ইসলামই ধর্মীয় সহাবস্থানের শিক্ষা দেয়


প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ০৭ নভেম্বর ২০১৬

শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম ইসলাম। অন্যায় অপরাধ বর্জন ও অশান্তির পথ পরিহার করা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শ। ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যা সব ধর্মের মানুষকে সহাবস্থান এবং অধিকারের প্রতি সম্মান জানায়।

বর্তমান সময়ে কিছু দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনসহ তাদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। এসব দুষ্কৃতকারীর অপকর্মের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।

যদি বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিধন শুরু হয় এবং সব মসজিদ ও মাদরাসা ভেঙে ফেলা হয় তবুও যেসব দেশে অমুসলিম সম্প্রদায় সংখ্যায় কম; সেখানে তাদের ধর্মীয় স্থাপনা ও ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অধিকার ইসলাম কোনো ব্যক্তিকে দেয়নি। আর এটাই হল পবিত্র ইসলাম ধর্মের সুমহান শিক্ষা ও অন্যতম আদর্শ।

কুরআনে ইসলাম ধর্মের বাইরে অন্য ধর্মের উপাস্যদের গালি দিতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না; আল্লাহকে ছাড়া তারা যাদের উপাসনা করে। তাহলে তারা অজ্ঞতাবশত ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে আল্লাহকে মন্দ বলবে। আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কাজকে সুশোভিত করেছি। অতঃপর তাদের একদিন আল্লাহর নিকট ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তাদের বলে দেবেন (দুনিয়াতে) তারা যা করত। (সুরা আনআ’ম : আয়াত ১০৮)

ইসলাম সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে মুসলিম নিরাপত্তা লাভকারী কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে; সে বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে বেহেশতের ঘ্রান পাওয়া যায়। (মুসলিম)

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে আমার এক নিকটাত্মীয় একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আর তা হলো- রঙ্গলাল, বিকাশ, পঙ্কজ, অজয়, বিজয়, পরিতোষ, বজোলাল তোদেরকে আজ খুব মনেপড়ে। শৈশবে তোদের পূজা পার্বনে, তোদের মায়েরা যখন লাড্ডু, মোয়া, মিষ্টান্নভোজন করাতো; তখন একবারের জন্যও মনে হয়নি- আমি মুসলমান আর তোরা হিন্দু। মনে হয়েছে আমরা মানুষ, আমরা বন্ধু।

আমাদের প্রাইমারি ও হাইস্কুলের শিক্ষক দুলাল বিএসসি, খগন্ড স্যার, গোপাল স্যার যখন পড়াতেন, তখন একবারো মনে হয়নি তারা হিন্দু। মনে হয়েছে তারা মানুষ গড়ার কারিগর মহান শিক্ষক।

রাত-বিরাতে আমাদের কেউ অসুস্থ হলে হারু (হারাধন) ডাক্তার, নান্টু ডাক্তার, বিধান ডাক্তাররা যখন বিপদের সময় চিকিৎসা করতো; তখন একবারো মনে হয়নি যে তারা হিন্দু। মনে হয়েছে মানব সেবায় নিয়োজিত সুমহান চিকিৎসক।

সবসময় নিজেকে মানুষ ভাবতে শিখেছি, আজো ভাবি। সর্বোপরি সবার উপর মানুষ সত্য; তাহার উপর নাই। আসুন নিজেদের মানুষ ভাবি; সাম্প্রদায়িক পশু নয়।

পরিশেষে...
আমরা মুসলমান; ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম যেহেতু সব ধর্মের সহাবস্থান ও অধিকারের প্রতি সম্মান জানায় তাই অপর ধর্মের অনুসারীদের প্রতি সহিংস না হই। সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের অপকর্মে জড়িতদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলি।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা মুনাওয়ারায় যে ইসলামী রাষ্ট্রের বুনিয়াদ গড়েছিলেন, সেখানে তিনি সব ধর্মের মানুষদের সুন্দর সহাবস্থান এবং নিরাপত্তা প্রদান করেছিলেন। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী সব মুসলিমকেই ইসলামী অনুশাসন মেনে অন্য ধর্মের সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে আসা উচিত, যা মুসলিম উম্মাহকে অনন্য মর্যাদায় উন্নীত করবে।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।