ক্ষমা ও নৈকট্য অর্জনের মাস মহররম
মহররম মাস। হিজরি (আরবি) সনের প্রথম মাস এটি। মহররমসহ চারটি মাসকে আল্লাহ তাআলা হারাম ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা এ চার মাসে সর্ব প্রকারের যুদ্ধ-বিগ্রহসহ খুন-খারাবি তথা রক্তপাতকে হারাম করেছেন।
বিশেষ করে সকল প্রকার অন্যায় থেকে ক্ষমা লাভ করে তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য এ মাসকে ইবাদাত-বন্দেগির মাস হিসেবে গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ মাসের ফজিলত অত্যধিক। যে কারণে আল্লাহ তাআলা পয়গাম্বরদের মধ্যে অনেককেই বিভিন্ন অসুবিধা থেকে মুক্তি দান করেছিলেন। সংক্ষেপে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-
১. হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালামকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন, তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধরতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেন, ‘তুমি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ, আমি গোনাহগার।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)
আল্লাহ তায়ালা হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালামকে মুসিল অঞ্চলে অবস্থিত নিনওয়া নামক স্থানের নবি করে পাঠান। তিনি সেখানে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করেন। মানুষ তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করায় তিনি ঐ অঞ্চল ছেড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলে যাওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যাতে আল্লাহ তাআলা অনুমোদন ছিল না।
সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সময় প্রচণ্ড ঝড় ওঠলে নৌকা থেকে একজনকে নামিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে লটারি হয়। লটারিতে বারবার হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালামের নাম ওঠে। ফলে তিনি নিজ থেকেই নদীতে ঝাপিয়ে পড়েন।
আল্লাহ তাআলা ‘বাহরে আখদার’ তথা সবুজ সাগর থেকে একটি বিরাটাকার মাছ পাঠিয়ে দিলেন। মাছটি পানি ফেড়ে এসে হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালামকে গিলে ফেললেন কিন্তু আল্লাহর নির্দেশে মাছ তাঁর মাংস খেল না এবং হাঁড় ভাঙাসহ কোনো ক্ষতি করল না।
মাছের পেটে তিনি আল্লাহর তাসবিহ শুনে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। আর বলেন, হে আল্লাহ! আমি এমন একস্থানে আপনার সিজদা করছি। যে স্থানে কেউ কোনো দিন আপনাকে সিজদা করেনি।
তিনি আল্লাহর কাছে এ মহররম মাসে ক্ষমা প্রার্থণা করলে আল্লাহ তাআলা তাঁকে এ মাসে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৮)
২. আল্লাহর নবি হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালামের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, ক্ষেত-খামার ও বাগ-বাগিচা সবই ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁকে আর্থিক, দৈহিক ও সন্তানের দুঃখ-কষ্টে পতিত করেন। তাঁর ওপর আল্লাহর পরীক্ষা আসে, এবং তার সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যায়। তার সম্পূর্ণ দেহ কুষ্ঠরোগে ভরে যায়।
অবশেষে তিনি আল্লাহর নিকট এভাবে দোয়া করেন, ‘এবং স্মরণ করুন আইয়্যুবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেন, আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৩)
অতঃপর আল্লাহ তাআলা হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালামকে মহররম মাসে ক্ষমা করে তার সমুদয় সম্পদ, স্ত্রী-সন্তানসমেত পুনরায় দান করেন। কুরআনে সেকথা এভাবে এসেছে, ‘অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁর দুঃখকষ্ট দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবরাবর্গ ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সঙ্গে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশত আর এটা ইবাদাতকারীদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৪)
পরিশেষে...
মহররম মাস ক্ষমা ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের মাস। এ মাসে পৃথিবীর প্রথম হতে শুরু হয়ে কারবালার ঘটনাসহ অসংখ্য ত্যাগ ও ক্ষমার নজির মুসলিম উম্মাহর জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামি সাহিত্যে উল্লেখ রয়েছে।
এ মাসেই কারবালার প্রান্তরে হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত সংঘটিত হয়ে ইসলামের নবজীবনের বীজ অংকুরিত হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর ত্যাগ, ক্ষমা, শিক্ষা গ্রহণের মাসের পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
যেহেতু কুরআন-সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত যে, এ মাস ক্ষমা ও নৈকট্য অর্জনের মাস। সুতরাং মহররম মাস শেষ হওয়ার আগেই মুসলিম উম্মাহর উচিত আল্লাহর দরবারের কঠিন কঠিন বিপদ-মুসিবত থেকে ক্ষমা প্রার্থণা করে তাঁর নৈকট্য অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা কর।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ মাসের হক আদায়, রহমত বরকত ও কল্যাণ লাভ এবং ইবাদাত-বন্দেগি ও তাকওয়ার মাধ্যমে মাসটি অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস