মোহনা আনসারি : নেপালের প্রথম মুসলিম নারী আইনজীবী
পর্যটনের স্বর্গ হিমালয় কন্যা নেপাল। নেপালের প্রথম মুসলিম নারী আইনজীবী মোহনা আনসারি। তিনি দেশটির মানবাধিকার কমিশনের প্রধান। ইতিপূর্বে নেপাল সাংবিধানিকভাবে হিন্দু রাষ্ট্র থাকলেও এখন তা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। এ ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে জনসংখ্যার দিক থেকে মুসলমানের অবস্থান তৃতীয়। দেশটির প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুসলমানের সংখ্যা শতকরা ৪.২ ভাগ।
নেপালের মুসলমানদের অধিকার রক্ষা, কোটা সংরক্ষণ এবং ঐতিহ্যের অনন্য প্রতীক মোহনা আনসারি। তিনিই নেপালের প্রথম মুসলিম নারী আইনজীবী। ৩৯ বছর বয়সী এ নারী আইনজীবীকে দেশটির মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। নেপালের দক্ষিণের শহর নেপালগুঞ্জের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম।
পর্যটন স্বর্গ হিমালয় কন্যাখ্যাত নেপালে হিজরি পঞ্চম শতকে আরব দেশ থেকে বাণিজ্য কাফেলার আগমনের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের আগমন ঘটে। এখন পর্যন্ত নেপালের মুসলিম জনগণের জন্য তাদের নিজস্ব ভাষায় কুরআন-হাদিসসহ কোনো ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তক তৈরি হয়নি।
নেপালের মুসলমানদের মাঝে শিক্ষার হার এবং সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা উল্লেখ করার মতো নয়। এমনকি নেপালের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মুসলিম শিক্ষকও নেই। সরকারের উচ্চপদে মোহনা আনসারির অন্তর্ভুক্তি মুসলমানদের জন্য আলোকবর্তিকা।
নেপালের মুসলমানদের জন্য আলাদা কোনো ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তক না থাকলেও বর্তমানে নেপালে ৩৪৩টি মসজিদ রয়েছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি মাদরাসা। ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তক না থাকায় ইসলামি শিক্ষা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত নেপালের মুসলমানরা। সম্প্রতি মুসলমানদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন নেপালী ভাষায় ভারত থেকে কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ করেছে।
বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নেপালের মুসলমানদের জন্য আশার প্রদীপ ও অনুপ্রেরণা হলেন মোহনা আনসারি। তিনি ২০০৬ সালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে এ কমিশনের সদস্য হন। সেখানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে কাজ করেন। মোহনা আনসারির ভাষায়, ‘এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা খুবই কঠিন কাজ।’
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সক্রিয় মোহনা আনসারি বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও হুমকির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও তার কাজে যথেষ্ট মনোযোগী। নেপালের এই মানবাধিকার কর্মী মুসলমানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ব্যাপারে ইতিবাচক স্বপ্ন দেখেন।
নেপালের নতুন সংবিধানে প্রথমবারের মতো মুসলমানদের কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেশটির সরকারি চাকরির ১ শতাংশ মুসলমানের জন্য বরাদ্দ থাকবে। আনসারি নেপালে নারীদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের নতুন আইনকে সমর্থন করেন এবং আশা করেন এতে মুসলমান নারীরাও উপকৃত হবে।
তথ্য সূত্র : দ্যা নেশন, আল জাজিরা, ও মুসলিম মিরর।
এমএমএস/আরআইপি