আজানের উপকারিতা ও মুয়াজ্জিনের মর্যাদা
আজান হলো মানুষের দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভে আল্লাহ তাআলার ফরজকৃত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান। নামাজের দিকে আহ্বান করা সবচেয়ে কল্যাণজনক কাজ। এ কাজের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘তার চেয়ে উত্তম কে আছে? যে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে।’
আজানের শাব্দিক অর্থ হলো জানিয়ে দেয়া, আহ্বান করা, নামাজের জন্য আহ্বান করা, জামাআতে নামাজ আদায়ের প্রতি মানুষকে আহ্বানের উচ্চ আওয়াজই হলো আজান।
‘আজান’ শব্দটি কাউকে আহ্বান বা ঘোষণা করা অর্থে ব্যবহৃত হয়। তার প্রমাণ মিলে কুরআনুল কারিমে। আল্লাহ তাআলা তাআলা আহ্বান বুঝাতে কুরআনে আজান শব্দের উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হজের দিন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি এ এক আহ্বান বা ঘোষণা যে, আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদীদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩)
আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি ও হুকুম আহকাম পালনের জন্যই আজান দেয়া হয়। আজান দেয়ার কারণেই মুয়াজ্জিনের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং ইসলামে আজানের উপকারিতা ও মুয়াজ্জিনের মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন নবিগণ প্রথমে বেহেশতে প্রবেশ করবে; অতঃপর প্রবেশ করবে বাইতুল্লাহ শরীফের মুয়াজ্জিনগণ; অতঃপর বাইতুল মুকাদ্দিসের মুয়াজ্জিনগণ; অতঃপর আমার মসজিদের মুয়াজ্জিনগণ; অতঃপর দুনিয়ার মসজিদের মুয়াজ্জিনগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মিশকাত)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সব বস্তু তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে।
ঐ আজানে শুনে যে ব্যক্তি নামাজে যোগ দিবে, সে ২৫ নামাজের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। মুয়াজ্জিনও ঐ মুসল্লীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে এবং তার দুই আজানের মধ্যবর্তী সব ছোট গোনাহ মাফ করা হবে।’ (নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম হলেন দায়িত্বশীল আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ! আপনি ইমামদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন আর মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)
হাদিসে পাকে আরো এসেছে, ‘কেয়ামতের দিনে লোকেরা পিপার্সত হয়ে পড়বে। আর মানুষ যখন পিপাসা-কাতর হয় তখন তার ঘাড় ভাঁজ ও খাটো হয়ে যায়। কিন্তু মুয়াজ্জিনগণ কেয়ামতের দিন পিপাসা-কাতর হবে না; তাই তাদের ঘাড় উর্ধ্বে উন্নত ও দীর্ঘ থাকবে।’
সুতরাং নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আজান দিয়ে নামাজ আদায় করা উচিত। নামাজি একাকি হোক আর অনেক হোক নামাজের জন্য আজান দেয়া উত্তম। উল্লেখিত আয়াত ও হাদিসই এর প্রমাণ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আজান দিয়ে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আর মুয়াজ্জিনদেরকে যথাযথ মর্যাদা ও উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি