লাখো হাজি আরাফায় খুতবার অপেক্ষায়


প্রকাশিত: ০৬:৫১ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আজ ১১ সেপ্টেম্বর ৯ জিলহজ মুসলিম উম্মাহর হজের দিন। লাখ লাখ হাজি সকাল থেকেই অবস্থান নিতে শুরু করছে আরাফার ময়দানে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজিদের লাব্বাইক ধ্বনি ও পদচারণা মুখরিত ঐতিহাসিক আরাফার ময়দান।

লাখ লাখ হাজির কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে- ‘লাব্বাইক, আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইক লা- শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা- শারিকা লাক; অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির; আপনার কোনো অংশীদার নেই; নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্যও আপনার; আপনার কোন অংশীদার নেই।’

সকাল হতেই সাত লাখ মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মসজিদে নামিরা কানায় কানায় ভরপুর। ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানসহ চারপাশে অবস্থিত জাবালে রহমত, মসজিদে নামিরা, গাছের ছায়া, অস্থায়ী তাবু ইত্যাদি অবস্থান করছে হাজিরা।

শুধু মিনা থেকেই নয়, সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আজ হাজিরা দুপুরের পূর্বেই ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে অবস্থান নিতে লাব্বাইক ধ্বনিতে এসে পৌছছেন তাঁরা। সবারই একটাই চাওয়া, আল্লাহ তাআলার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা।

হাদিসের বিধান অনুযায়ী শনিবার জোহরের পূর্বেই মিনায় এসে অবস্থান করা সুন্নাত কাজ এবং তথায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় মুস্তাহাব। যা পালনে অধিকাংশ হাজি শনিবারই মিনায় এসে পৌছে গেছেন। তাঁরাই আজ ৯ জিলহজ রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) হজ পালনের জন্য ফজরের নামাজ আদায় করেই আরাফার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। অনেকেই আরাফায় ফজর নামাজ আদায় করেছেন।

সব বিশ্ব মুসলিমের মুখে একই আওয়াজ-
‘লাব্বাইক, আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইক লা- শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা- শারিকা লাক; অর্থাৎ ‘আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির; আপনার কোনো অংশীদার নেই; নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্যও আপনার; আপনার কোন অংশীদার নেই।’

সৌদি আরবের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশ ও স্থানীয়সহ  প্রায় ১৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের উদ্দেশে শুক্রবার জুমআর নামাজের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত পবিত্র মক্কা নগরী থেকে মিনায় স্থাপিত হাজার হাজার তাঁবুতে এসে অবস্থান নিয়েছেন আরাফায় অংশগ্রহণের জন্য। এ লাখো হজযাত্রীর মিছিলে বাংলাদেশ থেকেও হজ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় অংশ গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ১ হাজার ৮২৯জন।

ঐতিহাসকি আরাফার ময়দান থেকে জানা যায়, অনেক হাজিই আরাফার ময়দানে এসে ফজর আদায় করছেন। হজের তালবিয়ার মুর্হূমুহূ ধ্বনিতে আরাফা প্রান্তরকে প্রকম্পিত করে তুলছে হাজিগণ।

জোহরের ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মসজিদে নামিরায় মুয়াজ্জিন আজান দিবেন। আজানের পর ইমাম খুতবা শুরু করবেন। যা স্থানীয় সময় ১২টা এবং বাংলাদেশ সময় ৩টায় শুরু হবে।

এবার আরাফার ময়দানে সুদীর্ঘ ৩৫ বছর পর নতুন খতিব খুতবা প্রদান করবেন। ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানের খুতবা প্রদান করবেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব মুফতি ড. সালেহ বিন হুমাইদ। সে অপেক্ষায় হাজিরা।

তিনি আরাফার ময়দানের খুতবায় হজ, কুরবানি, হলক, কসর, মিনায় কংকর নিক্ষেপ, তাওয়াফে জিয়ারাতসহ হজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়সহ ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলিম উম্মাহর আগামী দিনের করণীয় কি হবে, সে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনামূলক খুতবা প্রদান করবেন।

খুতবা শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া ও কল্যাণ কামনা করবেন। অতঃপর ঐ আজানে আলাদা আলাদা ইকামতে জোহর ও আসর নামাজের জামাআতে আদায় করবেন।

নামাজ আদায় পরবর্তী ও মাগরিব পূর্ববর্তী সময়ে আরাফাতের ময়দানের যে কোনো স্থানে অবস্থান করবে। যতক্ষণ সম্ভব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ নিকট একান্ত চাওয়া-পাওয়া, দোয়া-দরুদ পাঠসহ তাকবির-তালবিয়া ঘন ঘন পাঠ করে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত কামনা করা।

বিশেষ করে তালবিয়া পাঠ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন اِنَّ النَّبِيَّ صلعم مَا زَالَ يُلَبِّيْ حَتّي اَتَي جَمَرَةُ الْعَقَبَةِ  অর্থাৎ নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামারাতুল আকাবায় যাওয়া পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকতেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি)

আরাফায় অবস্থানকালে দুহাত উঠিয়ে এবং দাঁড়িয়ে দোয়া করা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি তিনবার ‘আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ উচ্চারণ করে এ দোয়াটি পাঠ করেছেন-
لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ اللهُمَّ اهْدِنِي بِالهُدي و نَقِّنِي باِلتَّقْوي وَاغْفِرْلِي فِي الأخِرَةِ وَ الْاُوْلَي-

উচ্চারণ : ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালা; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ; আল্লাহুম্মাহদিনি বিলহুদা; ওয়া নাক্কিনি বিত-তাক্বওয়া; ওয়াগফিরলি ফিল আখিরাতে ওয়াল উলা।’

অর্থ : ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। তিনি একক, লা শরীক। রাজ্য তারই এবং সমস্ত প্রশংসাও তাঁরই। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়েতের পথ প্রদর্শন কর এবং তাকওয়া দ্বারা আমাকে পরিচ্ছন্ন কর এবং দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা কর।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমিসহ আমার পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসুলগণ যে দোয়াগুলো পাঠ করেছেন, তার মধ্যে সর্বোত্তম দোয়াটি হলো-

لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلي كُلِّ شَيئ قَدِيْر
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।’

আল্লাহ তাআলা অপেক্ষমান লাখ লাখ হাজিকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদে হজের খুতবা শ্রবণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।



এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।