ধর্ষণ থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?
বর্তমান সময়ে অসংখ্য নারী শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের ফলে আত্মহত্যার পথ বেচে নিচ্ছে। অনলাইন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা দৈনিক পত্রিকা দেখলেই নারী-পুরুষের আত্মহত্যার খবর অহরহই চোখে পড়ে। ধর্ষণ কিংবা নির্যাতন ঠেকাতে অথবা অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করা কি বৈধ?
আবার ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর কিংবা ধর্ষিতা হওয়ার ভয়ে আগেই নিজেকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া সম্পর্কে ইসলামের দিক-নির্দেশনাই বা কী?
আত্মহত্যা যে কারণেই করা হোক; ইসলাম কোনোভাবেই কোনো আত্মহত্যাকেই সমর্থন করে না। সর্বাবস্থায় আত্মহত্যা করা হারাম বা নিষিদ্ধ।
কোনো নারীকে যদি জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়, তবে ইসলামের পরিভাষায় সে নারী মাজলুম তথা অত্যাচারিত। এ জোরপূর্বক ধর্ষণের ফলে ওই নারীর যেমন কোনো গোনাহ হয় না বরং নির্যাতিত নারীর মর্যাদা আল্লাহর দরবারে অনেকগুণ বেড়ে যায়।
যেখানে জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার নারীর কোনো গোনাহ হয় না এবং নির্যাতিত মজলুম নারীর মর্যাদা আল্লাহ বৃদ্ধি করে দেন এবং তার দোয়া কবুল করে নেন, সেখানে ওই নারীর জন্য আত্মহত্যা কিভাবে বৈধ হতে পারে?
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ঘোষণা করেন-
‘অবশ্য যে ব্যক্তি (নারী কিংবা পুরুষ) নিরুপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানি ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোনো পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭৩)
> আত্মহত্যা কোনো ভাবেই বৈধ নয়। এক ব্যক্তির ব্যাপারে প্রিয়নবি বলেছেন লোকটি জাহান্নামি। অথচ লোকটি ইসলামের জন্য জেহাদ করে এবং আহত হয়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, এ ব্যক্তি জাহান্নামি অথচ যখন যুদ্ধ শুরু হল, তখন সে লোকটি প্রাণপন যুদ্ধ করল এবং আহত হল।
তখন বলা হল, হে আল্লাহর রাসুল! যে লোকটিকে আপনি জাহান্নামি বলেছিলেন, সে আজ প্রাণপন যুদ্ধ করেছে এবং মারা গেছে। প্রিয়নবি বললেন, ‘সে জাহান্নামে গেছে। রারি (হজরত আবু হুরায়রা) বলেন, এ কথার ওপর কারো কারো অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি হয় এবং তাঁরা এ সম্পর্কিত কথাবার্তায় রত ছিলেন। তখন খবর এল যে, লোকটি মরেনি বরং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে।
যখন রাত হল, সে আঘাতের কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে না পেরে আত্মহত্যা করে। প্রিয়নবির কাছে (আত্মহত্যার) সংবাদ পৌঁছানো হলে তিনি বলে ওঠলেন, আল্লাহু আকবার! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অবশ্যই আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল।
তারপর প্রিয়নবি হজরত বেলালকে নির্দেশ দিলে তিনি মানুষদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিলেন যে, মুসলিম ব্যতিত কোনো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর আল্লাহ এই দ্বীনকে (ইসলামকে) মন্দ লোক দ্বারা সাহায্য করেন।’ (বুখারি)
> আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিদের ব্যাপারে হাদিসে পাকে প্রিয়নবি ঘোষণা করেন। যারা যে অবস্থায় আত্মহত্যা করবে তারা বিচার ফয়সালার পর চিরদিন সে একই শাস্তি ভোগ করতে থাকবে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে।
(আবার) যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে।
যে ব্যক্তি লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের মধ্যে সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল (দীর্ঘদিন) সে তার দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।’ (বুখারি, নাসাঈ)
সুতরাং কুরআন এবং হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, আত্মহত্যাকারী নির্যাতনের কারণে হোক, ধর্ষণের ভয়ে হোক কিংবা ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর হোক অথবা অপমান সইতে না পেরে হোক, যেভাবেই আত্মহত্যা করুক না কেন; কোনোভাবেই তা বৈধ নয়।
যদি কোনো নারী তার ধারণা অনুযায়ী জোরপূর্বক ধর্ষণ হওয়াকে গোনাহ মনে করে; যদিও নিরুপায় হওয়ার কারণে জোরপূর্বক ধর্ষণ হওয়া গোনাহ নয়। সে ক্ষেত্রে এ জোরপূর্বক ধর্ষণকে গোনাহ মনে করে তা থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার মতো আরেকটি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধে নিজেকে জড়িয়ে নেয়া কোনো ভাবেই কাম্য নয়। এ পরিস্থিতিতেও আত্মহত্যা করা নাজায়েজ বা অবৈধ।
তথাপিও আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি শিরকের মতো কোনো গোনাহ না করে তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন। এটা একান্তই মহান আল্লাহর ইচ্ছাধীন। এ কারণেই মুসলিম উম্মাহ মহান আল্লাহর রহমতের মুখাপেক্ষী।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে সব ধরনের অত্যাচার নির্যাতনে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন। ধর্ষণের মতো অপরাধ থেকে নিজেদের হেফাজত করার তাওফিক ও গায়েবি সাহায্য দান করুন। সর্বাবস্থায় ইসলামের বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি