বনি ইসরাইলের ৩ ব্যক্তি যে ইবাদতে মুক্তি পেয়েছিল

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪০ পিএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের ৩ ব্যক্তি ঘুরতে বের হয়ে বিপদে পড়ে যায়। তারা ৩জনই ছিলেন আল্লাহর ইবাদতকারী বান্দা। তারা তাদের আমলের ওসিলায় সে বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করেছিল। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বর্ণনা করেন। সে ঘটনার বর্ণনার হাদিসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

হজরত আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের আগে (বনি ইসরাইলের যুগে) ৩ ব্যক্তি একদিন সফরে বের হলেন। চলতে চলতে রাত এসে গেল। সুতরাং তারা রাত যাপনর জন্য পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। (গুহায় প্রবেশের) কিছুক্ষণ পর একটা বড় পাথর ওপর থেকে গড়িয়ে এসে গুহার বন্ধ করে দিল।

এ অবস্থায় (গুহায় আবদ্ধ) ব্যক্তিরা বলল, এ বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে নেক আমলসমূহের ওসিলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। সুতরাং তারা তাদের নেক আমলের ওসিলায় দোয়া করতে লাগলেন। (তাদের নেক আমলের ধরন ও বিপদ থেকে উদ্ধারের কার্যকরী ইবাদতের ফলাফল হলো)

> তাদের মধ্যে একজন বলল
‘হে আল্লাহ! তুমি জান যে, আমার বাবা ও মা অত্যন্ত বৃদ্ধ ছিল এবং আমি সন্ধ্যা বেলায় সবার আগে তাদেরকে দুধ পান করাতাম। তাদের পান করানোর আগে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও কৃতদাস-দাসীদের কাউকে পান করাতাম না।

একদিন আমি গাছের খোঁজে দূরে চলে গেলাম এবং বাড়ী ফিরে দেখতে পেলাম যে পিতা-মাতা ঘুমিয়ে গেছে। আমি সন্ধ্যার দুধ দোহন করে তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম যে, তারা ঘুমিয়ে আছে।

আমি তাদেরকে (ঘুম থেকে) জাগানো পছন্দ করলাম না এবং এও পছন্দ করলাম না যে, তাদের আগে সন্তান-সন্ততি এবং দাস-দাসীদের দুধ পান করাই।

তাই আমি দুধের বাটি নিয়ে তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষায় তাদের শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অথচ শিশুরা ক্ষুধার তাড়নায় আমার পায়ের কাছে চেঁচামেচি করছিল। এভাবেই ফজরের সময় হয়ে গেল এবং তারা (ঘুম থেকে) জেগে উঠল। অতঃপর তারা রাতের দুধ পান করল।

হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য করে থাকি, তাহলে আমাদেরকে গুহার আটক অবস্থা থেকে উদ্ধার কর।’ আর এ দোয়ার ফলে পাথর একটু সরে গেল। কিন্তু তাতে বের হওয়া সম্ভব ছিল না।

আরও পড়ুন > দ্বীনের ওপর একনিষ্ঠ থাকতে যে দোয়া পড়তেন বিশ্বনবি

> দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল
‘হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। সে আমার কাছে সবার চেয়ে প্রিয়তমা ছিল। (অন্য বর্ণনায় এসেছে) আমি তাকে এত বেশি ভালবাসতাম, পুরুষরা সাধারণত নারীদেরকে যত বেশি ভালবাসতে পারে।

একবার আমি তার সঙ্গে যৌন মিলন করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু সে অস্বীকার করল।

পরিশেষে এক সময় সে এক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে আমার কাছে আসে। আমি তাকে এ শর্তে ১২০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিলাম যে, সে যেন আমার সঙ্গে যৌন-মিলন করে। সুতরাং সে (অভাবের তাড়নায়) তাতে রাজী হয়ে গেল।

অতঃপর যখন আমি তাকে আয়ত্তে পেলাম। (অন্য বর্ণনায় এসেছে) যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম, তখন সে (নারী) বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং অবৈধভাবে (বিনা বিবাহে) আমার পবিত্রতা নষ্ট করো না।

সুতরাং আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম; যদিও সে আমার একান্ত প্রিয়তমা ছিল এবং যে স্বর্ণমুদ্রা আমি তাকে দিয়েছিলাম তার দাবিও পরিত্যাগ করেছিলাম।

হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের উপর পতিত মুসীবতকে দূর করে দাও। এ দোয়ার ফলেও পাথর আরো কিছুটা সরে গেল। কিন্তু তাতেও বের হওয়া সম্ভব ছিল না।

> তৃতীয় ব্যক্তি বলল
‘হে আল্লাহ! আমি কিছু লোককে মজুর রেখেছিলাম। (কাজ সুসম্পন্ন হলে) আমি তাদের সবাইকে মজুরি দিলেও এক ব্যক্তি মজুরি না নিয়েই চলে গেল।

আমি ওই ব্যক্তির মজুরির টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলাম। (এক সময় ওই ব্যবসায়) প্রচুর অর্থ জমে গেল। কিছুকাল পর সে (ওই ব্যক্তি) এসে বলল- ‘হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার মজুরি পরিশোধ কর।’

আমি বললাম, ‘এসব উঁট, গাভি, ছাগল এবং গোলাম (বাঁদি) যা তুমি দেখছ তা সবই তোমার মজুরির ফল।’ সে (মজুর ব্যক্তি) বলল- ‘হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সঙ্গে উপহাস করবে না।’ আমি বললাম- ‘আমি তোমার সঙ্গে উপহাস করিনি (সত্য তাই বলছি)।

সুতরাং আমার কথা শুনে সে তার সব মাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই ছেড়ে গেল না।

হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে যে বিপদে আমরা পড়েছি তা তুমি দূর করে দাও।’ ফলে পাথরটি সম্পূর্ণ সরে গেল এবং সবাই গুহা থেকে বের হয়ে গেল।’ (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)

হাদিসের শিক্ষা হলো-
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশে যে ইবাদতই করা হোক না কেন, তাতে পরিপূর্ণ ইখলাস একান্ত আবশ্যক। একনিষ্ঠতার সঙ্গে ইবাদত না করলে তাতে পরিপূর্ণ সফলতা সম্ভব নয়।

বনি ইসরাইলের এ ৩ ব্যক্তির প্রতিটি কাজই ছিল আন্তরিক একনিষ্ঠতা। একনিষ্ঠ ইবাদতের ওসিলায় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিপদ থেকে মুক্ত করেছিলেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে একনিষ্ঠতার সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সফলতা দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।