‘হজে কিরান’ আদায় করার নিয়ম

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:২১ এএম, ১৯ আগস্ট ২০১৭

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিদায় হজ ছিল ‘হজে কিরান’। আর কিরান হজে কষ্ট যেমন বেশি, এর ফজিলত ও মর্যাদাও বেশি। এক ইহরামে দীর্ঘ সময়ের জন্য মুহরিম থেকে ওমরা এবং হজ সম্পাদন করাই হলো হজে কিরান।

ক্বিরান হজ আদায়ের নিয়ম
একই সঙ্গে ওমরা ও হজের উদ্দেশে ইহরাম বাঁধা। অথবা প্রথমে হজের উদ্দেশে ইহরাম বাঁধবে। হজ সম্পাদনের পর ওমরাকে জড়িয়ে নিবে। এভাবে নিয়ত করতে হবে-

‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইক হাজ্জান ওয়া ওমরাতান।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! ওমরা ও হজের উদ্দেশে তোমার ডাকে হাজির।’

কিরান হজ আদায়কারীকে মনে রাখতে হবে- হজ ও ওমরা আদায় ছাড়া ইহরাম থেকে বের হওয়া বা হালাল হওয়া যাবে না। মুহরিম অবস্থায় নিষিদ্ধ সব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

>> হজ ও ওমরার ইহরাম (ফরজ)
যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরাসরি মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছেন, তারা নিজ নিজ দেশ থেকে অর্থাৎ মিকাত অতিক্রম করার পূর্বেই ইহরাম বাঁধবেন। ইহরাম বাঁধার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেরে ওজু বা গোসল করে সেলাইবিহীন দু’টি কাপড় পরিধান করা।

মহিলারা তাদের ইহরামের পোশাক পরিধান করবেন। অতপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে হজ ও ওমরার নিয়ত করা-
‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইক হাজ্জান ওয়া ওমরাতান’।

অতঃপর তিনবার তালবিয়া পাঠ করা-
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারিকা লাক।

>> ওমরার তাওয়াফ (ওয়াজিব)
আগে ওমরা করলে ওজুর সঙ্গে ইজতিবা ও রমলসহ তাওয়াফ করা। ইজতিবা হলো- ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচে রেখে চাদরের দুই মাথাকে বাম কাঁধের সামনে ও পিছনে ফেলে রাখা।

হাজরে আসওয়াদ থেকে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত ওঠিয়ে তাওয়াফ শুরু করা। প্রথম তিন চক্কর রমল তথা বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদমে দ্রুতগতিতে প্রদক্ষিণ করা। পরবর্তী চার চক্কর সাধারণভাবে হেটে আদায় করা।

সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করে তাওয়াফ শুরু করে রুকনে ইয়ামেনি অতিক্রম করার সময় তা স্পর্শ করা। সম্ভব না হলে ইশারা করাই যথেষ্ট।

রুকনে ইয়ামেনি ও হাজরে আসওয়াদ প্রান্তের দোয়া
রকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদ-এর দিকে তাওয়াফকালে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দিুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আ’জাবান নার’ পড়া। এভাবে হাজরে আসওয়াদ থেকে প্রত্যেকবার হাত কাঁধ পর্যন্ত ওঠিয়ে ৭ চক্কর তাওয়াফ সম্পন্ন করা।

>> সাঈ (ওয়াজিব)
ক্বিরান হজ আদায়কারীরা সাফা পাহাড়ের ওপরে আরোহন করে সেখান থেকে ক্বিবলামুখী হয়ে সাঈ’র নিয়ত করে সাফা হতে সাঈ শুরু করা।

সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী নির্ধারিত চিহ্নিত স্থান দ্রুতবেগে অতিক্রম করা। মারাওয়া পাহাড়ে আরোহন পূর্বক দোয়া করা। অতপর আবার সাফায় আসা।

এভাবে ৭ বার সাঈ করা। যদি এ সময় সাঈ না করা যায়; তবে তাওয়াফে জিয়ারাতের পর তা আদায় করা ওয়াজিব।

>> তাওয়াফে কুদুম (সুন্নাত)
ক্বিরান হজ আদায়কারীদের জন্য এ তাওয়াফকে ‘তাওয়াফে কুদুম’ বলা হয়; যা আদায় করা (সুন্নাত)।

>> সাঈ (ওয়াজিব)
ওমরা আদায়ের জন্য সাঈ রোকন। তবে ক্বিরান হজ আদায়ের নিয়তকারীদের জন্য ওমরার সাঈ’র পর চুল ছাঁটা, কাঁটা বা মুণ্ডন নিষেধ। বরং ইহরামের সব বিধান মেনে চলা। অর্থাৎ সব ধরনের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা।

৭ জিলহজের কাজ
জিলহজ মাসের ৭ তারিখ হারাম শরিফে হজের নিয়মাবলীর ওপর যে খুতবা দেয়া হবে, তা মনোযোগ দিয়ে শোনা বা বুঝে নেয়া। অতঃপর ৮ জিলহজ জোহরের নামাজের আগে মিনায় গিয়ে উপস্থিত হওয়া।

৮ জিলহজ
>> মিনায় অবস্থান (সুন্নাত)
জিলহজের ৮ তারিখ জোহর থেকে ৯ তারিখ ফজর পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ত (জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর) নামাজ মিনায় পড়া (মুস্তাহাব) এবং তথায় অবস্থান করা (সুন্নাত)। ৯ জিলহজ ফজরের পর সম্ভব হলে গোসল অথবা ওজু করে দুপুরের আগে আরাফাতের ময়দানে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

৯ জিলহজ
>> আরাফাতের ময়দানে অবস্থান (ফরজ)
হজের অন্যতম রোকন হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। ৯ জিলহজ সকালে মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে আরাফায় আসার প্রস্তুতি স্বরূপ গোসল করে একবার তাকবিরে তাশরিক ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ পাঠ করা। জোহরের নামাজের আগেই আরাফাতের ময়দানে আসা।

অতঃপর দুপুরের পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শোনা এবং নিজ নিজ তাবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করা।

আরাফাতের ময়দান থেকে ৯ জিলহজ সুর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হওয়া।

>> মুজদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব)
আরাফাতের ময়দান থেকে মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও ইশার নামাজ এক আজানে ও একই ইক্বামাতে একসঙ্গে আদায় করা (সুন্নাত)।

প্রত্যেক নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক আদায় করা অর্থাৎ ১৩ জিলহজ আসর নামাজ পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক আদায় করা।

মুজদালিয়াফ রাত যাপন (বিশ্রাম) করা সুন্নাত। আর ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত সময়ে অবস্থান করা ওয়াজিব।

তবে ১০ জিলহজ ফজরের পর সুর্য ওঠার আগেই মুজদালিফা ত্যাগ করে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হতে হবে।

১০ জিলহজ ধারাবাহিকভাবে ৩টি কাজ আদায় করতে হবে। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর সুর্যোদয়ের পূর্বে কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা (ওয়াজিব)। অতঃপর সূর্য ওঠার আগে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া এবং মিনায় আসার পথে নিক্ষেপের জন্য ছোট ছোট ৭০টি পাথর সংগ্রহ করা।

>> কংকর নিক্ষেপ (প্রথম দিন)
১০ জিলহজ ফজর নামাজ মুজদালিফায় আদায় করে সুর্যোদয়ের পূর্বেই মিনায় এসে বড় জামরায় ৭টি (সাত) কংকর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। আর তা করতে হবে জোহরের আগে।

>> কোরবানি করা (ওয়াজিব)
মিনায় রাত যাপন করে সকালে কুরবানি নিশ্চিত করা জরুরি।

>> মাথা মুণ্ডন করা (ওয়াজিব)
কুরবানি সম্পন্ন করার পর মাথা হলক বা মুণ্ডন করা বিশ্ব নবির আদর্শের অনুসরণ করা (ওয়াজিব)।

সতর্কতা
কংকর নিক্ষেপ, কুরবানি ও মাথা মুণ্ডনের মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি।

মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্ক (স্ত্রী সহবাস) ছাড়া সব কাজ করা যাবে।

>> তাওয়াফে জিয়ারাত (ফরজ)
হজের সর্বশেষ ফরজ কাজ। এ তাওয়াফে জিয়ারাত ১২ জিলহজ সুর্যাস্তের আগেই সম্পন্ন করতে হবে। ১২ তারিখের পর এ তাওয়াফ করলে দম (জরিমানা কুরবানি) দিতে হবে। আর তাওয়াফে কুদুমের পর সাঈ না করলে তাওয়াফের জিয়ারতের পর তা আদায় করে নিতে হবে।

১১ ও ১২ জিলহজ
>> কংকর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)
১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করা। উভয় দিন দুপুরের পর থেকে তিন জামরায় ৭টি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা। (ওয়াজিব)

প্রথমে ছোট জামরায় তারপর মধ্যম, অতপর বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা। সর্বক্ষেত্রে দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতের বেলায় কংকর নিক্ষেপ করা উত্তম।

>>মিনায় রাত যাপন
১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থানের সময় সেখানে রাত যাপন করা (সুন্নাত)।

১৩ জিলহজ
যারা ১২ জিলহজ সুর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করবে না বা করতে পারবে না; তাদের জন্য রাতে মিনায় অবস্থান করা এবং ১৩ জিলহজ আরও ২১টি কংকর নিক্ষেপ করা। তবে এর মাঝে মক্কায় এসে তাওয়াফে জিয়ারাত সম্পন্ন করে আবার মিনায় যাওয়া।

মিনা ত্যাগ
১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে মিনা ত্যাগ করা। সুর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৩ তারিখও কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন।

>> বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)
সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত সব হজপালনকারীর জন্য বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করা ওয়াজিব। তবে হজ শেষে যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফ পরিণত হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজে কিরান যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।