্রতি তার ছেলে ড. আব্দুল্লাহ আওদাহ’র একটি দরদমাখা টুইট গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। ‘যাহবান কারাগারে আটক মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সালমান আওদাসহ ৩ আলেমের কী দোষ?’ জানতে চাওয়া হয় সেই টুইটে। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

সালমান আওদার ছেলে ড. আবদুল্লাহ আওদাহ। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক। সম্প্রতি তিনি এক টুইটে উল্লেখ করেন, ‘কুরআন নাজিলের পবিত্র নগরী মক্কায় গত কয়েকদিন আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৮০ জন মুফতি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনটির শিরোনাম ছিল ‘কুরআন-সুন্নাহর আলোক মধ্যপন্থা ও পরিমিতবোধ’।

গত ২৭ মে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীর জাবালে ওমর হিলটন কনভেনশনাল হোটেলে রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর (মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ) ‘কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধ’ শীর্ষক চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বের ১৩৯টি দেশের হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, ইসলামিক স্কলার, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবি।

ড. আব্দুল্লাহ আওদাহ’র দাবি, ঠিক যেখানে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, তার পাশেই যাওবান কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুণছে ‘মধ্যপন্থা ও পরিমিতবোধ’-এর মডেল হিসেবে পরিচিত বিশ্বনন্দিন আলম সালমান আল-আওদাহসহ ৩ আলেম।

‘কুরআনে আলোকে মধ্যপন্থা ও পরিমিতবোধ’ অবলম্বনের এ সম্মেলনে উত্থাপিত অধিকাংশ মূলনীতিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতে উগ্রতা, সহিংসতা, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও মানবাধিকার লংঘনসহ অনেক গর্হিত কাজের নিন্দা জানানো হয়েছে; যা ইসলাম থেকে মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়।

ড. আব্দুল্লাহ আওদাহ তার টুইটে উল্লেখ করেন, ‘সম্মেলনে পেশকরা এ সুন্দর নীতিকথাগুলোর ধরাক-বাহক ৩ আলেম আজ মৃত্যুর অপেক্ষায় যাহবান কারাগারে বন্দি।

‘অন্যের মতকে সহ্য করতে হবে, ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে- এ নীতিকথারও চর্চা হয়েছে এ সম্মেরনে। তাহলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সালমান আল-আওদাহসহ ৩ আলেমের অপরাধ কী? তারাতো মধ্যপন্থা ও পরিমিতবোধ’ থেকে তাদের মতামত তুলে ধরেছিলেন মাত্র।

ড. আব্দুল্লাহ আওদাহ তার টুইটে অনুষ্ঠিত সম্মেলন সম্পর্কে বলেন, এ সব নীতিকথার উপর অনুষ্ঠিত সম্মেলন দেখে কি লজ্জিত না হয়ে পারা যায়? এ সম্মেলনে আগত মেহমানদের কি এখানে পরস্পর বিপরীত কিছু নজরে পড়েনি?

ড. আব্দুল্লাহ আরো বলেন, ‘এই সম্মেলন এবং তাতে আগত মেহমানরা তাদের মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে কেমন আচরণটাই না করলেন; যা আমাকে হতবাক করেছে।

ড. আব্দুল্লাহ আওদাহর প্রশ্ন-
যারা পরমত সহিষ্ণুতা, ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধার কথা আমাদেরকে, বিশ্বকে শোনালেন; তারা কিভাবে সেসব আলেমের কারাভোগ ও মৃত্যুদণ্ডকে মেনে নিলেন? যারা সম্মেলনে উত্থাপিত অধিকাংশ মূলনীতি শুধু মানেনই না বরং যুগের পর যুগ সে মূলনীতিগুলোরই প্রচার ও প্রসারে নিজেদের নিয়োজিত করে রেখেছেন?

আলেমদের সেই গায়রত ও আত্মমর্যাদা কোথায়? যার ফলে তারা শাসকবর্গের স্বার্থের উপর উম্মাহর স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন? আলিমদের সেই প্রজ্ঞাপূর্ণ নসীহত, শাসকবর্গ থেকে দূরে থাকা, তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা, মুসলমানদের দুঃখ দুর্দশায় এগিয়ে আসার সেই গুণ ও বৈশিষ্ট্য কোথায়?

পূর্বসূরী আলেমদের এ সব গুণ ও বৈশিষ্ট্য যদি ধারণ করতে না পারি, তাহলে তো আমরা আলেম নাম ধারণ করার উপযুক্ত নই।

উল্লেখ্য যে, এর আগেও গত ফেব্রুয়ারিতে শায়খ সালমান আল-আওদাহর ছেলে, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. আব্দুল্লাহ আওদাহ তার পিতার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর নিউইয়র্ক টাইমসে 'মৃত্যুদণ্ডের সামনে আমার পিতা; সৌদিতে এটাই ইনসাফ' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন-

সে প্রবন্ধে ড. আব্দুল্লাহ আল-আওদাহ বলেছেন, যে কণ্ঠ ইনসাফের ভিত্তিতে হক ও সত্য কথা বলে সৌদি সরকার সে কণ্ঠকে রুদ্ধ করে দেয়।

ড. আব্দুল্লাহ আওদাহ তার বাবাকে আটক করার অনেকগুলো কারণে মধ্যে অন্যতম কিছু কারণ তুলে ধরেছিলেন। আর তাহলো-
- সরকারপক্ষ যেভাবে রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করে, তিনি (সালমান আল-আওদাহ) সবসময় এর সমালোচনা করতেন এবং জনগণকে সত্যের পক্ষ অবলম্বনে উদ্বুদ্ধ করতেন।

- সৌদি-কাতার সংকটে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ ও সৌদি সরকারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক না থাকাটাই তার মূল অপরাধ।’

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।