বিশ্বনবির শুভাগমনের বংশ পরম্পরা ধাপসমূহ


প্রকাশিত: ০৬:১৩ এএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬

বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পৃথিবীতে সৌভাগ্যময় শুভাগমনে তিনি নবি-রাসুলগণের বংশ ধারায় তিনটি ধাপ অতিক্রম করেছেন।

এ তিনটি ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপ সম্পর্কে কারো কোনো মতবিরোধ নেই; দ্বিতীয় ধাপের ব্যাপারে মতান্তর থাকলেও দ্বিতীয় ধাপ হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম পর্যন্ত পৌছার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। আর তৃতীয় ধাপের ব্যাপারে আহলে কিতাবগণের বর্ণনার ওপর নির্ভরশীল।

প্রথম ধাপ
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে আদনান পর্যন্ত হলো বংশ পরম্পরার প্রথম ধাপ। আর তা হলো- ‘মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব (শায়বা) বিন হাশিম (আ’মর) বিন আবদে মানাফ (মুগীরাহ) বিন কুসাই (যায়েদ) বিন কিলাব বিন মুররাহ বিন কা’ব লুওয়াই বিন গালিব বিন ফিহর (তার উপাধি ছিল কুরাইশ এবং এ সূত্রেই কুরাইশ বংশের উদ্ভব) বিন মালিক বিন নযর (ক্বায়েস) বিন কিনানাহ বিন খুযায়মাহ বিন মুদরিকাহ (আমির) বিন ইলিয়াস বিন মুযার বিন নিযার বিন মাআ’দ্দা বিন আদনান।’

দ্বিতীয় ধাপ
আদনান থেকে উপরের দিকে বিশ্বনবির বংশ পরম্পরার দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও তা যে হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম পর্যন্ত পৌছেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর তা হলো- ‘আদনান বিন উদাদ বিন হামায়সা বিন সালমান বিন আ’ওস বিন বুয বিন ক্বামওয়াল বিন উবাই বিন আ’ওয়াম বিন নাশিদ বিন হিযা বিন বালদাস বিন ইয়াদলাফ বিন ত্বাবিখ বিন যাহিম বিন নাহিশ বিন মাখি বিন আ’ইয বিন আ’ব্‌ক্বার বিন উবাইদ বিন আদ-দুআ’ বিন হামদান বিন সুনবর বিন ইয়াসরিবী বিন ইয়াহযুন বিন ইয়ালহান বিন আরআ’ওয়া বিন আইয বিন দিশান বিন আ’ইসার বিন আফনাদ বিন আইহাম বিন মুক্বসির বিন নাহিস বিন যারিহ বিন সুমাই বিন মুযি বিন আ’ওযাহ বিন ইরাম বিন ক্বাইদার বিন ইসমাইল বিন ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)।’

তৃতীয় ধাপ
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম থেকে আদম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশ পরম্পরা আহলে কিতাবগণের বর্ণনার ওপর নির্ভরশীল। আর তা হলো- ‘ইবরাহিম(আলাইহিস সালাম) বিন তারিহ (আযর)  নাহুর বিন সারুর অথবা সারুগ বিন রাউ’ বিন ফালাখ বিন আ’বির বিন শালাখ বিন আরফাখশাদ বিন সাম বিন নূহ (আলাইহিস সালাম) বিন লামিক বিন মাতাওশালখ বিন আখনুখ (কথিত আছে যে এ নাম ছিল হজরত ইদরিস আলাইহিস সালামের) বিন ইয়ারদ বিন মাহলায়িল বিন ক্বায়নান বিন আনুশ বিন শীস বিন আদম (আলাইহিস সালাম)

পারিবারিক ধাপ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের ওপরের দিক থেকে তাঁর প্রপিতামহ হাশিম বিন আবদে মান্নাফ থেকে পারিবারিক পরিচয় প্রদানের মূলসূত্র ধরার কারণে তা হাশিমী পরিবার নামে প্রসিদ্ধ ছিল।

বংশ পরম্পরায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের লোকজন পবিত্র নগরী মক্কায় ঐতিহ্যগতভাবেই অত্যন্ত মযাদা ও সম্মানের অধিকারী ছিলেন। পবিত্র হারাম শরিফের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার ও তত্ত্ববধায়ক ছিল নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের উর্ধ্বতন পুরুষগণ।

হাশিম
মক্কার অন্য সম্প্রদায় বনু আবদুদ্দারের সঙ্গে বনু আবদে মান্নাফের সঙ্গে হারামের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে চুক্তি সম্পাদিত হয়। আবদে মান্নাফের সন্তানদের মধ্যে হাশিমকেই ‘সিক্বায়াহ ও রিফাদাহ’ অর্থাৎ হজযাত্রীদের পানি পান করানো এবং মেহমানদারি করার মর্যাদা প্রদান করা হয়।

হাশিম ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিত্ব। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ‘শোররা’ বা ঝোলের সঙ্গে রুটি মিশ্রিত করে মক্কায় হজযাত্রীগণকে খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করেন।

হাশিম-ই হলো সেই ব্যক্তি; যিনি কুরাইশদের জন্য শীত ও গ্রীষ্মকালো দুটি ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত পর্যটনের গোড়াপত্তন করেন।

মুত্তালিব
সিক্বায়াহ ও রিফাদাহ সম্পর্কিত পদের দায়িত্ব ছিলো হাশিমের ওপর। হাশিমের মৃত্যুর পর সেই দায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁর ভাই মুত্তালিব বিন আবদে মান্নাফের ওপর।  তিনিও সদগুণাবলী ও মান-মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁর কথা অমান্য করার বা নড়চড় করার ক্ষমতা দলের অন্য কারো ছিল না। বদান্যতার জন্যও তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন।

আব্দুল মুত্তালিব
আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন হাশিমের ছেলে শায়বার লকব। চাচা মুত্তালিব তাকে পিতৃভূমিতে নিয়ে আসলে তার কাওমের লোকেরা তাকে মুত্তালিবের দাস মনে করেছিল। পরবর্তীতে তিনি আব্দুল মুত্তালিব নামেই পরিচিতি লাভ করেন।

চাচা মুত্তালিবের মৃত্যুর পর সব দায়দায়িত্ব আব্দুল মুত্তালিবের ওপর অর্পিত হয়। পর্যায়ক্রমে আব্দুল মুত্তালিব নিজ সম্প্রদায়ের নিকট এমন মান-মর্যাদার অধিকারী হন; যা তার পিতা, পিতামহসহ কেউ অর্জন করতে সক্ষম হননি।

আবদুল্লাহ
আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানদের মধ্যে আবদুল্লাহ ছিলেন সবচেয়ে সুন্দর উন্নত চরিত্রের অধিকারী যুবক। আব্দুল মুত্তালিব আল্লাহ পথে তাঁর এক সন্তানকে কুরবানির জন্য নিয়ত করেছিলেন। কুরবানি সম্পাদনের লটারীতেও আবদুল্লাহ নাম চলে আসে।

আব্দুল মুত্তালিব তাঁর প্রাণ প্রিয় সন্তান আবদুল্লাহ জন্য ওয়াহাব বিন আবদে মানাফ বিন যুহরা বিন কিলাবের কন্যা আমিনাহকে মনোনীত করেন। বংশ পরম্পরা এবং মর্যাদার দিক থেকে আমিনাহকে কুরাইশ গোত্রের মধ্যে উঁচু মর্যাদার মহিলা হিসেবে গণ্য করা হতো। তাঁর পিতা ওয়াহাব ছিলেন বিখ্যাত বনু যুহরা গোত্রের অধিপতি।

সর্বোপরি বিশ্বনবি পিতৃ-মাতৃ পর্যায়ের দিক থেকে উভয়ের বংশ পরম্পরায় অনেক উঁচু মর্যাদা ও নেতৃস্থানীয়দের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।