কুরআনে পরকালের জবাবদিহিতার বর্ণনা


প্রকাশিত: ০৭:২৯ এএম, ১০ অক্টোবর ২০১৬

কুরআনুল কারিম মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এ বিধান শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্যই প্রযোজ্য নয়; বরং দুনিয়ার জীবন-যাপনে এ বিধান পালন করে কিয়ামাতের দিন জবাবদিহিতা থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে মানুষের প্রতিটি কর্মের জবাবদিহিতার বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।

কুরআনের সে বর্ণনা পড়লে পরকালের জবাবদিহিতার চিত্র মুমিনের হৃদয়ে ভেসে ওঠে। দুনিয়ার আমল অনুযায়ী পরকালে মানুষের জবাবদিহিতার বর্ণনা কুরআনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা বলেন-

Quran

‘যখন তিনি (আল্লাহ) শাস্তি দিবেন, তখন এই সমস্ত নেতা ও প্রধান ব্যক্তিরা, দুনিয়ায় যাদের অনুসরণ করা হতো; তাদের অনুগামীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা করবে। (অর্থাৎ তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার অভিযোগ তারা অস্বীকার করবে) কিন্তু শাস্তি তারা পাবেই এবং তাদের সমস্ত উপায়-উপকরণের ধারা (আত্মীয়-স্বজন; বন্ধুত্ব; বংশ পরিচয়) ছিন্ন হয়ে যাবে।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৬৫)

পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের পরিচয় তুলে ধরেছেন। সুতরাং মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেচনা থাকা সত্বেও তাঁদের হাতে গড়া বস্তুকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে। আল্লাহর সৃষ্ট জীবকে সৃষ্টিকর্তার মতো ভালোবাসে। অথচ মানুষের নিকট দৃঢ় ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার। যারা আল্লাহকে মনে প্রাণে ভালোবাসে তারাই মুমিন।

এ আয়াতে কিয়ামাতের একটি বিশেষ দৃশ্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কিয়ামাতের দিন যখন মুশকির নেতারা, তাদের বিদ্বানবর্গ, শাসকবর্গ ও বিশিষ্ট ব্যক্তির তাদের অনুগামী, শাসিত ও সাধারণ লোকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে তাদের অসহায়, নিরুপায় অবস্থায় ফেলে রাখবে; এ আয়াতে সে সময়টি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

দুনিয়াতে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে, গোমরাহীর পথ প্রদর্শন করায়, তারা কিয়ামাতের দিন তাদের অনুসারীদের সকল কৃতকর্মের দায়ভার অস্বীকার করবে। আত্মীয়তা ও ভালোবাসার যে সম্পর্ক দুনিয়াতে ছিল, সে দিন তাদের সে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।

তাফসিরে ওসমানিতে এসেছে, ‘যে অত্যাচারীরা মহান আল্লাহর জন্য শরিক স্থির করে, তারা যদি সেই অবশ্যম্ভাবী সময় দেখি নিত; যখন তারা মহান আল্লাহর সঙ্গে শরিক স্থাপনের জন্য শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে যে, সমস্ত শক্তির অধিকারী মহান আল্লাহ তাআলাই। তাঁর শাস্তি হতে কেউ বাঁচতে পারবে না; তাঁর শাস্তি বড়ই কঠোর। তাহলে তারা মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদাত ছেড়ে অন্যের প্রতি কিছুতেই মনোনিবেশ করত না এবং আল্লাহ ব্যতিত অন্যের থেকে উপকার লাভের প্রত্যাশা করত না।

আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরককারীদের সম্পর্কের যত দিক বা সূত্র রয়েছে- তা উস্তাদ-সাগরেদ হোক; নেতা-কর্মী (অনুগামী) হোক; বংশ ও রক্তের বন্ধন হোক; স্বদেশী-স্বজাতি বা বন্ধুত্বের সম্পর্ক হোক; এ সবই পৃথিবী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এ সকল নেতা ও বন্ধুরাই কিয়ামাতের দিন তাদের থেকে দূরে সরে দাঁড়াবে। যা তাদের সকল অনুসারী ও অনুগামীদের জন্য শুধুমাত্র সীমাহীন বিপদই ডেকে আনবে।

আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে এ ধরনের নেতা, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব থেকে হিফাজত করুন। শিরকমুক্ত ঈমান লাভ করে পরকালের কঠিন অবস্থা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। পরিপূর্ণ ঈমানদার হিসেবে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।