কুরআনের শ্রেষ্ঠ দোয়াসহ প্রথম তারাবিতে যা পড়া হবে


প্রকাশিত: ০২:০৬ এএম, ২৭ মে ২০১৭

আগামীকাল থেকে রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর নিকট আগমন করবে  পবিত্র মাহে রমজান। এ বরকতময় মাসেই আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার জন্য নাজিল করেছেন পবিত্র কুরআনুল কারিম।

রমজান মাসের অন্যতম আমল হলো কুরআনুল কারিম খতমের মাধ্যমে তারাবিহ নামাজ আদায়। রমজান মাসের দীর্ঘ ২৭ দিনে পূর্ণ কুরআন পাঠের মাধ্যমে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে মুমিন মুসলমান। সে লক্ষ্যে আজ ইশার নামাজের পরই শুরু হবে তারাবিহ নামাজ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুসলিম জনতার আবেগ অনুভূতির প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশব্যাপী প্রতিদিনের তারাবিহ নামাজে কুরআনের নির্ধারিত অংশ নির্ধারণ করেছেন। যাতে যে কেউ দেশের যে কোনো মসজিদে তারাবিহ নামাজ আদায় করলে পরিপূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত শুনা থেকে বঞ্চিত না হয়।

তারাবিহতে পঠিত প্রতিদিনের নির্ধারিত অংশের উল্লেখযোগ্য বিধান, ঘটনা এবং শানে নুজুল ধারাবাহিকভাবে জাগানিউজের ধর্ম বিভাগে উল্লেখ করা হবে।

আজ অনুষ্ঠিত হবে প্রথম তারাবিহ। আজকের তারাবিতে নিয়মানুযায়ী দেড় পারা তেলাওয়াত করা হবে। এ দেড় পারার মধ্যে রয়েছে সুরা ফাতিহা এবং সুরা বাকারার ২০৩নং আয়াত পর্যন্ত।

সুরা ফাতেহা
এ সুরাটি কুরআনুল কারিমের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোত্তম সুরা। এ সুরাটি শুধু মাত্র তারাবিহ নামাজের প্রথম দিন তেলাওয়াত করা হবে এমন নয়; বরং জানাযা নামাজ ছাড়া সব নামাজের প্রত্যেক রাকাআতেই তেলাওয়াত করতে হয়।

উম্মুল কুরআন খ্যাত সুরা ‘সুরা ফাতেহা’। এটি মাক্কি সুরা। এর আয়াত সংখ্যা ৭। এ সুরাটি কুরআনুল কারিমের সর্বোত্তম দোয়া।

এ সুরাটি দুই অংশে ভাগ করা। প্রথম তিন আয়াতে আল্লাহ পরিচয় এবং প্রশংসা রয়েছে। ৪র্থ আয়াতে আল্লাহর এবং বান্দার সম্পর্ক উল্লেখ করা হয়েছে। আর শেষাংশে আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁরই শিখানো ভাষায় পরকালের সফলতা লাভে সঠিক পথের সন্ধ্যান লাভের আবেদন রয়েছে।

সুরা বাকারা
কুরআনুল কারিমের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে বড় সুরার নাম ‘সুরা আল-বাকারা’। এটা মাদানি সুরা। সুরাটির আয়াত সংখ্যা ২৮৬। আজ এ সুরার ২০৩নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে।

সুরা বাকারা শুরুতেই আল্লাহ তাআলা সমগ্র কুরআনকে ঈমানদার মানুষের জন্য হেদায়েত গ্রন্থ হিসেবে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অতঃপর মানুষের ঈমানে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

অতঃপর এ সুরায় তিন শ্রেণীর মানুষের আলোচনা করা হয়েছে। তারা হলো- যথাক্রমে ঈমানদার, কাফের এবং মুনাফিক। সুরা বাক্বারার ২০৩নং আয়াত পর্যন্ত যে সব বিষয়গুলো পঠিত হবে, তা সংক্ষেপে তার বিবরণ তুলে ধরা হলো-

আয়াত ১-২০
>> মুত্তাকিদের পথনির্দেশিকা, সফলতা ও পরিচয়ের পর কাফেরদের পরিচয় এবং মুনাফিকের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

আয়াত ২১-২৯
সমগ্র মানবজাতির প্রতি ইবাদাতের আহ্বান করা হয়েছে। কুরআনের প্রতি সন্দেহপোষণকারীদের চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। মুমিনদের জন্য জান্নাতের বর্ণনার পাশাপাশি আল্লাহর অবাধ্যকারী কাফের-ফাসেকদের ক্ষতিগ্রস্তের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

আয়াত ৩০-৩৯
হজরত আদম আলাইহিস সালামের খেলাফত এবং মানুষের জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্বের আলোচনা করা হয়েছে।  হজরত আদম আলাইহিস সালামকে মর্যাদা ও সম্মান প্রদান এবং তাঁকে দুনিয়া প্রেরণপূর্বক মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধি নির্ধারণ করেন। শয়তানের দুশমনি ও কুমন্ত্রণা থেকে আত্মরক্ষায় তাওবার শিক্ষা প্রদান।

আয়াত ৪০-৭৪
ইয়াহুদিদের ইতিহাস ও মুসলমানদের দুঃখ, দুর্দশা ও তার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহর দ্বীন জমিনে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি এবং অকৃতজ্ঞ ইয়াহুদি জাতির হঠকারিতার বর্ণনাসহ সুরা নামকরণে ঐতিহাসিক গরু জবেহের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।

আয়াত ৭৫-৯৮
ইয়াহুদিদের হেদায়েতে তৎকালীন সময়ের মুমিনদের অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। বনি ইসরাঈলের ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের পাপ-পূণ্যের বিচার, ইয়াহুদিদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গ, বিশ্বনবির সঙ্গে ইয়াহুদিদের প্রতারণা, পরকালের সফলতা লাভে ইয়াহুদিদের কুট কৌশলের মিথ্যা প্রচারণা, হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম ও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে শত্রুতা পোষণের বিষয়টিও ওঠে এসেছে।

আয়াত ৯৯-১০৩
এ আয়াতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি কুরাআন নাজিল এবং তাঁর সত্যয়ন করা হয়েছে। আবার নিরূপায় অভিশপ্ত ইয়াহুদি জাতির জাদু বিদ্যা বা জাদু প্রীতির প্রতি ঝুঁকে পড়ার বিষয়টিও ওঠে এসেছে।

আয়াত ১০৪-১২৩
এ আয়াত গুলোতে ইয়াহুদিদের শিষ্টাচার বর্হিভূত আচরণ, কুরআনের আয়াত রহিত সম্পর্কিত ব্যাখ্যা, ইয়াহুদিদের ষড়যন্ত্র, মুসলমানদের চেতনাবোধকে জাগ্রত করা, শ্রেষ্ঠত্ব ও মুক্তিপ্রাপ্ত দল হিসেবে ইয়াহুদি ও নাসারাদের মধ্যে কলহ ও গলাবাজি, ইয়াহুদি-খ্রিস্টান পরস্পরের ঝগড়া বিষয়গুলো ওঠে এসেছে।

আবার মসজিদে আকসা থেকে কেবলা পরিবর্তনে ইয়াহুদিদের অপপ্রচার, ইয়াহুদি-খ্রিস্টান-মুশরিকদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের পর নির্ভেজাল তাওহিদের ঘোষণা এবং অন্যদের সঙ্গে ঈমানের সবচেয়ে বড় আদর্শিক সংঘাতের বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত ১২৪-১৪১
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম মুসলমানদের ইমাম এবং কাবা ঘর নির্মাণসহ কাবা ঘর সুন্দরভাবে নির্মাণ ও শেষনবি প্রেরণের দোয়া বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বংশধরদের আলোচনাও রয়েছে।

আয়াত ১৪২-১৫৭
পবিত্র কেবলা পরিবর্তনের রহস্য আলোচনা, মুসলিম জাতির গুণ ও পরিচয় এবং অমুসলিমদের কার্যাবলীর বিবরণের পাশাপাশি বিশ্বনবির নবুয়ত ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের সঠিক ধারণা ও প্রাসঙ্গিকতা বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর ধৈর্য ও নামাজ দ্বারা আল্লাহর সাহায্য লাভ, ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা ও শহিদের মর্যাদার বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত ১৫৮-১৭৭
হজ ও ওমরা পালনে আল্লাহর নির্দশন সাফা ও মারওয়া প্রদক্ষিণের বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয়েছে। সত্য গোপনকারী অবিশ্বাসী নেতাদের ভয়াবহ পরিণতি ও হুশিয়ারি, তাওহিদের মূলনীতি, ঈমানি চিন্তাধারা, হালাল-হারাম সম্পর্কিত কুরআনি নীতিমালাসহ পূর্ব পুরুষদের অন্ধ অনুকরণের কুপ্রভাব ত্যাগ করে ইবাদত-বন্দেগিতে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করা নির্দেশ এসেছে।

Vision

আয়াত ১৭৮-১৮৮
ইসলামে কিসাস বা হত্যার শাস্তির বিধান, মুক্তিপণের আলোচনা রয়েছে। মৃতব্যক্তির অসিয়তের বিধান, রোজা বিধান, শিক্ষা ও তাৎপর্যসহ সেহরি খাওয়ার বিধান, ই’তিকাফের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।  অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ ও তার বিধান আলোচনার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে বান্দার সাহায্য কামনার বিষয়টিও ওঠে এসেছে।

আয়াত ১৮৯-২০০
চাঁদের আবির্ভাব, ক্রমবৃদ্ধি ও ক্রমহ্রাসের বিবরণ, কুসংস্কারের মুলোৎপাটন, পবিত্র মাসসমূহে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধের বিবরণ, জিহাদে লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও বিধান প্রণয়ন, আল্লাহর পথে ব্যয়সহ হজ ও ওমরা বিধি-বিধান এবং হজের সমাপ্তি ও পরবর্তী করণীয় আলোচনা করা হয়েছে।

সর্বোপরি…
২০১ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া বান্দার জন্য সর্বোত্তম দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। যে দোয়া মুসলিম উম্মাহ পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত জায়গা অতিক্রমকারে তেলাওয়াত করে।

এ দোয়া হলো বান্দার জন্য সর্বোত্তম দোয়া। আর তা হলো- ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, পরকালের কল্যাণ দান করুন এবং আমাকে জাহান্নামের আগুণ থেকে হেফাজত করুন।

২০২ নং আয়াতে বান্দার অর্জন সম্পর্কে আল্লাহর হিসাব গ্রহণের বিষয়ের গুরুত্ব ওঠে এসেছে।
আর এ দিনের তারাবির শেষ ২০৩নং আয়াতে হজের দিনগুলোতে মিনায় তিন দিন অবস্থানকালে আল্লাহর স্মরণ কেমন হবে তা তুলে ধরা হয়েছে। ওই সময়ের বিবরণ উল্লেখ পূর্বক আল্লাহ তাআলাকে ভয় করার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ আল্লাহর ভয়ই মানুষকে নাজাত দান করতে পারে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনুল কারিম বুঝে পড়ার এবং আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।