হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু : মিনার পথে হাজিরা

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০২ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০১৮

আজ ৭ জিলহজ। পবিত্র হজ পালনের প্রস্তুতি গ্রহণও আজ থেকে শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমান পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থান করছে। সন্ধ্যায় ইহরাম বেঁধে লাব্বাইক ধ্বনিতে পথ-ঘাট মুখরিত করে দলে দলে রওয়ানো মিনার দিকে।

হজের করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কাবা শরিফে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করা হবে আজ। এ খুতবায় হজের করণীয় যাবতীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হবে। অতঃপর সন্ধ্যায় মক্কায় অবস্থানকারীরা হোটেল রুম কিংবা মসজিদে হারাম থেকে ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে।

যারা মক্কা ব্যতিত মদিনা কিংবা অন্যান্য স্থান থেকে মিনার উদ্দেশ্যে আসবে, তারা তাদের মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধবে। সবার গন্তব্য ঐতিহাসিক মিনা প্রান্তর।

কেননা আজ সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল জোহরের আগেই সব হাজিকে পৌঁছতে হবে কুরবানির স্মৃতিবিজড়িত শহর মিনায়। আবার আগামী ১২ কিংবা ১৩ জিলহজ এ মিনা থেকেই হজের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।

পবিত্র নগরী মক্কা থেকে তাবুর শহর মিনার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। হজ পালনকারীদের অনেকেই এ পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করবে। ২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মিনা প্রান্তরে ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত অবস্থান করা সুন্নাত। সেখানে তারা এ সময়ে মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন।

হজ পালনকারীদের অবস্থানের জন্য ইতোমধ্যে লক্ষাধিক তাবু স্থাপন করা হয়েছে। হজের কাজ সম্পাদনে ধর্মপ্রাণ মুসলমান নারী-পুরুষ ৬ দিন ৬ রাতের মধ্যে ৫ দিন ৫ রাতই অবস্থান করতে হবে মিনার এ তাবুগুলোতে।

ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের অংশ হিসেবে মিনায় অবস্থান করতে হয়। হজপালনকারীদের জন্য মিনায় স্থাপিত প্রায় লক্ষাধিক অস্থায়ী তাঁবুতে তারা অবস্থান করবে। এসব তাঁবুতে অবস্থান করেই তারা হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। প্রত্যেক তাঁবুর আলাদা আলাদা নম্বর দেয়া রয়েছে।

হজপালনকারীদের জন্য তাদের নিজ নিজ তাবুর নম্বর মনে রাখা জরুরি। কারণ লক্ষাধিক তাবুর মধ্যে এ নম্বর দেখেই নিজ নিজ তাবু চিহ্নিত করতে হবে।

৯ জিলহজ ফজরের নামাজের পর মিনা থেকেই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা জাবালে রহমতের পাদদেশ ও মসজিদে নামিরা সংলগ্ন ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হবে মুসলিম উম্মাহ। দিনব্যাপী তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া ও মাগফেরাত কামনায় কান্নায় মুখরিত করে তুলে আরাফাত নগরী।

মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও শান্তির লক্ষ্যে সেখানে বাদ জোহর ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করা হবে। হজে অংশগ্রহণকারী মুসলিম উম্মাহ সে খুতবা শুনবে। একসঙ্গে দোয়া ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবে তারা। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবে মুসলিম উম্মাহ।

৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান শেষে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে হজপালনকারীরা। সেখানে গিয়ে এক সঙ্গে মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করবে তারা।

৯ জিলহজ দিবাগত রাতে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করা সুন্নাত। আর ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর সূর্য ওঠার আগে সামান্য সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব।

১০ জিলহজ সূর্য ওঠার আগেই মিনার উদ্দেশ্যে মুজদালিফা ত্যাগ করতে হবে। মিনায় গিয়ে দুপুরের আগেই জামরাতে আকাবায় অর্থাৎ বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষে করতে হবে।

১০ জিলহজ কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানি আদায় করতে হবে। কুরবানি যদি ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করতে হয় তবে কুরবানির সময় জেনে নেয়া। কেননা কুরবানির পরের কাজই হলো মাথা মুণ্ডন বা ন্যাড়া করা। তাই কুরবানির সঠিক সময় জেনে নিয়েই মাথা ন্যাড়া করতে হবে।

সাবধানতা অবলম্বন : ১০ জিলহজ কংকর নিক্ষেপ, কুরবানি ও মাথা ন্যাড়া করা- এ ৩টি কাজে ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও ওয়াজিব। তবে ইফরাদ হজ পালনকারীদের জন্য কুরবানি করতে হবে না। তারা কংকর নিক্ষেপের পরপরই মাথা ন্যাড়া করে নেবে।

১০ জিলহজ মাথা ন্যাড়া করার মাধ্যমে ইহরাম থেকে হালাল হবে হজ পালনকারীরা। তারা স্ত্রীসহবাস ব্যতিত বাকি সব কাজ করতে পারবে।

অতঃপর ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করতে হবে। তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করে পুনরায় মিনায় অবস্থান করতে হবে।

১১ জিলহজ সৌদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।

১২ জিলহজ ও সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ত্যাগ করতে হবে।

যদি কেউ ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারে তবে তাকে ১৩ তারিখও মিনায় অবস্থান করতে হবে। আর ১৩ তারিখও ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে ৭টি করে ২১টি কংকর নিক্ষেপ করতে হবে।

মিনার জামরাতগুলোতে বাংলায় কংকর নিক্ষেপের দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয় তা মনোযোগ সহকারে শুনে কংকর নিক্ষেপ করা সহজ। নারী ও দুর্বল হজ পালনকারীদের জন্য রাতে কংকর নিক্ষেপ করা নিরাপদ।

অতঃপর ১৩ জিলহজের পর বিদায়ী তাওয়াফের মাধ্যমে নিজ নিজ গন্তব্যে (দেশে) ফিরবে হজ পালনকারীরা। ১৩ জিলহজের পর যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

মনে রাখতে হবে : মক্কা থেকে দেশে ফিরতে দেরী হলে দেশে ফেরার আগে অবশ্যই বিদায়ের নিয়তে পুনরায় তাওয়াফ করতে হবে। আর এভাবেই শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

পবিত্র হজকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সৌদি হজ কর্তৃকপক্ষ নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি অতিরিক্ত লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে। পাশাপাশি রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, জরুরি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।

আল্লাহ তাআলা হজ পালনকারীদের সুষ্ঠু নিরাপদ হজ পালনের তাওফিক দান করুন। সবাইকে হজে মাবরুর দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।