হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রাত ‘লাইলাতুল কদর’
লাইলাতুল কদর, মহিমান্বিত রজনী। এ রাতের মর্যাদা দান করেছেন আল্লাহ তাআলা। তিনি বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর; হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত।
এ রাত মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ তাআলার হুকুমে ফেরেশতাগণ এ বরকতময় রাতে সব মঙ্গলময় বস্তু নিয়ে জমিনে আগমন করেন। এ রাত মানুষের দুনিয়া ও পরকালের শান্তি ও কল্যাণের রাত। যা শুরু হয় সন্ধ্যা থেকে এবং শেষ হয় প্রভাতে; এটা আল্লাহ তাআলার ঘোষণা।
আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে এ পবিত্র রাতেই হেরা গুহা আলোকিত হয়েছিল ঐশী বাণীর ঝলকে। জিবরিল আলাইহি সালাম নিয়ে এসেছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাণী ‘ইকরা বিসমি রাব্বি কাল্লাজি খালাক’; অর্থাৎ পড়ুন, আপনার রবের নামে; যিনি মানুষকে প্রবাহমান পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন।’ সেই থেকে পালিত হয়ে আসছে পবিত্র লাইলাতুল কদর। যা আজও অব্যাহত।
এ উপলক্ষে দেশব্যাপী দেশ-বিদেশের সব মসজিদ, খানকা এবং প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হবে ধর্মপ্রাণ মুসলমান নারী-পুরুষগণ। অনুষ্ঠিত হবে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা।
যেহেতু লাইলাতুল কদর অধিক মর্যাদাপূর্ণ রাত সেহেতু প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম উম্মাহ এ রাতে আল্লাহর নৈকট্য ও করুনা লাভের আশায় ইবাদাত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করেন।
প্রিয়নবি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে এ বিশেষ রাতে দোয়া পড়তে বলেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি অবশ্যই ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করাকে পছন্দ করেন, কাজেই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি)
লাইলাতুল কদর পালন সম্পর্কে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এক বর্ণনা রয়েছে। আর তা হলো-
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ২৭ রমজানের রাতে অর্থাৎ (২৬ রমজান দিবাগত রাত) ভোর পর্যন্ত ইবাদাত-বন্দেগি আমার কাছে সারা রামজানের অন্য সব রাতের ইবাদাত-বন্দেগি অপেক্ষা অধিক প্রিয়।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তি কারণে মুমিন মুসলমান ২৬ রমজান দিবাগত রাত লাইলাতুল কদর পালন করে থাকেন।
উল্লেখ্য যে-
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের মুসলিম সম্প্রদায় শুধু ২৭-এর রাতকেই শবেকদর মনে করে এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দেন।
আর এ রাতেই তারাবিতে কুরআন খতম সম্পন্ন হয়। মুমিন মুসলমান সারা রাত জেগে মসজিদে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকে।
সহিহ হাদিসের আলোকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো- প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২০ রমজানের পর থেকেই বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলেছেন।
তিনি লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য আমৃত্যু মসজিদে নববিতে ই’তিকাফে বসতেন। সে ধারাবাহিকতায় উম্মতে মুহাম্মাদি আজো রমজানের শেষ দশদিন ই’তিকাফ পালন করার মাধ্যমে লাইলাতুল কদর পেয়ে ধন্য হয়।
পরিশেষে...
মুসলিম উম্মাহর হে রোজাদাদরগণ! রমজানের শেষ দিনগুলোতে সিয়াম সাধনার পাশাপাশি ই’তিকাফ, ইবাদত-বন্দেগি, নফল নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াতসহ ন্যায় ও কল্যাণের কাজে আত্মনিয়োগ করুন।
আল্লাহ তাআলা ঘোষিত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাতের ফজিলত ও উপকারিত অর্জন করুন। বিগত জীবনের সব গোনাহ মাফ করে সহিহ জীবন-যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস