দ্বীনের ওপর অবিচল থাকার আসমানি পুরস্কার
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহর কাছে (একমাত্র মনোনীত) ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থা। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯) ইসলাম সেই মনোনীত চূড়ান্ত জীবন ব্যবস্থা, যার প্রতি আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন।
যার চূড়ান্ত রূপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে। তাই যারাই ইসলামের প্রতি আগ্রহী হবে তাদেরকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
যারা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামে পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করবে, তাদের জন্য দুনিয়াতেই রয়েছে পুরস্কার। আর পরকালের চূড়ান্ত সফলতাও তাদের জন্য সুনিশ্চিত। যার প্রমাণ রয়েছে সাহাবায়ে কেরামের জীবনে। তেমনই একজন হজরত উম্মে শারিক গাযিয়্যা বিনতে জাবির। তুলে ধরা হলো তার পুরস্কার প্রাপ্তির বর্ণনা-
উম্মে শারিক গায্যিয়ার ইসলাম গ্রহণ ও পুরস্কার লাভ
হজরত উম্মে শারিক গায্যিয়া বিনতে জাবির ইসলাম গ্রহণ করলেন। স্বামীর পরিবারের লোকদের তার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ পেয়ে তাকে কঠোর শাস্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। হজরত উম্মে শারিক গায্যিয়া তার ওপর অর্পিত শাস্তি কথা বর্ণনা করে বলেন-
তারা আমাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে সর্বাধিক নিকৃষ্ট ও কঠোর প্রকৃতির একটি উটের ওপর বসায়। খাদ্য হিসেবে আমাকে দেয়া হয় মধু ও রুটি। আমাকে পানি পান করা থেকে বিরত রাখে। এ অবস্থায় মরুভূমিতে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত আমাদের কাফেলা চলতে থাকে।
সুর্যের তাপ প্রখর হলে তারা (স্বামীর পরিবারের লোকজন) তাঁবু স্থাপন করে। তারা তাঁবুতে বিশ্রাম নিয়ে আমাকে প্রচণ্ড প্রখর রৌদ্রে ফেলে রাখে।
আরও পড়ুন > মানুষ ঈমানদার কিনা বুঝবেন কীভাবে?
প্রখর রোদের প্রচণ্ড তাপে আমার জ্ঞান, শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে যায়। একাধারে ৩দিন পর্যন্ত চলতে থাকে এ নির্যাতন। অতঃপর তারা আমাকে ইসলাম ত্যাগ করার প্রস্তাব পেশ করে বলে, যে বিশ্বাসের ওপর তুমি প্রতিষ্ঠিত তা ত্যাগ করো।
তাদের কথা বার্তার শব্দ ছাড়া আমি কিছুই বুঝতে না পেরে আমি আমার আঙ্গুল আসমানের দিকে তুলে একত্ববাদের ইঙ্গিত ও স্বীকৃতি দিলাম। আল্লাহর শপথ! এ অবস্থাতেই আমি প্রচণ্ড তাপে মরুভূমিতে পড়ে ছিলাম। আমার কষ্ট-ক্লেশ ধৈর্যের চরম সীমায় পৌছে যায়।
আল্লাহর সাহায্য
হঠাৎ আমি আমার বুকে ঠাণ্ডা বালতির শীতলতা অনুভব করলাম। অতঃপর বালতি ধরে তা থেকে একশ্বাস পানি পান করলাম। অতঃপর বালতি আমার কাছ থেকে ওপরে ওঠে গেল। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম, বালতিটি আসমান ও জমিনের ঝুলছে।
বালতিটি দ্বিতীয়বার আমার কাছে নেমে আসে। আমি তা থেকে আবার এক শ্বাস পানি পান করলাম। অতঃপর বালতিটি আমার কাছ থেকে পুনরায় ওপরে ওঠে গেল। আর তা আসমান এবং জমিনের মধ্যে ঝুলছে।
বালতিটি তৃতীয়বার আমার কাছে নেমে আসে। আমি তা থেকে পরিতৃপ্তি সহকারে পানি পান করলাম এবং মাথায়, চেহারায় এবং কাপড়ের ওপর পানি ঢেলে নিলাম।
আমার স্বামীর পরিবারের লোকজন তাঁবু থেকে বের হয়ে এসে, আমার এ দৃশ্য দেখে আমাকে ‘আল্লাহর দুশমন’ সম্বোধনপূর্বক জিজ্ঞাসা করে, হে আল্লাহর দুশমন! এ (পানি) তুমি কোথা থেকে পেলে?
আমি তাদের বললাম, আল্লাহর দুশমন আমি নই; বরং আল্লাহর দুশমন তো তারাই যারা আল্লাহর দ্বীনের বিরোধীতা করে। আর এ পানি কোথা থেকে পেলাম জানতে চাও? এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত রুজি।
তারা আমার কথা শুনে দ্রুত তাদের তাঁবুতে রক্ষিত মশকের কাছে গিয়ে দেখে তা আবদ্ধ অবস্থায় আছে, তা খোলা হয়নি। তাই তারা বলে ওঠল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, যে সত্তা তোমার প্রতিপালক, সে সত্তা আমাদেরও প্রতিপালক। তোমার সাথে আমাদের এ নিষ্ঠুর আচরণ করার পরও যে মহান সত্তা তোমাকে রুজি দান করেছেন, তিনিই হলেন ইসলাম প্রণেতা।
তারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর তারা নিজেদের চাইতে আমাকেই বেশি মর্যাদা দিতো এবং আমার ওপর নাজিল হওয়া আল্লাহর অনুগ্রহকে স্বীকার করতো।
এটা হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত শারিক গায্যিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহার দ্বীন ও ইসলামের ওপর অটল ও অবিচল থাকার মহা পুরস্কার ও অনুগ্রহ।
মুসলিম উম্মাহর উচিত, দ্বীন ও ইসলামের ওপর অটল ও অবিচল থেকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহা অনুগ্রহ লাভ করা। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে চূড়ান্ত সফলতা লাভ করা। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমাকে দ্বীনের ওপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস