মসজিদে নববির যে সব স্থানে দোয়া কবুল হয়

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৩৮ এএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মদিনা মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে ঝড়তোলা এক নাম। এ নামটি আশেকে রাসুলের হৃদয়ে প্রেম-ভালোবাসার ঝড় তোলে। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আশেকগণ মদিনা জিয়ারাতে জন্য উদগ্রীব থাকেন। থাকেন আত্মহারা পাগল পারা।

এ কারণে মদিনাকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য ইসলামি গাণ ও কবিতা। এমনকি যারা ইসলামের পরিপূর্ণ বিধান মানতে পারে না বা মানে না; তারাও মদিনার নাম শুনলে আবেগ ভালোবাসায় জারি-গাণ তৈরি করতে ভুল করে না।

সবারই চাওয়া থাকে মদিনায় যাওয়া। প্রিয়নবির ভালবাসা পাওয়ার। ন্যূনতম প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারাতের।

মনিদায় মসজিদে নববির অন্তর্গত অনেক অংশ ও স্থাপনা বিভিন্ন কারনে মর্যাদা লাভ করেছে। সে স্থানগুলোতে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন।

তাই হজ ও ওমরা সম্পদনকারী আশেকে রাসুলদের জন্য মসজিদে নববির দোয়া কবুলের ফজিলতপূর্ণ ইবাদাতের স্থানগুলোর পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

রিয়াজুল জান্নাহ
বিশ্বনবির হুজরা মোবারক বা মিম্বারের পাশের জায়গাটি রিয়াজুল জান্নাহ বা বেহেশতের বাগান হিসেবে পরিচিত। এ স্থানে নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। মসজদে নববির কার্পেট লাল রংয়ের হলেও রিয়াজুল জান্নাহ অংশের কার্পেটের রং সাদা।

মসজিদে নববীর ভেতরে কয়েকটি স্তম্ভ রয়েছে, সেগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বা খুঁটি বলা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তৈরি মসজিদে খেজুর গাছের খুঁটিগুলোর স্থলে উসমানী সুলতান আবদুল মাজিদ পাকা স্তম্ভ নির্মাণ করেন। এগুলোর গায়ে মর্মর পাথর বসানো এবং স্বর্ণের কারুকাজ করা । প্রথম কাতারে ৪টি স্তম্ভের লাল পাথরের এবং পার্থক্য করার সুবিধার জন্য সেগুলোর গায়ে নাম লেখা রয়েছে।

উস্তুওয়ানা হান্নানা (সুবাস স্তম্ভ)
মিম্বারে নববির ডান পাশে খেজুরগাছের গুঁড়ির স্থানে নির্মিত স্তম্ভের নাম উস্তুওয়ানা হান্নানা বা সুবাস স্তম্ভ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার স্থানান্তরের সময় এ গুঁড়িটি বিশ্বনবির ভালোবাসায় উঁচু স্বরে কেঁদে উঠেছিল।

উস্তুওয়ানা সারির
এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই’তিকাফ করতেন এবং রাতে আরামের জন্য তাঁর বিছানা এখানে স্থাপন করা হতো। স্তম্ভটি হুজরা শরিফের পশ্চিম পাশে জালি মোবারকের সঙ্গে রয়েছে।

উস্তুওয়ানা উফুদ
বিশ্বনবির সঙ্গে দেখা করার জন্য বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিধিদল আসতেন। আগত প্রতিনিধদল এখানে বসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ইসলাম গ্রহণ করতেন এবং এখানে বসেই কথা বলতেন। এ স্তম্ভটিও জালি মোবারকের সঙ্গে রয়েছে।

উস্তুওয়ানা আয়িশা (আয়িশা স্তম্ভ)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা রয়েছে, লোকজন যদি সেখানে নামাজ পড়ার ফজিলত জানত, তাহলে সেখানে স্থান পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করত।’ স্থানটি চিহ্নিত করার জন্য সাহাবায়ে কিরাম বিশ্বনবির জীবদ্দশায় চেষ্টা করতেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর ভাগ্নে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সে জায়গাটি চিনিয়ে দেন। এটিই সেই স্তম্ভ। এই স্তম্ভটি উস্তুওয়ানা উফুদের পশ্চিম পাশে রওজায়ে জান্নাতের ভেতর।

উস্তুওয়ানা আবু লুবাবা (তওবা স্তম্ভ)
একটি ভুল করার পর হজরত আবু লুবাবা রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজেকে এই স্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এ বাঁধন খুলে না দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এর সঙ্গে বাঁধা থাকব।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে আল্লাহ আদেশ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত খুলব না।’ এভাবে দীর্ঘ ৫০ দিন পর হজরত আবু লুবাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুর তাওবা কবুল হয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে তাঁর বাঁধন খুলে দিলেন। এটি উস্তুওয়ানা উফুদের পশ্চিম পাশে রওজায়ে জান্নাতের ভেতর অবস্থিত।

উস্তুওয়ানা জিবরাইল
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ফেরেশতা হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম যখনই হজরত দাহিয়াতুল কালবি রাদিয়াল্লাহু আনহুর আকৃতি ধারণ করে ওহি নিয়ে আসতেন, তখন অধিকাংশ সময় তাঁকে এখানেই উপবিষ্ট দেখা যেত।

মিহরাবে নববি
যে মিম্বারের ডান পাশে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়াতেন। ভিড় না থাকলে মাকরূহ সময় ব্যতিত কাউকে কষ্ট না দিয়ে এখানে নফল নামাজ আদায় করুন। নিজে নামাজ পড়ার পাশাপাশি অন্যকেও এ স্থানে নামাজ আদায়ের সুযোগ করে দিন।

জান্নাতুল বাকি
‘জান্নাতুল বাকি’নামক গোরস্থানটি মসজিদে নববির পাশেই অবস্থিত। এখানে হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা, হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ অগণিত সাহাবায়ে কিরামকে দাফন করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত এর এক পাশে নতুন নতুন কবর হচ্ছে। এ কবরগুলোকে ‍শুধু এক খণ্ড পাথর দ্বারা চিহ্নিত করে রাখা হয়।

আল্লাহ তাআলা হজ ও ওমরা সম্পাদনকারী ও জিয়ারতকারীদেরকে এ স্থানসমূহে ইবাদাত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে এ সকল স্থান জিয়ারাত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।