গিবতের সহজ ধারণা
গিবত শব্দটি আরবি। সহজে গিবত বলতে বুঝায়, ‘কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে সুস্পষ্ট সত্য এমন কথা বলা যা তার মধ্যে বিদ্যমান আছে এবং যা শুনলে সে মনে কষ্ট পাবে বা অসন্তুষ্ট হবে।
এ গিবত হতে পারে মুখের ভাষা প্রয়োগে, লেখা-লেখির মাধ্যমে, অঙ্গ-ভঙ্গি দ্বারা বা অন্য যে কোনো প্রকারে। তা যেভাবেই করা হোক তাতে যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনে কষ্ট আসে, তবে বুঝতে হবে তা গিবত।
আলোচিত ব্যক্তির মধ্যে যদি উল্লেখিত দোষ বা গুণ পাওয়া না যায় তবে তা গিবত হবে না। তা হবে মিথ্যা অপবাদ হবে। সহজে গিবতের ধরণ বুঝতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে দু’টি তথ্য তুলে ধরছি-
প্রথম ঘটনা
এক বেঁটে মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আগম করেন। মহিলা চলে যাওয়ার পর উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর বেঁটে হওয়ার কথা বর্ণনা করেন। তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে আয়েশা! তুমি তো তার (ওই মহিলার) গিবত করলে!
তিনি (হজরত আয়েশা) নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তো তার অবাস্তব কোনো দোষ বর্ণনা করিনি। অবশ্য আমি তাঁর খর্বাকৃতি হওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করেছি। আর প্রকৃতপক্ষেই তো সে বেঁটে।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথার উত্তরে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদিও তুমি সত্য বলেছ, কিন্তু যখনই তুমি তার খর্বাকৃতি হওয়ার কথা (দোষ) বর্ণনা করেছ, তখন এটিই গিবত হয়ে গেল। (তাম্বিহুল গাফেলিন)
দ্বিতীয় ঘটনা
একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘গিবত কাকে বলে? তোমরা কি তা জান? উপস্থিত সবাই উত্তরে বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ভালো জানেন।
জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘জিকরুকা আখাকা বিমা ইয়াকরাহু।’ অর্থাৎ ‘গিবত হচ্ছে তোমার ভাইয়ের এমন কথা (দোষ) বর্ণনা করা; যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হবে।
সাহাবায়েকেরাম আরজ করলেন, বর্ণনাকৃত দোষ যদি ওই (আলোচিত ব্যক্তির মধ্যে) ভাইয়ের মধ্যে থাকে তা হলেও কি তা গিবত হবে?
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি তা সঠিক (থাকে) হয়; তবেই তা গিবত। অন্যথায় তা হবে (মিথ্যা) আপবাদ হবে। (মাআলেমুত তানজিল)
গিবত ত্যাগের উপদেশ
একটি বিষয় মনোযোগের সঙ্গে পর্যালোচনা করলেই গিবতের মতো অন্যায় ও তার গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে। আর তা হলো-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নসিহত পেশ করে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমান ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা যার গিবত করবে, যদিও ওই ব্যক্তির সঙ্গে তোমাদের কোনো আত্মীয়তার বন্ধন না থাকে, তারপরও ওই ব্যক্তি তোমার ভাই। এর কারণ হলো-
>> মুসলিম উম্মাহর উর্ধ্বতন পিতা ও মাতা হলো হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম। পৃথিবীর সব মানুষই তাদের সন্তান।
আবার
>> কুরআন-সুন্নাহর ঘোষণা অনুযায়ী প্রত্যেক মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই; অতএব প্রত্যেকেরই উচিত, তার আপন ভাইয়ের গিবত হতে বিরত থাকা। ওই ব্যক্তির বিষয়ে এমন কোনো বর্ণনা তথ্য না দেয়া, যা শুনলে তার মনে কষ্ট আসতে পারে।
পরিশেষে...
আজকাল মানুষ হাসতে হাসতে ইচ্ছায় আবার অনেকে অনিচ্ছায় গিবতে লিপ্ত হয়ে যায়। অথচ গিবতের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা অনেক সতর্কতামূলক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কি পছন্দ করবে যে, সে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? অবশ্যই তোমরা তা অপছন্দ করবে। উল্লেখিত আয়াতেও গিবত করাকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
আর মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া যেমন মারাত্মক গোনাহ ও অপছন্দনীয় কাজ। তেমনি তা থেকে বিরত থাকার মুসলিম উম্মাহর ঈমানের অপরিহার্য দাবি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গিবতের মারাত্মক অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকতে গিবতের সহজ ধারন ও জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। আল্লাহ তাআলা সবাইকে গিবতমুক্ত পরিবার ও সমাজ উপহার দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস