নামাজের ‘কাজা’ আদায়ে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘উত্তম আমল কোনটি?’ এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে নামাজ আদায় করাই হলো সর্বোত্তম আমল। তারপরও বিভিন্ন কারণে মানুষের নামাজ ছুটে যায়।
নির্ধারিত ওয়াক্তে ফরজ বা ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে না পারলে, সময় চলে যাওয়ার পর তা পড়াকে ‘কাজা’ আদায় বলা হয়। ফরজ নামাজ ছুটে গেলে তা ‘কাজা’ করা ফরজ আবার ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলেও তা ‘কাজা’ করা ওয়াজিব।
নামাজের কাজা আদায়ের কিছু বিষয়ে লক্ষণীয়
>> কোনো কারণে নফল নামাজ নষ্ট হলে অথবা শুরু করার পর কোনো কারণে যদি ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে তার পরে ‘কাজা’ করাও ওয়াজিব।
>> সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং নফল নামাজের কোনো কাজা নেই। তবে ফজরের নামাজ সুন্নত-ফরজ উভয়টা পড়তে না পারলে সুন্নত-ফরজ এক সঙ্গে কাজা করা উত্তম। দুপুরের চার রাকাআত সুন্নত পড়তে না পারলে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পরও পড়ে নেয়া যায়।
>> জোহরের ফরজ নামাজের পর যে দুই রাকাআত সুন্নাত আছে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পর ৪ রাকাআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদার আগেও পড়া যায় এবং পরেও পড়া যায়। তবে জোহরের ওয়াক্ত চলে গেলে জোহরের আগের এবং পরে ৪ ও ২ রাকাআত সুন্নাতের কাজা ওয়াজিব হবে না।
>> জুমআ’র নামাজের কাজা নেই; যদি কেউ জুমআ’র নামাজ কোনো কারণে আদায় করতে না পারে তবে জুমার নামাজের পরিবর্তে ঐ ওয়াক্তে সম্ভব হলে জোহরের ৪ রাকাআত নামাজ পড়ে নিবে। আর ওয়াক্ত চলে গেলেও ৪ রাকাআত জোহর আদায় করবে।
কাজা নামাজের সময়
পূর্ববর্তী ওয়াক্তের নামাজ ‘কাজা’ আদায়ের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট সময় নেই। নামাজের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর যখনই নামাজের কথা স্মরণ হবে তখনই পড়ে নেয়া উত্তম। যেমন ধরুন- যদি কেউ ঘুমের কারণে ফজরের নামাজ আদায় না করতে পারে; তবে সে ঘুম থেকে যখনই উঠবে, তখনই নামাজ আদায় করবে। তবে নিষিদ্ধ সময়গুলোতে মনে পড়লে অপেক্ষা করতে হবে।
দীর্ঘ দিনের নামাজের কাজা আদায়
কোনো মানুষ যদি দীর্ঘকাল (কয়েক মাস এবং বছর) নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকে। তার উচিত- একটা অনুমান করে নামাজের ‘কাজা’ আদায় শুরু করা।
এ অবস্থায় নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের নিয়ম হবে এ রকম- ওই ব্যক্তি যখন প্রতিদিনের নির্ধারিত ওয়াক্তের নামাজ আদায় করবে; তখন সে ওয়াক্তের সঙ্গে মিল রেখে ধারাবাহিকভাবে ঐ ওয়াক্তের ‘কাজা’ আদায় করে নেয়া। এভাবে ‘কাজা’ আদায়ে ধরাবাহিকতা রক্ষা করা।
অথবা যে ওয়াক্তের ‘কাজা’ পড়তে চাইবে সে ওয়াক্তের নাম নেয়া। যেমন- ‘অমুক ওয়াক্তের সবচেয়ে প্রথম বা শেষ নামাজ পড়ছি। এভাবে নামাজের ‘কাজা’ আদায় করলে তা এক সময় পরিপূর্ণ আদায় হয়ে যাবে।
ভ্রমণের সময়ের কাজা
সফরের সময় যে নামাজ ফউত হবে; ঐ নামাজের ‘কাজা’ আদায় মুসাফির অবস্থায় যেমন হবে; মুকিম স্থায়ী হওয়ার পর সে হুকুমই থাকবে। অর্থাৎ কোনো মানুষ যদি সফরের যথা সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারে। তবে সে সফর এবং মুকিম (বাড়িতে আসার পর) অবস্থায়ও ‘কাজা’ কসর (জোহর, আসর ও ইশার নামাজ ২ রাকাআত) আদায় করবে।
আর সফরে থেকে ফিরে মুকিম সীমানায় আসার পর নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারলে ঐ নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের ক্ষেত্রের পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।
আল্লাহ তা্অলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের ‘কাজা’ আদায়ে এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আইআই