সাফা-মারওয়ায় সাঈর বিধান


প্রকাশিত: ১১:১১ এএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম ও মা হাজিরার স্মৃতি বিজড়িত কাজই হচ্ছে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের সাঈ। সাঈ করা হজের ওয়াজিবগুলোর একটি। হজের পরিভাষায় সাঈ হচ্ছে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিশেষ পদ্ধতিতে সাত চক্কর দৌড়ানো। সাঈ’র বিধি-বিধানগুলো জাগো নিউজে তুলে ধরা হলো-

সাঈ’র রুকন
শুধুমাত্র সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাঈ করাই হচ্ছে সাঈ’র রুকন। কোনো ব্যক্তি সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাঈ না করে এদিক ওদিক করে তবে সাঈ সহিহ হবে না।

সাঈ’র জন্য শর্ত
১. সাঈ নিজেকেই  করতে হবে। নিজে নিজে সাঈ করতে অসমর্থ হলে বাহনে করে সাঈ করা যাবে। ওজর বা অজ্ঞান হওয়া ব্যতিত কেউ কারো সাঈ করতে আদায় করতে পারবে না
২. পূর্ণ তাওয়াফ বা তাওয়াফের অধিকাংশ চক্কর সম্পন্ন  করার পরই সাঈ করা। তাওয়াফের ন্যূনতম চার চক্কর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে সাঈ করলে তা সহিহ হবে না।
৩. সাঈর পূর্বেেই হজ ও ওমরার ইহরাম বাধতে হবে।
৪. সাঈ সাফা পাহাড় হতে আরম্ভ করতে হবে। মারওয়া থেকে শুরু করলে প্রথম চক্কর গণ্য হবে না।
৫. সাঈর অধিকাংশ চক্কর পূর্ণ করা। না করলে সাঈ আদায় হবে না।
৬. নির্ধারিত সময়ে সাঈ করা। হজের সাঈ’র জন্য এটি শর্ত।

সাঈ’র ওয়াজিবসমূহ
১. যাবতীয় অপবিত্রতা হতে মুক্ত হয়ে তাওয়াফের পর সাঈ করা।
২. সাঈ সাফা হতে আরম্ভ করা এবং মারওয়াতে শেষ করা।
৩. পায়ে হেটে সাঈ করা। বিনা ওজরে বাহনে চড়ে সাঈ করলে দম বা কুরবানি ওয়াজিব।
৪. সাত চক্কর পূর্ণ করা। ফরজ চার চক্করের পর আরো তিন চক্কর পূর্ণ করা। যদি কেউ তিন চক্কর ছেড়ে দেয় তবে সাঈ হবে কিন্তু প্রতি চক্করের পরিবর্তে পৌনে দুই সের গম বা সমপরিমাণ মূল্য সাদকা করা ওয়াজিব।
৫. ওমরার  সাঈর ক্ষেত্রে ওমরার ইহরাম সাঈ সমাপ্ত করা পর্যন্ত বহাল থাকা।
৬. সাফা এবং মারওয়ার মধ্যবর্তী পূর্ণ দুরুত্ব অতিক্রম করা।

সাঈর সুন্নাতসমূহ
১. হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম করে সাঈ’র উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়া।
২. তাওয়াফের পরপরই সাঈ করা।
৩. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের ওপর আরোহন করা এবং কিবলামুখী হওয়া।
৪. সাঈ’র চক্কর পরপর সমাপন করা।
৫. জানাবাত এবং ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র থাকা।
৬. এমন তাওয়াফের সাঈ করা যা পবিত্রাবস্থায় সম্পন্ন করা হয়েছে এবং কাপড়, শরীর ও তাওয়াফের জায়গাও পবিত্র ছিল এবং ওজু ছিল।
৭. সবুজ বাতি চিহ্নিত স্থানে দ্রুতপায়ে অতিক্রম করা।

সাঈ’তে যা মাকরুহ
১. ক্রয়-বিক্রয় কথা-বার্তা বলার দরুণ একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায় এবং দুআ পাঠ করতে অসুবিধা হয়।
২. বিনা ওজরে সাঈকে তাওয়াফ হতে অথবা কুরবানির দিনসমূহ হতে বিলম্বিত করা।
৩. বিনা সতরে সাঈ করা।
৪. সবুজ বাতি চিহ্নিত স্থানে দ্রুত না চলা।
৫. চক্করসমূহের মধ্যে সময়ের ব্যবধান অনেক হওয়া।
৬. সাফা ও মারওয়া আরোহন না করা।

সাঈ’র মুস্তাহাব
নিয়্যাতের সহিত সাফা ও মারওয়া’র ওপর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা। বিনয় ও নম্রতা সহকারে তিন-তিন বার জিকির ও দোয়া করা। সাঈ চক্করসমূহের মধ্যে বিনা ওজরে বেশি ব্যবধান হয়ে গেলে পুনরায় নতুন করে সাঈ শুরু করা। সাঈ সমাপ্ত করে মসজিদে গিয়ে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা।

সাঈ’র সুন্নাত তরিকা
বাবুস সাফা দিয়ে সাফা পাহাড়ের ওপরে ওঠে ‘আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহি’ বলে  কাবার দিকে তাকিয়ে উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তুলে তিনবার হামদ ও সানা পাঠ করা। তারপর উচ্চস্বরে তাকবির ও তাহলিল (আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু) পাঠ করা। তারপর দুরুদ পাঠ করা। তারপর নিজের প্রয়োজনীয় দোয়া করা।

সবুজ বাতি চিহ্নিত স্থানের দোয়া
সবুজ চিহ্নিত স্থান দ্রুততার সহিত অতিক্রম করা এবং এই দোয়াটি পাড়া।

উচ্চারণ- রাব্বিগফির ওয়ারহাম আনতাল আআ’যযু ওয়াল আকরাম’।

পরিশেষে...
হজ ও ওমরা পালনে প্রত্যেকেরই উচিত উপরোক্ত নিয়মগুলো যথাযথ পালন এবং নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা একান্ত বাঞ্ছণীয়। আল্লাহ তাআলা হজ ও ওমরা পালনকারীদের সুন্দরভাবে সাঈসহ যাবতীয় কাজগুলো যথাযথ আদায় করার  তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। ওমরা ও হজের ধারাবাহিক আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।