কুরবানির সঙ্গে তাকবিরে তাশরিকের সম্পর্ক
কুরবানি হলো আল্লাহ তাআলার জন্য আত্মত্যাগ। আর তাকবিরে তাশরিক হলো মহান আল্লাহ তাআলা শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা।
কুরবানির কার্যক্রম সম্পন্ন এবং তাকবিরে তাশরিক পড়া উভয়টি এক সুতোয় গাঁথা। কারণ তাকবিরে তাশরিকের ইতিহাস কুরবানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
প্রতি বছর তিন দিন কুরবানি করা যায় এবং ৫ দিন তাকবিরে তাশরিক আদায় করতে হয়।
জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ পর্যন্ত কুরবানি করা যায় আর জিলহজ মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত এ পাঁচ দিন তাকবিরে তাশরিক পড়তে হয়।
কুরবানির সঙ্গে তাকবিরে তাশরিকের সম্পর্ক
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করেন তখনই তাকবিরে তাশরিকের উৎপত্তি হয়। কুরবানির ইতিহাস আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন-
‘অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহিম তাকে বলল, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি? সে বলল, পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন।
যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা।
আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইবরাহিমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।’(সুরা সাফফাত : আয়াত ১০২-১১০)
তাকবিরে তাশরিকের উৎপত্তি
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন হজরত ইসমাইলকে কুরবানি করতে যাবেন, ঠিক তখনই হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে রওয়ানা হন।
তাঁর সংশয় হচ্ছিল পৃথিবীতে পদার্পণের আগেই হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর জবেহ কার্য সম্পাদন হয়ে যায় কিনা।
তাই হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম আকাশ থেকেই উচ্চ স্বরে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে থাকেন-
اَللهُ اَكْبَر – اَللهُ اَكْبَر
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার; আল্লাহু আকবার
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর আওয়াজ শুনে আকাশের দিকে তাকালে দেখতে পান যে, হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে কুরবানির দেয়ার জন্য হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম একটি দুম্বা নিয়ে আসছেন।
তা দেখে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাওহিদের কালিমা ও তাঁর রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে বলে উঠলেন-
لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ اَللهُ اَكْبَر
উচ্চারণ : ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।’
পিতার মুখে তাওহিদের এ অমূল্যবাণী শুনতে পেয়ে হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম আল্লাহর মহাত্ম, মর্যাদা ও শান শওকতের পাশাপাশি তার প্রশংসা করে বলেন-
اَللهُ اَكْبَر وَ لِلهِ الْحَمْد
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
তাৎপর্য ও ফজিলত
মহান আল্লাহ তাআলার প্রধান ফেরেশতা, একজন নবি ও একজন ভবিষ্যৎ নবিসহ এ তিন মহান ব্যক্তিত্ব কর্তৃক আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা, তাওহিদের ঘোষণা এবং প্রশংসামূলক বাক্যগুলোর আমল হলো তাকবিরে তাশরিক।
এ আমল আল্লাহ তাআলার দরবারে এত বেশি পছন্দ হলো যে, তিনি তা মুসলিম উম্মাহর জন্য আবশ্যক আমল হিসেবে কবুল করলেন।
এ কারণেই কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র জিলহজ মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৩ জিলহজ আসর নামাজের সময় পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর (মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর) পাঠ করা আবশ্যক।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাকবিরে তাশরিকের ইতিহাস জানার পর উল্লেখিত দিনগুলোতে এ ওয়াজিব তাকবির আদায় করে তার নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আইআই