কুরআনের বাতিঘর তৈরির সফল কারিগর শাহজাহান হাওলাদার


প্রকাশিত: ০৫:২৭ এএম, ০২ মার্চ ২০১৭

কুরআন আল্লাহ তাআলার কিতাব। যা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর বিশ্ব মানবতার কল্যাণে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে নাজিল করা হয়েছে। কুরআন নাজিল করে আল্লাহ তাআলা সুরা হিজর এর ৯নং আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।’

দুনিয়াতে কুরআন সংরক্ষণের বাতিঘর হলো হিফজখানা। যেখানে দিন-রাত কচিমনা শিশু ও কিশোররা তিলাওয়াত ও আত্মস্থ করেছে পবিত্র কুরআনুল কারিম। আর কুরআনুল কারিমের সংরক্ষণের বাতিঘর তৈরির সফল কারিগর হলেন- পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানা সদরের বিলবিলাস গ্রামের হাজী নূর মোহাম্মদ হাওলাদারের ছোট ছেলে শাহজাহান হাওলাদার।

বয়সের হিসাবে ১৯৪৯-৫০ সালের দিকে জন্ম নেয়া শাহজাহান হাওলাদার ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ৮টি হিফজ মাদরাসা। আর নিজের পরিবারের ৪৮ জন ব্যক্তিই হয়েছেন হাফেজে কুরআন। আর আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে হাফেজে কুরআনের সংখ্যা শতাধিক। তিনি কুরআনুল কারিমের বাতিঘর ‘হিফজ মাদ্রাসা’ তৈরির কাজটি শুরু করেছেন ১৯৬৮ সালে।

মাত্র ৭ বছর বয়সে বাবা ও মাকে হারান। মা-বাবার মৃত্যুর পর তিনি বড় ভাইয়ের নিকট লালিত-পালিত হন। বড় ভাই ২৬ বছর বয়সে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে পবিত্র নগরী মক্কায় ইন্তেকাল করেন।

বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর বোনদের তত্ত্বাবধানে থেকে পড়া-লেখা করে এইচএসসি পাশের করলেও ডিগ্রি পরীক্ষায় ইংরেজিতে পাস করতে পারেননি। এ কারণে তার মনে কোনো হতাশা বা আফসোসও নেই।

বাবা, মা ও ভাইয়ের মৃত্যুর পর শাহজাহান হাওলাদার মাদরাসা করার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিছু সম্পদ বিক্রি করে বাড়ির পাশেই একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আর বাকি সম্পদের আয় দিয়ে মাদরাসা পরিচালনা করেন।

আত্মীয়-স্বজন ছাড়া শুধু শাহজাহান হাওলাদারের পরিবারেই রয়েছে ৪৮ জন হাফেজে কুরআন। ৬ ছেলে আর ৪ মেয়েকে হিফজ সম্পন্ন করান। ১০ ছেলে-মেয়ের উভয়কেই বিয়ে দেন হাফেজদের সঙ্গে।

বড় ছেলে হাফেজ মজিবর রহমান ৩ ছেলে ৪ মেয়ের জনক। তার ৬ সন্তানই হাফেজ। স্বপরিবারে সৌদিতে থাকেন তিনি।

দ্বিতীয় ছেলে হাফেজ নূর হোসেনের ৩ ছেলে ৩ মেয়ে মধ্যে ২ জন হাফেজ। তিনি বিলবিলাস হাফেজিয়া মাদরাসার পরিচালক।

তৃতীয় ছেলে হাফেজ আবু বকর ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার পরিচালক। তার ২ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে ২জনেই হাফেজ।

চতুর্থ ছেলে হাফেজ ইবরাহিম বরিশালে ব্যবসা করলেও তার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে একজন হাফেজসহ আরেকজন হিফজ পড়ছেন।

পঞ্চম ছেলে হাফেজ জোবায়ের। তিনি ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে আছিয়া খাতুন হিফজ মাদরাসা পরিচালনা করেন। তার ৪ সন্তানের মধ্যে ১ জন হাফেজ ১ জন হিফজ পড়ছেন।

ছোট ছেলে হাফেজ হুজাইফা ঢাকায় ব্যবসা করেন। তার ৩ সন্তানের মধ্যে ১ জন হাফেজ এবং ১ জন হিফজ পড়ছেন।

হিফজ মাদরাসার সফল প্রতিষ্ঠাতা শাহজাহান হাওলাদারের ৪ মেয়েও হাফেজ। তাদেরকে বিবাহ দেন হাফেজদের সঙ্গে।

বড় মেয়ে হাফেজ খাদিজার ৬ সন্তানের মধ্যে ৫জনই হাফেজ। দ্বিতীয় মেয়ে হাফেজ আসমার ৯ সন্তানের মধ্যে ৫ সন্তানই হাফেজ। তৃতীয় মেয়ে খানজা ৫ সন্তানের মধ্যে ১ জন হিফজ সম্পন্ন করছে আর একজন হিফজ পড়ছে। ছোট মেয়ে হাফেজ আম্মারা ৩ সন্তানের মধ্যে একজন হিফজ সম্পন্ন করেছেন।

আল্লাহ তাআলা কুরআনের বাতিঘর তৈরির সফল কারিগর শাহজাহান হাওলাদারের এ অসামান্য অবদানকে কবুল করুন। সমাজের শান্তি ও শিক্ষা প্রসারে কুরআনের এ খাদেমকে অনুসরণ করে অন্যদেরকেও এ খেদমতে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।