সাদাকায়ে জারিয়াহ : যে সাওয়াব চলমান


প্রকাশিত: ০৮:৫১ এএম, ২৬ জুন ২০১৫

কোরআনুল কারিমে আল­াহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘কুল্লু নাফসিন জায়েক্বাতুল মাউত ওয়া ইন্নামা তুয়াফ্ফাওনা উযুরাকুম ইয়াওমাল কিয়ামাতি-----ইল­া মাতাউল গুরুরি’। অর্থাৎ প্রত্যেক জানদার ব্যক্তি মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বিনিময় প্রাপ্ত হবে। একমাত্র সে ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে; আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোকার সামগ্রী। (সুরা আল ইমরান : আয়াত ১৮৫)।

দুনিয়ার এ জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী, যার মূল্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট কিছুই না। যে মানুষ দুনিয়ায় ভালো কাজ করবে, সে আখেরাতে এর উত্তম প্রতিদান পাবে, আর যে মন্দ কাজ করবে সেও আমল অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের আশা এবং হিকমত তথা সাদকায়ে জারিয়ার মতো নেক আমল করে যেতে হবে। যে আমল মৃত্যুর পরেও কিয়ামত পর্যন্ত চলমান থাকবে। ওই আমল দুনিয়ার জীবনে করে থাকলে মৃত্যুর পরেও মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির কবরে তথা আমলনামায় ওই আমলের সাওয়াব যেতে থাকবে। যা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি-

সাদকায়ে জারিয়াহ-
এ ব্যাপারে কোরআনুল কারিমে এসেছে, আমিই অবশ্যই একদিন মৃতদেরকে জীবিত করবো; যা কিছু কাজ তারা করেছে তা সবই আমি লিখে রাখি এবং যা কিছু তারা আগে পাঠিয়েছে এবং যা পিছনে রেখে যায়। আর প্রতিটি বস্তুকেই আমি সুষ্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি। (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ১২)

এ আয়াতের ব্যখ্যায় তিনটি কথা এসেছে যে, মানুষের আমল নামা তিন ধরনের বিষয় সম্বলিত হবে-

১. প্রত্যেক ব্যক্তির ভালো-মন্দ কাজ আল্লাহর দফতরে লিখে নেওয়া হয়;
২. মানুষ দুনিয়ার জীবনে তার চারপাশে ও শরীরের উপর ভালো-মন্দের যে প্রভাব রাখে, তা তার মানসপটে স্মরণ হতে থাকবে এবং তার সব আচরণের ছবি সামনে এসে যাবে;
৩. দুনিয়ার জীবনে নিজের ভবিষ্যত প্রজন্ম, তথা সমাজে যেসব ভালো-মন্দের প্রভাব চালু করে যাবে এবং তা যতক্ষণ পর্যন্ত সচল বা চালু থাকবে, ভালো-মন্দ অনুযায়ী তা হিসাবের খাতায় লিপিবদ্ধ হতে থাকবে।

এ জন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল­াম উম্মতের জন্য সাদকায়ে জারিয়ার উপদেশ দিয়েছেন-
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন, মানুষের মৃত্যুর পর তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমল বন্ধ হয় না-

১. সাদকায়ে জারিয়া;
২. এমন ইলম (জ্ঞান)- যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও
৩. এমন নেককার সন্তান-সন্ততি, যে তার জন্য (মৃতব্যক্তি) দোয়া করে। (মুসলিম)

ইলম বা জ্ঞান : যে ইলম মানুষকে আলোর পথ দেখায়; জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে জান্নাতের পথে চলতে অনুপ্রাণিত করে। এ ইলমের মধ্যে, সহিহ কোরআন শিখানো, হাদিস শিখানো, তাওহিদ আল­াহর একত্ববাদ, পরকালীন জীবনের পথনির্দেশনা, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল­ামের মহান লক্ষ্যের সাক্ষ্য ও বাস্তবায়ন। যা দ্বারা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, ইহকাল (বিশ্ব), পরকালীন জীবনের কল্যাণ লাভ করা যায় এমন ইলমই উদ্দেশ্য। এ ইলমের চর্চা যতদিন চলবে ততদিন মৃত ব্যক্তির কবরে তার সাওয়াব পৌঁছতে থাকবে।

নেক সন্তান : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন, মানুষের ইন্তেকালের পর চারটি আমলের সাওয়াব চালু থাকবে। ১. যে ব্যক্তি ইসলামি রাষ্ট্রে সীমানা পাহারা দেয়; ২. যে সন্তান কোনো ভালো কাজ শুরু করার পর তাকে যারা ওই কাজে অনুসরণ করলে; ৩. যে ব্যক্তি এমন সাদকা করলো, যা চলতে থাকে; ও ৪. এমন সু-সন্তান রেখে যাওয়া- যে সন্তান তার জন্য দোয়া করে। (মুসনাদ আহমাদ)

মসজিদ নির্মাণ : হযরত উসমান রাদিয়াল­াহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল­াহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তা’আলা ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতেও অনুরূপ ঘর নির্মাণ করবেন। (মুসলিম)

বনায়ন : পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় যে ব্যক্তি ফলজ ও বনজ গাছ রোপন করে; সে গাছের ছায়া, অক্সিজেন এবং গাছের ফল দ্বারা মানবকূলসহ পাখ-পাখালি উপকৃত হয়। যতদিন এ ধারা অব্যাহত থাকবে ততদিন এর সাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হতে থাকবে। এ ব্যাপারে হযরত জাবির রাদিয়ল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন, কোনো মুসলিম যদি বৃক্ষরোপণ করে, এবং তার কোনো ফল কোনো ব্যক্তি খায় তবে ওই ফল তার জন্য সাদকা, কোনো ভয়ংকর জন্তু-জানোয়ার খেলেও তা তার জন্য সাদকা, যদি কোনো ব্যক্তি চুরি করেও খায় তা তার জন্য সদকা, কোনো পাখিও খায় তাও তার জন্য সদকা। এমনকি যদি কোনো ব্যক্তি তা কেটে ফেলে তাও তার জন্য সাদকা। (মুসলিম) তাছাড়া গরিব অসহায় মানুষের জন্য যদি আবাসন, খাওয়ার পানি, রাস্তাঘাটের কষ্টকর বস্তু সরিয়ে দেওয়া, ইসলামি সাহিত্য রচনা করে পথহারা মানুষকে দ্বীনের পথে আহ্বান করা, ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া, কোনো জিনিস নষ্টের হাত থেকে রক্ষা করা, ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করে পুনর্বাসন করা ইত্যাদি কল্যাণকর কাজও সাদকায়ে জারিয়া।

সর্বোপরি আমরা পবিত্র রমজান মাসে এ আমলগুলো করে আখিরাতে অফুরন্ত জিন্দেগিকে কল্যাণকর ও শান্তিময় করতে উপরোক্ত আমলগুলো করবো এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল­ামের একটি হাদিসটি উল্লেখের মাধ্যমে আজকের লেখা শেষ করতে চাই; তা হচ্ছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন, মানুষের মৃত্যুর পর কবরে সাতটি আমলের সাওয়াব অবিরাম যেতে থাকে। তাহলো ১. যে (উত্তম) ইলম শিক্ষা দিল; ২. যে পানি প্রবাহিত করলো, ৩. কূপ খনন করলো, ৪. খেজুর বৃক্ষ রোপন করলো (গাছ রোপন);  ৫. মসজিদ (ইবাদতখানা) নির্মাণ করলো; ৬. কোরআনুল কারিম বিতরণ করলো এবং ৭. এমন সু-সন্তান রেখে গেল, যে তার জন্য আল­াহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে উপরোক্ত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

তথ্যসূত্র : কোরআনুল কারিম, তাফসিরে ইবনে কাছির, তাফহিম, সহিহ বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, মুসনাদুল বাজ্জার।

জাগো নিউজের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।