আল্লাহর আনুগত্যের নিদর্শন কুরবানি
আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার শিক্ষা এভাবে উল্লেখ করেছেন, যা কুরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমর মৃত্যু সব কিছুই সমগ্র বিশ্বজাহানের প্রভু আল্লাহ তাআলার জন্য।’
কুরআনের শিক্ষার আলোকে ত্যাগ, তিতিক্ষার মাধ্যমে মানুষের সর্বাধিক প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাঁর নামে উৎসর্গ করাই হচ্ছে কুরবানি। যা হজরত আদম আলাইহিস সালাম-এর সময়কাল হতে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত চালু রয়েছে। কুরবানির বর্তমান প্রচলন এবং শুরুর ইতিহাস কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানি আদায়ের পূর্বেই তা সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানের জেনে নেয়া আবশ্যক।
আর ক`দিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ‘কুরবানির ঈদ’। যে ধর্মীয় উৎসব পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআ’লার সন্তুষ্টি অর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মুসলিম উম্মাহ। কেননা কুরবানিই আল্লাহ তাআলার আনুগত্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। তাই সংক্ষেপে কুরআনে বর্ণিত কুরবানির প্রচলন ও বর্তমান ধারা তুলে ধরা হলো-
কুরবানির প্রচলন-
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম কুরবানি সংঘঠিত হয়েছিল হজরত আদম আলাইহিস সালামের দুই পুত্র হাবিল এবং কাবিলের মধ্যে। আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবিকে সে ঘটনা কুরআনে এভাবে জানান, ‘আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা (আল্লাহর) ভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের (উৎসর্গ) গৃহীত হয়নি। (সুরা মায়িদা : আয়াত ২৭)
আর এ কুরবানির বিধান হজরত আদম আলাইহিস সালাম-এর ছেলেদের পর থেকে শুরু করে যুগে যুগে সব নবি-রাসুলদের জন্যই বিদ্যমান ছিল। যার প্রমাণ আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবি জানিয়ে দেন এভাবে যে, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু জবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সুরা হজ : আয়াত ৩৪)
বর্তমান কুরবানি-
বর্তমান দুনিয়ায় প্রচলিত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যে কুরবানির প্রথা চালু রয়েছে, তা মূলত হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিবিজড়িত আত্ম-ত্যাগের সর্বোচ্চ ইবাদত। এ ঘটনার ইঙ্গিতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
অতঃপর সে যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহিম তাকে বলল, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবেহ করছি, এখন তোমার অভিমত কী বল? সে বলল, হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, (আপনি) তাই করুন। আল্লাহ ইচ্চায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।
যখন পিতা-পুত্র উভয়েই (আল্লাহর নির্দেশের) আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) তাকে জবেহ করার জন্যে শায়িত করলেন। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে (বাস্তবে) পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এ ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার (হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের) পরিবর্তে দিলাম জবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার জন্যে এ (আদর্শ) বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইবরাহিমের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা সাফফাত : আয়াত ১০২-১১০)
বস্তুত হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর পুত্রকে কুরবানি দেয়ার এ ঘটনাকে অবস্মিরণীয় করে রাখতেই আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য কুরবানিকে ওয়াজিব হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ অর্থাৎ অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন। (সূরা কাউসার : আয়াত ২)
পরিশেষে...
কুরবানির প্রচলন ও বর্তমান ধারা বান্দার জন্য শুধুমাত্র আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম হোক। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরবানির আত্ম-ত্যাগের শিক্ষা মানুষের জীবনে বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। মনের পশুত্ব কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। মুসলিম উম্মাহর সব কুরবানিকে কবুল করুন। আমিন।
এমএমএস/এবিএস