ইসলামের দৃষ্টিতে মায়ের দুধ পান কতটা জরুরী


প্রকাশিত: ০৮:৫৮ এএম, ০২ আগস্ট ২০১৫

সাত দিনব্যাপী বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। যা চলবে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত। এবারের শ্লোগান হচ্ছে ‘কাজের মাঝে শিশু করবে মায়ের দুধ পান, সবাই মিলে সব খানে করি সমাধান’। আর ইসলাম মায়ের দুধ পান করাকে বিধানে পরিণত করে দিয়েছেন। কারণ মানুষই হচ্ছে একমাত্র সৃষ্টি যাকে আল্লাহ জন্মগতভাবে খুবই দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টি জগতে সব সৃষ্টিই জন্মের পরপরই নিজের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব কর্ম করতে শিখে। কিন্তু মানব শিশুর পক্ষে তা সম্ভব হয় না। তাই আল্লাহ কুরআনে কারিমে শিশুকে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করানোর নির্দেশ দিয়েছেন। শিশুর জন্য মায়ের দুধ পান ইসলামে আল্লাহর এক অফুরন্ত নিয়ামত। জাগো নিয়েজের পাঠকদের জন্য মায়ের দুধ পানের কিছু কথা তুলে ধরা হলো-

শিশুর জন্য মায়ের দুধ আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত-
শিশুর জন্মগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামে মায়ের দুধ পানে  যথাযথ গুরুত্ব ও কল্যাণকর খাদ্যসমূহ খাওয়ার বিধান দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, `তোমরা তোমাদের সন্তানকে দীর্ঘ দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ পান করাবে।` (সূরা আল-বাক্বারাহ : আয়াত ২৩৩) অন্যত্র আল্লাহ আরও বলেন, `মা তাকে কষ্টের সঙ্গে গর্ভে ধারণ করে এবং দুধ ছাড়াতে লাগে ৩০ মাস।` (সূরা আহকাফ : আয়াত ২৫) এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, মায়ের দুধপান শিশু জন্মগত অধিকারই নয়  বরং তা মহান আল্লাহর নির্দেশ। শিশুর জন্য মায়ের দুধ সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট খাদ্য এবং মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে মায়ের দুধের তুলনাযোগ্য কোনো খাবার পৃথিবীতে নেই।

মায়ের দুধ শিশুখাদ্য হিসেবে  যেমন পুষ্টিকর তেমনি নিরাপদ, বিশুদ্ধ ও সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার। শিশুর দৈহিক-মানসিক অবস্থার সুষ্ঠু ও সুন্দর বিকাশের জন্য যেসব খাদ্য উপাদান প্রয়োজন তার সবই যথাযথ মাত্রায়, সঠিক তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ অবস্থায় মজুদ থাকে মায়ের দুধে। তাই জন্মের পরপরই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে ইসলামের তাগিদ রয়েছে।

মায়ের দুধের খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা
জন্মের পর থেকে শিশুকে নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুরা হয়ে ওঠে সত্যিকারভাবেই বলিষ্ঠ, রোগমুক্ত ও মেধাবী। তাই শিশুদেরকে মাতৃদুগ্ধ পানে মায়েদের সচেতন করে তোলার জন্যই প্রতি বছর আগস্টের প্রথম সপ্তাহব্যাপী মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়। যা শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে প্রত্যেক দুগ্ধদানকারী মাকে যত্নবান ও সচেতন করে তোলে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, `আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভধারণ করে। এরপর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে।` (সূরা লোকমান : আয়াত ১৪)।

মায়ের দুধের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আল্লাহর রহমত যা নবজাতককে সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে ওঠতে সাহায্য করে। মানব শিশুর জন্মের পর শিশুর খাবারের মান কি রকম হবে, কি ধরনের খাবার শিশু হজম করতে পারবে, খাবার মান কতটুকু হলে তা শিশুর জন্য নিরাপদ হবে, এমনকি কতটা মমতায় শিশুকে খাবার খাওয়াতে হবে তা আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল বুঝেন। তাইতো আল্লাহ তাআলা প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশুর খাদ্য ও পানীয়ের চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। যা মায়ের দুধের অমৃত স্বাদের মধ্য দিয়ে শিশুর শিরায় শিরায়, প্রতিটি রক্তবিন্দুতে যা সঞ্চারিত হয়ে যায়। মায়ের দুধই তাকে দেয় পর্যাপ্ত সঞ্জীবনীশক্তি পাশাপাশি বৃদ্ধি করে মানসিক বিকাশ। দিনে দিনে শিশু বড় হতে থাকে।  মায়ের দুধ পানে শিশুদের স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার সুন্দর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এই দুধপানের মাধ্যমেই সন্তানের জন্য মা হয়ে ওঠেন আদর্শ বিদ্যাপীঠ। সন্তান এখান থেকেই পেয়ে যায় তার পরবর্তী জীবনের চলার পথনির্দেশনা।

গর্ভবর্তী ও মাতৃদুগ্ধদানকারী মহিলার বিধান-
ইসলামে গর্ভবর্তী ও মাতৃদুগ্ধদানকারী  মহিলাদের জন্য রমজানের রোজা পালনের বাধ্যবাধকতা শিথিল করে দেয়া হয়েছে।  এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, `আল্লাহ মুসাফিরের ওপর থেকে চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের অর্ধেক রহিত করে দিয়েছেন এবং মুসাফির, স্তন্যদানকারিণী ও গর্ভবতী মহিলা থেকে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করে দিয়েছেন।` (তিরমিজি, নাসাঈ)।

মাতৃদুগ্ধের গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখেই ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে প্রণয়ন করেছেন ফরমান- ইসলামের প্রথম দিকে যেহেতু মায়ের দুধ পানরত শিশুরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আর্থিক অনুদান পেত না, সেহেতু মায়েরা শিশুদের জন্য অনুদান পাওয়ার আশায় তাড়াতাড়ি বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দিত। এ অবস্থা লক্ষ্য করে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু শিশুদের বুকের দুধ দানে মায়েদের উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে জন্মের পর থেকে এ আর্থিক অনুদান চালু করেন। যেহেতু কুরাআন ও হাদিসে নববীর বর্ণনায় মাতৃদুগ্ধ শিশুর জন্মগত অধিকার। সে অধিকার যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয়, এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বাস্তবায়ন করতে হবে কুরআন ও সুন্নাহর আমল। তবেই সমাজে ফিরে আসবে শান্তি। মা-বাবা তথা সমাজ পাবে শান্তির সুফল। কেননা `আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ`। আর পরিবারের অভিভাবকদের দায়িত্ব হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে দুগ্ধদানকারী মায়ের পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করে মায়ের দুধ প্রদানকে সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবহারে সহায়তা করা।

আমাদের সবার উচিত সবাই মিলে সব মাকে তার নিজ নিজ সন্তানকে মায়ের দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন করা। কেননা মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই এবং মায়ের দুধই হচ্ছে নবজাতকের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার। আল্লাহ আমাদের ওপর অর্জিত দায়িত্ব যথাযথ পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।