আল্লাহর গুণাবলী ও পরিচয় উপস্থাপন
আল্লাহ তাআলা নিজের পরিচয় প্রদানে কিছু নিদর্শন উপস্থাপন করেছেন। এ প্রমাণগুলো এতটাই অকাট্য এবং যুক্তিপূর্ণ যে এর বিরোধিতা করা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ তাআলা তাঁর গুণাবলী ও পরিচয় প্রদানে কুরআনে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করেছেন। যা ইয়াহুদি-নাসারা, পৌত্তলিক ও মুশরিকদের সকল প্রশ্নকে ভিত্তিহীন করে দেয়। এ সকল প্রমাণ উপস্থাপন করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয় নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং মানবজাতীর উপকারার্থে সমুদ্রবক্ষে জাহাজ সমূহের চলনে এবং আসমান থেকে আল্লাহ তাআলা যে বারি (পানি) বর্ষণ করছেন তাতে, যা দ্বারা পৃথিবীকে মৃত্যুর পর জীবিত করেন এবং জীব-জন্তুকে যে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে এবং বায়ুর যাতায়াত করাতে এবং আসমান ও জমিনের মধ্যে আল্লাহ তাআলার অনুগত হয়ে মেঘমালার গমনাগমনে সত্যিই বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে বহু জলন্ত নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৬৪)
পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজেই তার পরিচয় প্রদান করেন। যেখানে তিনি ইয়াহুদি-নাসারাদের ভুল ধারণা নিরসন করেন। তারা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের সত্যতা গোপন করতো; হজরত ইসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করতো; পৌত্তলিকরা আল্লাহ ব্যতিত অগণিত দেবতার পূজা করতো; হজরত ওজায়ের আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র বলে দাবি করতো। তাদের এ সকল দাবি ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অসত্য।
আয়াত নাজিলের কারণ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কুরাইশরা একবার বিশ্বনবির নিকট এসে বলতে লাগলো, ‘আপনি আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করুন যেন তিনি সাফা ও মারওয়া পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করে দেন। তাহলে আমরা তা দ্বারা অশ্ব ও সমরাস্ত্র ইত্যাদি ক্রয় করবো এবং আপনার সহযোগিতা করবো আর ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করব।’
বিশ্বনবি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি সঠিক ওয়াদা করছো? তারা উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ’ এটি আমাদের সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা।’ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার নিকট (তাদের চাহিদা মোতাবেক) দোয়া করলেন।
হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘তাদের (জন্য এ) দোয়া কবুল যাবে কিন্তু যদি তারা এরপরও ঈমান না আনে তবে তাদের ওপর এমন আজাব আসবে; যে কঠিন আজাব ইতিপূর্বে কখনো কারো প্রতি নিপতিত করা হয়নি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা শুনে কেঁপে ওঠলেন এবং আল্লাহ তাআলার নিকট আরজ করলেন, ‘না’; হে আল্লাহ! তাদেরকে এভাবেই থাকতে দাও। আমি তাদেরকে তোমার দিকে আহ্বান করতে থাকব। আজ না হয় কাল, কেউ তোমার পথে এসে যাবে।’ এ ঘটনার পর উল্লেখিত আয়াতটি নাজিল হয়। (তাফসিরে কাবির ও তাফসিরে ইবনে কাসির)
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাআলা একত্ববাদের কথা শ্রবণ করে পৌত্তলিকরা তার বাস্তব প্রমাণ দেখতে চাইলে এ আয়াত নাজিল হয় এবং তাঁর কুদরতের মহিমা বর্ণিত হয়। (তাফসিরে তাবারি)
অর্থাৎ অবিশ্বাসীদের জন্য আয়াতে উল্লেখিত নিদর্শনসমূহ কম নয়। এ বিশাল সৃষ্টিজগতের সুব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় আল্লাহ তাআলাই যথেষ্ট। এ আয়াতই তাঁর গুণাবলীর বর্ণনা ও পরিচয় বহনে যথেষ্ট।
আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর গুণাবলী এবং পরিচয় দানে পর তাঁর একত্ববাদের ওপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। পরকালীন জীবনের সফলতা লাভ করার তাওফিক নসিব করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি