মাকামে ইবরাহিমে কেন নামাজ পড়বেন?

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫১ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৮

পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণের অনন্য এক নির্দশন ‘মাকামে ইবরাহিম’। হজের রোকনগুলো পালনের ব্যস্ততায় দোয়া কবুলের স্থান মাকামে ইবরাহিমকে যেন ভুলে না যাই।

মাকামে ইবরাহিমে অবস্থিত হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পায়ের চিহ্ন সম্বলিত এ পাথর হলো সেই পাথর যা কাবা ঘর নির্মাণের সময় হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের জন্য লিফটের দায়িত্ব পালন করেছিল।

পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণকরার সময় পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের নির্মাণ কাজের প্রয়োজনে পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম এ পাথরটি নির্বাচন করেছিলেন। মাকামে ইবরাহিম সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-

- হজরত আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- ‘নিশ্চয়ই হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিম বেহেশতের দুটি ইয়াকুত পাথর। আল্লাহ এই দুটি পাথরে নূর মিশিয়ে দিয়েছেন। এগুলোর আলোতে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত ভূখণ্ড আলোকোজ্জ্বল হয়ে যেত।’ (তিরমিজি)

- অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম মাকামে ইবরাহিমকে (পাথর) নিয়ে এসে হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালামের পায়ের নিচে রেখে দেন।

কাবা চত্ত্বরে মাকামে ইবরাহিম স্থাপন

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কাল থেকে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর খিলাফাতের সময় পর্যন্ত এ পাথর বাইতুল্লাহর সঙ্গে মিলিত ছিল।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর খিলাফাতের সময়কালে বন্যার স্রোতে এ পাথরটি ভেসে যায়। পরে তিনি তা সংগ্রহ করে বাইতুল্লাহ থেকে একটু দূরে সরিয়ে অন্য পাথর দিয়ে স্থায়ীভাবে পরিবেষ্টিত করে রেখে দেন।

সে সময় থেকে আজও মাকামে ইবরাহিম নামের ঐতিহাসিক পাথরটি কাবা চত্ত্বরে কাঁচ দিয়ে ঘেরাও অবস্থায় হজরত ওমরের স্থাপিত স্থানেই সুরক্ষিত আছে। (বাইহাকি)

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের লিফট

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম কাবা শরিফ নির্মাণ কালে এ পাথরটিই ফিলটের মতো ওপরে নিচে ওঠা-নামা করতো। পবিত্র কাবা শরিফের গাঁথুনি যখন ধীরে ধীরে ওপরের দিকে ওঠছিল তখন ওপরের দিকে গাঁথুনি দিতে তিনি এ পাথরের ওপর ওঠলে সেটি আল্লাহর কুদরতে ওপরে ওঠে যেত।

মাকামে ইবরাহিম আল্লাহর নিদর্শন

মাকামে ইবরাহিম মহান আল্লাহ তাআলার অনন্য নিদর্শন। কাবা শরিফ নির্মাণে এ পাথরটি হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে নিয়ে ঠিক ততটুকু ওপরে ওঠত যখন যতটুকু ওঠার প্রয়োজন হতো। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা পিতা-পুত্রের কাজের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ পাথরটির নিকটে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন। আর এ স্থানে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘এবং (সেই সময় কে স্মরণ কর) যখন কাবাগৃহকে মানবজাতির সম্মিলনক্ষেত্র ও নিরাপত্তাস্থল করেছিলাম। (এবং বলেছিলাম) তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে (ইবরাহিমের দাঁড়ানোর জায়গায়) নামাজের জায়গা হিসেবে গ্রহণ কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৫)

তাইতো হজ ও ওমরা পালনকারীদের ভুলে গেলে চলবে না যে, মাকামে ইবরাহিম আল্লাহ তাআলার ঐতিহাসিক নির্দশন সমূহের অন্যতম একটি। আর তা মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় উপহার এবং অনেক প্রাচীন নির্দশন।

এ জান্নাতি পাথরটিতে হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালামের পায়ের ছাপ/দাগ এখনও বিদ্যমান। হজ ওমরা ও জিয়ারতকারীরা কাবা চত্ত্বরে কাঁচ ঘেরাও মাকামে ইবরাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন এবং তা স্বচক্ষে দেখে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।

শুধু তাই নয়

পিতা-পুত্রের অক্লান্ত পরিশ্রমে যখন কাবা ঘর নির্মাণ শেষ হয়; তখন আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে বিশ্বব্যাপী হজের আহ্বান জানানোর নির্দেশ প্রদান করেন।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এ পাথরের ওপর দাঁড়িয়েই বিশ্ববাসীর প্রতি হজের আহ্বান জানিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে দিনরাত অনবরত ওমরা, হজ ও জিয়ারতে মুসলিম উম্মাহর আগমন ঘটে কাবার প্রাঙ্গণে।

সুতরাং হজ ও ওমরার সব রোকনগুলো যথাযথ আদায়ের পাশাপাশি দোয়া কবুলের স্থান মাকামে ইবরাহিমে নামাজ পড়ার সঙ্গে দোয়া করার জরুরি।

হজ ও ওমরা পালনকারীরা তাওয়াফ সম্পন্ন করার পর পরই মাকামে ইবরাহিমের কাছে দাঁড়িয়ে ২ রাকাআতন নামাজ আদায় করে। আল্লাহর নির্দেশে এ স্থানে নামাজ আদায় করেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আল্লাহ তাআলঅ মুসলিম উম্মাহকে বাইতুল্লাহ জিয়ারতের তাওফিক দান করুন। হজ ও ওমরার কাজগুলো যথাযথ পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সব নিদর্শনসমূহ স্বচক্ষে দেখার তাওফিক দান করুন। মাকামে ইবরাহিমে নামাজ পড়ার পাশাপাশি মনের আশা-আকাঙক্ষা পূরণে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।