চূড়ান্ত অর্জনের পথে রোজাদার


প্রকাশিত: ০৭:৪৫ এএম, ১০ জুলাই ২০১৫

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে নাজাতের দশক। আজ ২২ রমজান। পূর্বের দুটি দশকের সম্মিলিত সিয়াম-সাধনার ফলাফলে প্রস্তুরি দশকও বলা যেতে পারে। কারণ এই দশকেই রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ইবাদত-বন্দেগি। আল্লাহ প্রেমিকদের শেষ ফল লাভের দশক হিসেবেও এ দশকের কার্যক্রমকে অভিহিত করা যায়। তাই তো মুমিন বান্দার পরিপূর্ণ মুমিন হয়ে ওঠার এটাই সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দশক।

রমজান এলেই আল্লাহর বান্দারা আত্মশোধনে উঠে পড়ে লেগে যায়। কারণ রমজান মাগফিরাত, তাকওয়া ও পরহেজগারকারীর মাস। এ মাস শুধু মানুষকেই শুদ্ধ করে না। মানুষের ধন-সম্পদকেও পবিত্র করে জাকাতের বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে। রমজানে সিয়াম-সাধনায় লিপ্ত হয়ে হৃদয়রে পিপাসা ও ক্ষুধায় পুড়ে পুড়ে পুতপবিত্র হয়। উপলব্দি করে দরিদ্র, ফকির-ভিখারী, অভাবীদের দুঃখ। খবর রাখতে শেখে দরিদ্র প্রতিবেশি। সারা বছরের জন্য হয়ে যায় পূর্ণ দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এই শিক্ষা সারা বছর, এক কথায় দুনিয়ার জীবনে দিয়ে যায় রমজান মাস। রমজানের শিক্ষায় মানুষ হয় পরিপূর্ণ মানুষ। শুধুমাত্র এই শিক্ষার মাধ্যমেই ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখা সম্ভব।

সর্বোপরি এ মাসের মহান শিক্ষা হচ্ছে তাকওয়া বা খোদাভীতি। কোরআনুল কারিমে এ কথাই বলা হয়েছে যে, `তোমাদের উপর রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে; যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো। তাই তো তাকওয়া বা আত্মরক্ষা শব্দটি রমজানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই আরবি তাকওয়া শব্দটি ‘ইত্তেকা’ ধাতু থেকে এসেছে। যার অর্থ বেঁচে থাকা বা আত্মরক্ষা করা। কিন্তু মূল শব্দটির বিগলিতার্থ হলো সকল প্রকার জাগতিক আরাম-আয়েশ ও মানবীয় দুর্বলতা, সকল প্রকারের অনাচার, পাপাচর, অপবিত্রতা, মিথ্যাচারিতা, পরনিন্দা, কপটতা, ব্যভিচার, শটতা, অশ্লীলতা এক কথায় সমস্ত মুনকার কর্মকাণ্ড থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণই হলো ‘তাকওয়া’।

যদি কেউ তাকওয়া অর্জনে সফলকাম হয় তবেই সে পরিপূর্ণরূপে ইসলামে আত্মসমর্পিত হতে পারলো; পরবর্তীতে নিয়মিত শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে সিয়াম, রোজা বা উপবাসের মাধ্যমে পরম আত্মশুদ্ধির ফলাফলই হলো রোজা। তাই রোজার সঙ্গে তাকওয়া ও পরহেজগারকারীর সম্পর্ক মুসলমানের আত্মার সঙ্গে একীভূত।

তাকওয়া’ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াত এসেছে। আল্লাহ বলেন, `যদি তোমরা ধৈর্য ধরো ও সতর্ক হও তাহলে দুষ্টুমি তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তাকওয়ার সঙ্গে রয়েছে আত্মসংযমের সম্পর্ক।

অন্যত্র এসেছে, ‘তোমরা পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করো এবং আত্মসংযমী শ্রেষ্ঠ পাথেয়।’ আরেক জায়গায়র এসেছে- ‘শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমারে প্রকাশ্য শত্রু।’

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সৎকাজ, আত্মসংযম ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন করবে না বলে আল্লাহর কাছে শপথ করো না।’

আল্লাহ আরো বলেন, ‘ভালো এবং মন্দ যে যা উপার্জন করবে সে তার ফল পাবে।’ এ রকম অসংখ্য আয়াত রয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি রোজায় তাকওয়া, পরহেজগারি ও খোদাভীতির প্রশিক্ষণ নেয়; এবং অনুকরণ অনুসরণ করে তবে মানুষ হয়ে যাবে নিষ্পাপ মা`ছুম শিশুর মতোই পুতপবিত্র এবং সুন্দর থেকে আরো সুন্দরতম।

আল্লাহ আমাদের নামাজি, রোজাদার, দ্বীনদার, ফরহেজগার, ঈমানদার হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

জাগো নিউজের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কোরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।