সঠিক পথের সন্ধান পাবেন যারা
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন মানুষের যাবতীয় কল্যাণ সাধনের জন্য। পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করার কথা বলেছেন। যারা এ সকল বিপদে ধৈর্য ধারণ করবেন বা বিপদের সময় যেভাবে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন সে বিষয়েই আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে বর্ণনা করেছেন।
আর যারা আল্লাহর শিখানো পদ্ধতিতে বিপদে ধৈর্য ধারণ করবেন; কুরআনে তাঁদেরকেই সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে তাদের পরিচয় তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যখনই তাদের সামনে (কোনো পরীক্ষা) সমস্যা এসে উপস্থিত হয়; তখনই তারা বলেন, আমরাতো আল্লাহর জন্যই; আমাদের তো (একদিন) আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে।
(প্রকৃতপক্ষে) এরা হচ্ছে সে সব লোক যাদের ওপর রয়েছে তাদের মালিকের পক্ষ থেকে অবারিত রহমত ও অপার করুণা; আর এ সকল লোকেরাই সঠিক পথ প্রাপ্ত। (সুরা বাক্বারা আয়াত ১৫৬ ও ১৫৭)
আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিসে এসেছে, ‘মানুষ বিপদে পতিত হয়ে যদি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলেন; তবে আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে পূর্ণফল দান করেন এবং এর ফলে আরো উত্তম বস্তুও দান করে থাকেন।
আরো বর্ণনা করা হয়, ‘একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরের বাতি (আলো) নিভে গেলে তিনি ‘ইন্না লিল্লাহ’ পাঠ করেন। এতে হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এটাতো সামান্য একটি বাতিমাত্র। বিশ্বনবি বললেন, ‘যে বস্তুতে মু’মিন কষ্ট পায় এবং এতে তাঁর খারাপ লাগে; তাই তার জন্য বিপদ। (আবু দাউদ)
তবে তারা বিপদাপদে শুধুমাত্র মুখে মুখে ‘ইন্না লিল্লাহ’ বলায় সঠিক পথ প্রাপ্ত হবে না। বরং ‘ইন্না লিল্লাহ’ বলার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরে এ কথা স্বীকার করে নেয়া যে, আমরা (সবসময়) আল্লাহ কর্তৃত্বাধীন; আল্লাহ পথে যে কাজই করা হোক তা সঠিকভাবে করা অর্থাৎ দুনিয়ার সব জিনিসও আল্লাহর; ব্যয় করতে হবে হয় তাঁর পথেই।
আবার ‘আল্লাহর দিকেই আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে’। অর্থাৎ চিরকাল আমাদের এ দুনিয়ায় অবস্থান করার সুযোগ নেই। আমাদেরকে অবশ্যই একদিন তাঁর নিকট ফিরে যেতে হবে।
দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিপদাপদে পতিত লোকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যারা এ বিশ্বাস পরিপূর্ণভাবে লাভ করবে, তাঁদের জন্য রয়েছে মহান প্রভুর ক্ষমা; তাঁদের ওপর বর্ষণ করা হয় অবিরত রহমত। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে সঠিক পথের ওপর পরিচালিত করেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে-
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ধৈর্যশীল ব্যক্তিরাই দুটি জিনিস লাভ করেন। একটি হলো সালাত অর্থাৎ ক্ষমা আর অপরটি হলো রহমত অর্থাৎ বরকত লাভ আর এ দুটির মধ্যে একটি জিনিস রয়েছে আর তা হলো হিদায়াত তথা সঠিক পথ প্রাপ্তি।
পরিশেষে...
সঠিক পথের সন্ধান তাঁরাই পাবেন- যারা হাজারো বিপদাপদে আল্লাহ তাআলার প্রতি পরিপূর্ণভাবে আস্থাশীল হয়েছেন। মুখে, মনে এবং কর্মে সমানভাবে ‘সব কিছুই আল্লাহর জন্য; অবশেষে তাঁরই নিকট ফিরে যেতে হবে’ এ বিশ্বাস স্থাপন করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনে বর্ণিত বিপদাপদে সঠিক পথের দিশা লাভ করা তাওফিক দান করুন। বিপদাপদে আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থা ও বিশ্বাসের পাশাপাশি মানুষের সব কিছুই আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর নিকটই তাঁদের ফিরে যেতে হবে এ বিশ্বাস রাখার তাওফিক দান করুন।
কুরআনের ঘোষণা ক্ষমা ও অবিরত রহমত এবং সঠিক পথের (হিদায়াতের) ওপর অটল অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি