লাইলাতুল ক্বদর যে কারণে মর্যাদাপূর্ণ
লাইলাতুল ক্বদরের মর্মার্থই হচ্ছে রহমত, বরকত, মাগফিরাত তথা জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাতের ধারা বিরামহীনভাবে রোজা পালনকারীদের জন্য অব্যাহত থাকা। আত্মশুদ্ধির মাসে প্রতিটি কর্মের প্রতিদান দিবেন আল্লাহ নিজ হাতে যদি রোজাদারের রোজা হয় আল্লাহর জন্য। লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা তখনই পূর্ণতা পাবে যখন রোজাদার কুরআনী জীবন-যাপনে মনোনিবেশ করবে। তাই আসুন জেনে নিই কি কারণে মর্যাদাবান হল-লাইলাতুল ক্বদর। বাড়াই আমাদের নেক আমল বৃদ্ধির পন্থা।
১. লাইলাতুল ক্বদর মর্যাদা পূর্ণ হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে আল কুরআনুল কারিম। যা এসেছে আমাদের জীবনের সবচেয়ে প্রিয় রাসূল বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে, বান্দার হেদায়েতের মূলমন্ত্র নিয়ে, যে কিতাবে আঁকড়ে ধরলে গোমরাহ হওয়ার কোনো সুযোগই নাই। যা এ ধরাতে এসেছিল রমজানের শেষ দশকের ২৭ রাত্রিতে।
আল্লাহ বলেন- আমি এ কুরআনকে বরকতময় রজনীতে অবর্তীণ করেছি।’ (সূরা ক্বদর) সেই বরকতময় রাত হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর।
আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘রমজান মাস হচ্ছে সেই মাস যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।’ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। (সূরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৫) এ জন্য কুরআন নাজিলের মাস হিসেবে আল্লাহ লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
যে লোক বাস্তবে আমল বা ইবাদত বন্দেগী করত না, সে যদি আল্লাহর নির্দেশ পালনে ফরজ রোজা রেখে এই রাতকে যথাযথভাবে গ্রহণ করে এবং রাত জাগরণে আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগীতে নিমগ্ন হয় তাহলে সেও সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে যাবে। তাইতো কুরআনের আমলে আল্লাহ লাইলাতুল ক্বদরকে মর্যাদাবান করেছেন। মূলত লাইলাতুল ক্বদর বান্দার জন্য বিশেষ পুরস্কারও বটে।
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহান মর্যাদার অধিকারী করার জন্যই এ রাতকে উপহার স্বরূপ দিয়েছেন। বনি ইসরাঈলের এক আবেদের ইবাদত বন্দেগীর সময়কাল শুনে সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনের আফসোস ও আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে বান্দার জন্য অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ রাত্রিটি দান করেছেন। যে রাত্রির ব্যাপারে আল্লাহ স্বাতন্ত্র সূরা নাযিল করেছেন। যা সূরায়ে ক্বদর।
৩. ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই, তার শপথ যে, প্রত্যেক রমজান মাসেই এই রাতটি আসে। ইহা প্রথম একটি রাত যাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চূড়ান্ত মীমাংসা করা হয়। মহান আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টি কুলের জীবন, মৃত্যু, রিযিক ও কর্মপ্রবাহ সকল বিষয়ে এই রাত্রিতে ফয়সালা করেছেন। বিধায় এ রাতটি মর্যাদাপূর্ণ।
৪. এই রাত্রিটি অতীব উচ্চমান, মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের অধিকারী। তাই একে লাইলাতুল ক্বদর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
৫. লাইলাতুল ক্বদর অর্থে এমন রাত্রি বুঝায়, যাতে জীবনের যাবতীয় বিষয়ের পরিমান নির্ধারণ করা হয় এবং চূড়ান্ত রূপ দান করা হয়। একটি বছরের জন্য আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এই রাত্রে সকল বিধান ও মর্যাদার ফয়সালা করেছেন। অতএব, এই রাত্রির নিজস্ব মাহাত্ম্যের জন্যই এর নামকরণ করা হয়েছে- লাইলাতুল ক্বদর বা মহিমাম্বিত রজনী।
৬. ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কিতাব কুরআনুল কারীম এই রাত্রিতে নাযিল হয়েছে বলেই এর নাম রাখা হয়েছে লাইলাতুল ক্বদর।
৭. আল্লাহপাক স্বীয় মুমীন বান্দাহদের প্রতি রহমত বর্ষণের পরিমাণ এই রাত্রিতে নির্ধারণ করেন বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে লাইলাতুল ক্বদর।
৮. এই রাত্রিতেই মহান রাব্বুল আলামীন পরবর্তী একবছর সময়কালের নিয়ম-নীতি বিধানের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন। যা কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘এই মহান রাত্রিতে প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেওয়া হয়।’ এজন্য এর নাম রাখা হয়েছে লাইলাতুল ক্বদর।
কুরাআন অনুযায়ী আমাদের জীবনকে সাজাতে পারলেই লাইলাতুল ক্বদর বার বার আসবে আমাদের জীবনে। স্বার্থক ও মর্যাদাপূর্ণ হবে আমাদের জীবন। সুন্দর হবে সমাজজীবনের প্রতি কাজ। নাজিল হবে অগণিত রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাত। সুন্দর হবে প্রতিটি মানুষের জীবন। আল্লাহ সবাইকে লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা রক্ষার তওফিক দান করুন। আমীন।
জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।
এমএমএস/এআরএস/এমআরআই