আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন এমনই
নিজেকে বড় প্রভু বলে দাবি করেছিল ফেরাউন। কুরআনের অনেক জায়গা আল্লাহ তাআলা সে কথা জানিয়েছেন। ফেরাউনের সময়কালে আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হজরত হারুন আলাইহিস সালামকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য নবি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হজরত হারুন আলাইহিস সালাম দুই ভাই। আল্লাহ তাআলা তাঁদের দুজনকে বনি ইসরাঈল জাতির নিকট পাঠিয়েছেন। বনি ইসরাঈল এমন এক জাতি, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি নিয়ামত দান করেছেন।
কুরআনে এ সব নিয়ামতের ইতিহাস উল্লেখ করে মুসলিম জাতিকে একদিকে সুসংবাদ দিয়েছেন, অন্যদিকে শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠ উম্মাত হওয়ার জন্য মন-মানসিকতা তৈরির রসদ যুগিয়েছেন। বিপদে ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার উপায় স্বরূপ ধৈর্যধারণ করার উত্তম শিক্ষা দিয়েছেন।
ফেরাউন তার রাজত্ব ও প্রভুত্ব কায়েমের লক্ষ্যে বনি ইসরাঈলের সব নবজাতক শিশুকে হত্যার জঘন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ মহা হত্যাযজ্ঞের মাঝেও আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হজরত হারুন আলাইহি সালামকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যা আল্লাহ তাআলার কুদরতের মহা নিদর্শন।
হজরত ওহাব ইবনে মোনাব্বিহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন, আমার নিকট এ বিবরণ পৌঁছেছে যে, ফেরাউন (হজরত মুসা আলাইহিস সালামের আগমনের ভয়ে) বনি ইসরাঈলের ৯০ হাজার শিশুকে হত্যা করেছিল। আর মহামারীর কারণেও অনেক বয়স্ক লোকের মৃত্যু হয়।
মানুষের মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার ফলে নেতৃত্বস্থানীয় কিবতী সম্প্রদায়ের লোকেরা অস্থির হয়ে উঠে এ আশংকায় যে, পরিশ্রম ও কাজের সব দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হবে। তাই তারা ফেরাউনের কাছে আবেদন করল যে, বনি ইসরাঈলদের শিশুদের হত্যা বন্ধ করা হোক।
কিবতীদের দাবি অনুযায়ী ফেরাউন নতুন করে ফরমান জারি করল যে, এক বছর বিরতি দিয়ে বনি ইসরাঈলের শিশুদের হত্যা করা হবে।
মহান আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরতের নিদর্শন হলো- যে বছর শিশু হত্যা বন্ধ ছিল সে বছর জন্ম নিলেন হজরত হারুন আলাইহিস সালাম।
আর যে বছর শিশু হত্যা জারি ছিল সে বছর, জন্ম নিলেন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম। অথচ আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে হেফাজত করলেন। শুধু তাই নয়, ফেরাউনের ঘরেই হজরত মুসা আলাইহি সালামের লালন–পালনের ব্যবস্থা করলেন।
আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের পতন ঘটাতে এবং দুনিয়াতে তাঁর তাওহিদের প্রচার, প্রসার এবং বাস্তবায়নের জন্যই সন্তান হত্যার বছর হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন।
বর্তমান সময়েও আমরা এ রকম অসংখ্য নিদর্শন ও ঘটনা দেখতে পাই। যেমন- চরম অবহেলা নবজাতককে ডাষ্টবিনে পাওয়া; বহুতল ভবন থেকে ফেলা দেয়া হলেও কোনো কোনো শিশুর বেঁচে যাওয়া ইত্যাদি। যা মানুষতে তাঁর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনে আগ্রহী করে তোলে।
সুতরাং বিপদে হতাশা নয় বরং আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই ইসলামের বিধি-বিধান পালন করা মুসলিম উম্মাহর জন্য আবশ্যক কাজ।
দুনিয়ার কঠিন বিপদাপদে অধৈর্য না হয়ে আল্লাহ তাআলার ওপর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুসলমানের উচিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব ধরনের বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং তাঁরই নিকট সাহায্য চাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস