‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলায় যে কল্যাণ অর্জিত হয়
মানুষ যখন কাউকে ভাল, সুন্দর বা তাঁর পছন্দসই কোনো কাজ উপহার দেয় তখন মানুষের পারস্পরিক কল্যাণ কামনায় যে দোয়াটি সবচেয়ে বেশি করা হয় বা ধন্যবাদ জানাতেও যে দোয়া বা বাক্যটি বেশি ব্যবহার করা হয়; তাহলো- ﺟَﺰَﺍﻙَ ﺍﻟﻠّٓﻪُ ﺧَﻴْﺮًﺍ ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বাক্যগুলো দ্বারা দোয়া করতে নসিহত করেছেন। হজরত উসামা বিন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কারো প্রতি কৃতজ্ঞতার আচরণ করা হলে ওই ব্যক্তি কৃতজ্ঞতার আচরণকারীকে যদি ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলে; তবে সে যেন তার যথাযোগ্য প্রশংসা করল।’ (তিরমিজি)
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যখন তার ভাইকে বলে, ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ তবে সে তার ভূয়সী প্রশংসা করল।’
‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ এমন একটি মূল্যবান তাৎপর্যপূর্ণ বাক্য; যার অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর অর্থ রয়েছে। যা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিস থেকে অনুমান করা যায়। তিনি বলেন, তোমাদের কারো যদি জানা থাকত যে, তার অপর ভাইকে ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলার মধ্যে তার জন্য কি রয়েছে! তাহলে তোমরা একে অপরের জন্য তা বেশি বেশি করে বলতে।’
তাই এ ছোট্ট দোয়ার সুন্দর সুন্দর অর্থগুলো আমলের নিয়তে তুলে ধরা হলো-
>> ﺧﻴﺮ ( খাইর) শব্দটি সে সব বিষয়াবলীকে বুঝায়; যা আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক প্রিয়। তাই "খাইর" শব্দের মাধ্যমে পরস্পরের সব সুন্দর বিষয়ের কল্যাণ কামনা করা উচিত।
>> ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ দ্বারা এ কথাও বুঝায় যে, ‘আল্লাহ তাআলা আপনাকে জান্নাত এবং জান্নাতে তাঁর দিদার লাভের সৌভাগ্য দান করুন।
>> ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ দ্বারা আরো বুঝায় যে, ‘আল্লাহ তাআলা আপনাকে কাফিরদের চিরস্থায়ী স্থান জাহান্নাম থেকে হেফাজত করুন।
>> ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’-এর অর্থ হলো- আল্লাহ তাআলা যেন আপনাকে সিরাতে মুস্তাক্বিম তথা সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
>> ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ দ্বারা ‘আল্লাহ তাআলা যেন আপনার ওপর কোনো অভিশপ্ত শয়তানকে চাপিয়ে না দেন’ এ দোয়া করা হয়।
>> ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলার মাধ্যমে এ দোয়া করা যে, ‘আল্লাহ তাআলা যেন আপনার রিজিকের মধ্যে বরকত দান করেন।’
>> ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’-এর আরেকটি অর্থ হলো ‘আল্লাহ তাআলা যেন আপনাকে মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহারকারী হিসেবে কবুল করেন।’
>> ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ এ দোয়া করা হয় যে, ‘আল্লাহ তাআলা যেন আপনাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসারী করেন।’
>> ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ দ্বারা এ কামনাও করা হয় যে, ‘আল্লাহ তাআলা আপনাকে নেক সন্তান দান করুন।’
সতর্কতা
কখনোই শুধুমাত্র ‘জাযাকাল্লাহু’ না বলে পরিপূর্ণ ছোট্ট এ দোয়াটি ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলা উত্তম। কারণ ‘জাযাকাল্লাহু’ দ্বারা প্রতিদান বা কল্যাণ কামণা ভালোও হতে পারে আবার মন্দও হতে পারে। তাই ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলে উল্লেখিত উত্তম কল্যাণ কামনা করা উচিত।
সর্বোপরি ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ এমন একটি বাক্য যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা মানুষকে সব রকম কল্যাণ দান করেন। কেননা খাইর দ্বারা অসংখ্য বা অগণিত কল্যাণকে বুঝানো হয়। যা গণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরস্পরের প্রসংশা ও কৃতজ্ঞতায় ‘জাযাকাল্লাহু খাইরানে’-এর ব্যবহার করে উল্লেখিত নেয়ামতগুলো লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি