ভ্রমণের সময় বিশ্বনবির নামাজ


প্রকাশিত: ০৭:৫৪ এএম, ২০ অক্টোবর ২০১৬

ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। নামাজকে দ্বীনের খুঁটি বলা হয়। খুঁটি ছাড়া যেমন ঘর হয় না; তেমনি নামাজ ছাড়া দ্বীন পরিপূর্ণ হয় না। মানুষ মুকিম হোক আর মুসাফির হোক অর্থাৎ নিজ বাড়িতে অবস্থান করুক আর সফর অবস্থায় থাকুক; সর্বাবস্থায় নামাজ আদায় করা আবশ্যকীয় কাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর অবস্থায় যেভাবে নামাজ আদায় করেছেন সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো-

সফরের নামাজে কসর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরের সময় চার রাকআত বিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো তিনি কসর করে পড়তেন। অর্থাৎ চার রাকআত বিশিষ্ট নামাজকে তিনি কসর করে দুই রাকআত আদায় করতেন।

হজরত ইবনে ওমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হজরত উমাইয়া বিন খালেদ জিজ্ঞেস করলেন, আমরাতো কুরআনে বাড়ীতে অবস্থান করার সময় নামাজ পড়ার বর্ণনা এবং ভয়ের সময় নামাজ পড়ার পদ্ধতির কথা জানতে পেরেছি কিন্তু সফর অবস্থায় নামাজ পড়ার বিষয়টি তো কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি।

ইবনে ওমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন বললেন, ‘হে ভাই! আল্লাহ্ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের নিকট এমন সময় প্রেরণ করেছেন, যখন আমরা কিছুই জানতাম না। আমরা বিশ্বনবিকে যা করতে দেখেছি, আমরাও তাই করেছি।’

সফর অবস্থায় তিনি কেবল ফরজ নামাজগুলো পড়তেন। ফরজের পূর্বে বা পরে সুন্নাত পড়ার কথা বর্ণিত হয়নি। তবে তিনি ফজরের সুন্নাত ও বিতর নামাজ পড়তেন। কিন্তু ফরজ নামাজের পূর্বে বা পরে সাধারণ নফল নামাজ পড়তে নিষেধও করেন নি।

আর সফর অবস্থায় নফল পড়লে বাড়ীতে অবস্থানকালীন সময়ের ন্যায় সাধারণ নফল হিসেবেই গণ্য হবে। সুন্নাতে মুআক্কাদাহ হিসাবে নয়। অর্থাৎ সফর অবস্থায় আদায়কৃত নফল সুন্নাতের স্থলাভিষিক্ত হবেনা এবং তা সুন্নাতে রাতেবা হিসাবেও গণ্য হবেনা।

বাড়ীতে অবস্থানকালে যেমন সুন্নাতে রাতেবা (মুআক্কাদাহ) পড়ার পর নফল ও তাহাজ্জুদ পড়া বিশ্বনবির ইচ্ছাধীন ছিল, তেমনি সফর অবস্থায় সুন্নাতে রাতেবা (মুআক্কাদাহ) বাদ দেয়ার পরও নফল পড়াটি বান্দার ইচ্ছাধীনই থেকে যায়।

সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন চাশতের সময় আট রাকআত নামাজ পড়েছেন।

ভ্রমণকালে তিনি বাহনের ওপর বসেই নফল নামাজ পড়তেন। বাহন তাকে নিয়ে যেদিকেই যেত, তাতে কোনো অসুবিধাই মনে করতেন না। ইঙ্গিতের মাধ্যমে রুকু-সিজদা করতেন। তবে রুকুর তুলনায় সিজদাতে কম সময় অবস্থান করতেন।

সফরের সময় জোহর ও আসর আদায়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পূর্বে যাত্রা শুরু করতেন তাহলে যোহরের নামাজকে বিলম্বে আসরের নামাজের সাথে আদায় করতেন।

আর যদি সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পর যাত্রা শুরু করতেন তাহলে যোহর ও আসর একসাথে পড়েই যাত্রা শুরু করতেন।

সফরের সময় মাগরিব ও ইশা আদায়
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্রুত নির্ধারিত গন্তব্যে পৌছার ইচ্ছা করলে মাগরিবের নামাজকে ইশার সময় পর্যন্ত দেরী করে আদায় করতেন এবং উভয় নামাজকে একত্রে পড়তেন।

তবে, বাহনের উপর বসে চলন্ত অবস্থায় কিংবা কোনো স্থানে দীর্ঘ সময় বিরতি দিলে তিনি সাধারণত দুই নামাজ একত্রে আদায় করতেন না। নামাজের নির্ধারিত সময়ে তা আদায় করতেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সফর অবস্থায় নামাজ আদায়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তথ্যসূত্র : যাদুল মাআদ

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।