আল্লাহর মেহমানদের এবার ঘরে ফেরার পালা


প্রকাশিত: ১২:২৪ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আল্লাহর ঘরের মেহমানদের হজ পালন শেষ হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা অনুযায়ী সকল হাজ পালনকারীই সদ্য ভূমিষ্ট নিষ্পাপ শিশুর মতো। তাঁরা পুতঃপবিত্র নিষ্কলুষ আত্মার অধিকারী। আজ শনিবার থেকেই তাঁদের দেশে ফেরার পালা।

হজ সম্পাদন শেষে তাঁদের হৃদয়ে ভেসে বেড়ায় মসজিদে হারামের নামাজ, বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সাঈ, ঐতিহাসিক আরাফা ময়দানের লাব্বাইক ধ্বনি, মিনা-মুযদালিফায় অবস্থান এবং মিনায় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপের স্মৃতিসমূহ।

আরো স্মরণে পড়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র নগরী মদিনা মুনাওয়ারা। যেখানে আশেকে রাসুল কেঁদে বুক ভাসায়। পরম মায়া-মমতায় সালাম জানায় বিশ্বনবিকে। দিনের বেলায় মদিনার আঙ্গিনার সামিয়ানা আর মসজিদে নববির ভিতরে অনন্য ইবাদাত বন্দেগি করার স্থানগুলো।

সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত লাখো হাজির একটাই আশা ও আকাঙ্ক্ষা যেন, সদা-সর্বদা তাঁর আনুগত্যে থাকা যায়। গোনাহমুক্ত জীবন যাপন করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বিধান মোতাবেক জীবনের বাকি সময় অতিবাহিত করতে পারে। তাদের আকাঙ্ক্ষা থাকে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত হাদিসের মতোই।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আদম সন্তান একটি স্বচ্ছ-সুন্দর-শুভ্র-দাগহীন কলব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যখন সে একটি গোনা করে, কলবের আয়নায় একটি দাগ পড়ে যায়। গোনার দাগে একসময় ওই আয়না তার শুভ্রতা-স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলে।’ তাঁদের চাওয়া হলো, সদ্য গোনামুক্ত হৃদয়ে যাতে কোনো পাপের দাগ না পড়ে।

এ জন্য আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিষ্পাপ হওয়ার বিশেষ সুযোগ দান করেছেন হজের মাধ্যমে। যে ইবাদাতে সদ্য প্রসূত শিশুর মতো নিষ্পাপ হওয়া যায়। সুতরাং হজ পরবর্তী জীবনে অটুট থাকুক মাওলার প্রেম-ভালোবাসা, বৃদ্ধি হোক ইবাদাত-বন্দেগি, জাগ্রত থাকুক সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ববোধ।

হে আল্লাহর মেহমানগণ! আপনারা যারা সফলভাবে হজ সম্পাদন করেছেন, তাঁদেরকে এখন হাদিসে ঘোষিত এ শুভ্রতা ও স্বচ্ছতা ধরে রাখতে হবে। হতে হবে সচেতন। যাতে মহান রবের পক্ষ থেকে ‘ইয়া আইয়্যাতুহান নাফসুল মুতমাইন্না’ অর্থাৎ ‘হে প্রশান্ত আত্মা’র ডান শ্রবণ করা যায়। পাশাপাশি পরকালে মাওলার ডাকের সঙ্গে সঙ্গে ‘লাব্বাইক! আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’- ‘হাজির! হে আল্লাহ! আমি হাজির’- বলে যেন স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেয়া যায়।

হে বাইতুল্লাহর মেহমান! আপনারা হজের সফরের প্রারম্ভে আল্লাহ তাআলার যে ভয় ও ভালোবাসা নিয়ে হজের ভ্রমণ শুরু হয়েছিল। সে ভয় এবং মহব্বত অক্ষুন্ন রাখতে সচেষ্ট থাকুন। আল্লাহ তাআলার নিয়ামাতের অকৃজ্ঞতা থেকে বিরত থাকুন। জীবনের বাকি সময় আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবেই চলার চূড়ান্ত প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করুন। জীবনের সকল কর্মকাণ্ডকে আল্লাহর হাতে এ বলে সোপর্দ করুন যে, ‘নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সব কিছুই সমগ্র বিশ্বজাহানের প্রভু আল্লাহর জন্য।’

হে আল্লাহর ঘরের মুসাফির! সাদা শুভ্র যে দু’খণ্ড কাপড়ে আপনার হজের পথচলা শুরু হয়েছিল। এ পথ চলা যেন মাওলার দিদার লাভ (মৃত্যু) পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তা বাস্তবায়ন করতে হলে আপনার কথা-বার্তা, চাল-চলন, ওঠা-বসা, লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি তথা পরিবার প্রতিপালনসহ সকল কাজে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার পথেই চলতে হবে। তবেই সার্থক হবে আপনার হজকালীন কর্ম সাধনা।

হে আশেকে রাসুল! আপনারা যারা হজের পূর্বে অথবা পরে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারাত করেছেন, মসজিদে নববিতে নামাজ আদায় করেছেন। হৃদয়ের আবেগ ও অনুভূতি দিয়ে বিশ্বনবির প্রতি দরূদ প্রেরণ করেছেন। জীবনের বাকি সময়টুকু বিশ্বনবির আদর্শে নিজের জীবনকে রাঙিয়ে তোলার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করুন।

হে নিষ্পাপ মুসাফির! আরাফা ময়দানের ভাষণকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করুন। বিশেষ করে বিশ্বনবির বিদায় হজের ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানের ভাষণকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করুন। তবেই অর্জিত হবে আপনার দুনিয়া ও পরকালের কাঙ্ক্ষিত সফলতা।

পরিশেষে...
সদ্য হজ আদায়কারী নিষ্পাপ মর্যাদা লাভকারী আল্লাহর মেহমানগণ যেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারে। গরিব-দুঃখীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে; অন্যায় ও জুলমকারীর প্রতি বিশ্বনবির মহান আদর্শের জানান দিতে পারে। নিজের ব্যক্তি-পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কুরআন-সুন্নাহর সুমহান আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারে। এ প্রত্যাশায় আল্লাহর নিষ্পাপ মেহমানদের প্রতি রইলো শুভ কামনা....

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।