যেমন ছিল বিশ্বনবির ক্ষমা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সুমহান চরিত্রের অধিকারী। তাঁর অনুপম চরিত্রের সত্যয়ন করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। জাহেলিয়াতের যুগের উচ্ছৃঙ্খল সমাজের লোকদের মাঝে হাজারো অহেতুক অভদ্র ও অশালীন আচরণের শিকার হওয়া সত্ত্বেও প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন ক্ষমার অতুলনীয় উদাহরণ।
তাঁর ক্ষমার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১২৮)
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোর অপরাধীর সঙ্গেও ক্ষমা ও উদারতা প্রদর্শন করতেন। কখনো তিনি প্রতিশোধ পরায়ন ছিলেন না। কাউকে শাস্তিও দিতেন না। শুধু তাই নয়, কঠিন দুঃখ, কষ্ট ও অত্যাচার-নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েও তিনি কাউকে বদ-দোয়া করতেন না। তাঁর গোটা জিন্দেগিই ছিল মহানুভবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
উম্মতের জন্য তিনি ছিলেন অনুসরণ ও অনুকরণীয় উত্তম আদর্শ। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ভাষায় তা পেশ করেছেন- ‘অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।’ আল্লাহ তাআলার এ ঘোষণা ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে আজও বিশ্বব্যাপী এক বাক্যে বিশ্বাস করে।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানবতার শ্রেষ্ঠ দরদি। যিনি কোনো মানুষের দুঃখ ও কষ্টকে সহ্য করতে পারতেন। তাঁর ক্ষমার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। যার কিছু তুলে ধরা হলো-
>> ইসলামের প্রথম সামরিক অভিযান গাজওয়ায়ে বদর বা বদর যুদ্ধে মক্কার মুশরিকদের অনেকেই বন্দি হন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের শিক্ষিত বন্দিদেরকে মুসলিমদের অক্ষরজ্ঞান দানের বিনিময়ে মুক্তি দিয়েছিলেন। আবার যারা নিতান্তই দরিদ্র্য ছিলেন তাদেরকে তিনি মুক্তিপণ ছাড়া এমনিতেই মুক্তি দিয়েছিলেন।
>> বিশ্বনবির ক্ষমার গুণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ইসলাম গ্রহণকারী ওহশিকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ওহশি ইসলাম গ্রহণের আগে তাঁর চাচা হজরত হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করেছিলেন। তিনি ওহশিকে লক্ষ্য বলেছিলেন, ‘হে ওহশি! তুমি আমার সামনে আসবে না; কারণ তোমাকে দেখলে আমার চাচার কথা মনে পড়ে।
>> বিশেষ করে হজরত হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করার পর আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা নির্মমভাবে তাঁর কলিজা চর্বন করেছিল। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিন্দাকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
>> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আমি কখনো দেখিনি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে থেকে কারো প্রতি জুলুমের বদলা নিয়েছেন। তবে আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেয়ে বেশি রাগান্বিত হতেও কাউকে দেখিনি।
>> একবার এক ইয়াহুদি বিশ্বনবির কাছে এসে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আসসামু আলাইকুম’ অর্থাৎ আপনার অমঙ্গল (মৃত্যু) হোক। হজরত আয়েশা তা শুনে রাগে ক্ষোভে বলে উঠলেন, আপনার মৃত্যু হোক, আপনার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক। তখন প্রিয়নবি বললেন, হে আয়েশা! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা দয়া ও কোমলতাকে ভালোবাসেন। এ ঘটনা থেকেও প্রমাণিত হয় যে, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন ক্ষমা ও দয়ার মূর্তপ্রতীক।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম গুণ ক্ষমা ও দয়ার মানসিকতা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। যাবতীয় জুলুম ও নির্যাতনে নিজেকে ক্ষমা ও দয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি কুরআন-সুন্নাহর বিধানের লঙ্ঘণকে বজ্র কঠোর ও ইস্পাত কঠিনসম অন্তরে প্রতিহত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি