নামাজে যে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি


প্রকাশিত: ০৭:০২ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ঈমানের সাক্ষ্য দেয়ার পর মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলার প্রথম নির্দেশ হলো নামাজ আদায় (প্রতিষ্ঠা) করা। আল্লাহ তাআলা কুরআনের অনেক জায়গায় নামাজের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করাকে ফরজ করে দিয়েছেন। তাই নামাজ আদায়ের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।

মানুষের মধ্যে এমন অনেকে আছে, যারা নামাজ আদায়ের ব্যাপারে উদাসিন অথবা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যেই নামাজ আদায় করে। অথচ নামাজে যেমন উদাসিনতা ঠিক নয় তেমনি লোক দেখানো নামাজও মারাত্মক অপরাধের কারণ। আর আল্লাহ তাআলা এ বিষয়গুলোতে কুরআনের সুস্পষ্ট বিধান নাজিল করেছেন। হাদিসে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব দুর্ভোগ সে সব নামাজির জন্য যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বেখবর, যারা তা লোক দেখানোর জন্য আদায় করে।’ (সুরা মাউন : আয়াত ৪-৬) আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মাধ্যমে দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে মুসলিম উম্মাহকে সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করেছেন।

নামাজে উদাসিনতা বা অমনোযোগীতা বলতে তাফসিরে আহসানুল বয়ানে এসেছে, ‘এখানে ওই সব মানুষকে বুঝানো হয়েছে, যারা মোটেই নামাজ পড়ে না; অথবা প্রথম দিকে নামাজ পড়তো অতঃপর তাদের মধ্যে অলসতা দেখা দিয়েছে অথবা যথাসময়ে নামাজ আদায় করে না বরং যখন মন চায় তখন পড়ে নেয় অথবা দেরি করে আদায় করতে অভ্যাসী হয় অথবা বিনয়-নম্রতার সাথে নামাজ পড়ে না ইত্যাদি।

কুরআন এবং হাদিসে নামাজে অমনোযোগীতা ও লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায়কারীদের জন্য শাস্তির কথা উল্লেক করা হয়েছে। তাছাড়া হাদিসের পরিভাষায় লোক দেখানো নামাজকে ছোট শিরক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যা কবিরা গোনাহের শামিল। যে গোনাহ একনিষ্ঠ তাওবা ছাড়া মাফ হয় না।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ে সংবাদ দিব না, যে বিষয়টি আমার কাছে মাসীহ দাজ্জালের (ফিতনার) চেয়েও ভয়ংকর? সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ।

তিনি বললেন, ‘তা হচ্ছে গোপন শিরক। (গোপন শিরকের উদাহরণ পেশ করতে গিয়ে বিশ্বনবি বলেন) একজন মানুষ দাঁড়িয়ে শুধু এ জন্যই তার নামাজকে খুব সুন্দরভাবে আদায় করে যে, কোনো মানুষ তার নামাজ পড়া দেখছে। (ইবজুন মাজাহ)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়লো, তবে সে শিরক করলো; যে ব্যক্তি অন্যকে দেখানোর উদ্দেশ্যে সাদকা করলো সে শিরক করলো। (মুসনাদে আহমদ)

পরিশেষে…
যদিও নামাজে অমনোযোগী বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না; তথাপিও নামাজ আদায়কারীকে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ উদাসিনতা ও লোক দেখানো নামাজ ওই ব্যক্তির আমলকে বিনষ্ট করে দেয় এবং তা ফাসেকি কাজ। যা শিরকে আসগার ও কবিরা গোনাহ।

ঈমান নামাজ ও তাওহিদের হিফাজত এবং সংরক্ষণের জন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এ কাজগুলো পরিহার করা। কুরআন হাদিসে ভাষ্য অনুযায়ী নামাজকে যথা নিয়মে আদায় করা। তবেই দুনিয়া ও পরকালের পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের ব্যাপারে আরো বেশি মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত নসিহত অনুযায়ী নামাজের ক্ষতিকর দিকগুলো পরিহার করার তাওফিক দান করুন।

অমনোযোগী ও লোক দেখানো নামাজের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে শিরকে আসগার বা ছোট শিরক করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। নামাজকে পরকালীন জীবনের সফলতা লাভের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।