রোজার প্রয়োজনীয় কয়েকটি মাসায়েল


প্রকাশিত: ০৩:৩৭ পিএম, ২৯ জুন ২০১৪

ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে কি না
রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ, ইনহেলার দ্বারা অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগী শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য মুখ দিয়ে ধোঁয়া টেনে নেয়- যেভাবে মানুষ বিড়ি-সিগারেট পান করে। রোজা অবস্থায় বিড়ি-সিগারেট পান করা নিষেধ। এতে রোজা ভেঙে যায়। তাই ইনহেলার ব্যবহারেও রোজা ভেঙে যায়। উল্লেখ্য, রোজা রাখার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় এমন যেকোনো কাজ রোজা ভঙ্গের কারণ। [ফতোয়ায়ে শামি, দ্বিতীয় খণ্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠা। ফতোয়ায়ে দারুল উলুম, ষষ্ঠ খণ্ড, ৪১৮ পৃষ্ঠা।]

ইনজেকশন ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে কি না
ইনজেকশন দ্বারা ওষুধ গ্রহণ করলে রোজা ভাঙবে না। কারণ, রোজা ভঙের শর্ত হচ্ছে পেটে বা মস্তিষ্কে কোনো কিছু পৌঁছা। ইনজেকশনে যেহেতু এ ধরনের কিছু নেই, তাই এটা রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। [আহসানুল ফাতাওয়া, চতুর্থ খণ্ড, ৪২২ পৃষ্ঠা।]

সন্তানকে দুধ পান করালে রোজার ক্ষতি হয় কি না
সন্তানকে দুধ পান করালে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ, এটা রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। আর রোজায় বলা হয় পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে। এখানে যেহেতু পানাহার ও স্ত্রী সহবাসের কোনো সুযোগ নেই, তাই রোজা হয়ে যাবে। [ফতোয়ায়ে শামি, তৃতীয় খণ্ড, ৩৭১ পৃষ্ঠা।]

রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট বা নিমের মাজন ব্যবহার করলে তার হুকুম কী
রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট ও নিমের মাজন ব্যবহার করা মাকরুহ (অপছন্দনীয়)। কারণ টুথপেস্ট ও নিমের মাজনের স্বাদ অনায়াসে মুখের ভেতরে প্রবেশ করে, যা রোজার উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। অবশ্য নিমের ডাল ও অন্যান্য মেছওয়াক দ্বারা দাঁত মাজা যায়। [আহসানুল ফতোয়া, চতুর্থ খণ্ড, ৪২২ পৃষ্ঠা।]

মা-বাবা নামাজ-রোজা ঠিকমতো পালন না করে মারা গেলে সন্তানের দায়িত্ব
যদি মা-বাবা নামাজ-রোজা ঠিকমতো আদায় না করে ইন্তেকাল করেন তাহলে (যদি অসিয়ত করে যান তবে) সন্তানের ওপর দায়িত্ব হলো মা-বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে নামাজ-রোজার কাফফারা আদায় করে দেওয়া। যদি তাঁরা সম্পদ রেখে না যান বা অসিয়ত করে না যান তাহলে সন্তানের ওপর দায়িত্ব নেই। তবে স্বেচ্ছায় সন্তান যদি কাফফারা আদায় করে দেয় তাহলে মা-বাবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। নামাজ ও রোজার কাফফারা হলো প্রতি ওয়াক্ত নামাজ বা প্রতিটি রোজার পরিবর্তে পৌনে দুই সের আটা বা গম বা তার মূল্য কোনো গরিব মানুষকে দান করে দিতে হবে। উল্লেখ্য, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে বেতের নামাজকেও হিসাব করতে হবে। সে হিসাবে দৈনিক নামাজ হচ্ছে ছয় ওয়াক্ত। সুতরাং, প্রতিদিন ছয় ওয়াক্ত নামাজের কাফফারা দিতে হবে। কেউ যদি অসুস্থ অবস্থায় রোজা না রেখে মারা যায় তাহলে রোজার কাফফারা লাগবে না। কারণ সে রোজা রাখতে সক্ষম হওয়ার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। যদি সুস্থ হওয়ার পর সময় পাওয়া সত্ত্বেও রোজা কাজা না করে মারা যায় তখন কাফফারা দিতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির হুঁশ থাকা অবস্থায় নামাজ পড়তেই হবে। যেভাবে তার পক্ষে সম্ভব হয়। তাই অনেক আলেম বলেন, নামাজ না পড়লে এর কোনো কাফফারা নেই। তবে অনেকের মতে, হয়তো আল্লাহপাক কাফফারার বিনিময়ে তাকে মাফ করে দিতে পারেন। তাই কাফফারা দেওয়া উচিত। [ফতোয়ায়ে শামি, দ্বিতীয় খণ্ড, ৪২২ পৃষ্ঠা।]

পাগল বা বেহুঁশ হলে তার বিধান
যদি কোনো ব্যক্তি পুরো রমজান মাস পাগল থাকে তাহলে তার ওপর থেকে রমজানের রোজা রহিত হয়ে যাবে। যেরূপ ভাবে ইসলামের অন্যান্য বিধান তার ওপর থেকে রহিত হয়ে যায়। আর কেউ রমজানের রোজা অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে গেলে এবং তা সে অবস্থায় কয়েক দিন থাকলে যেদিন সে বেহুঁশ হয়েছিল সেদিনের রোজা কাজা করবে না। পরবর্তী দিনগুলোর রোজা কাজা করবে। [হেদায়া, প্রথম খণ্ড, কিতাবুস সওম।]

সেহরি ইফতার ভুলবশত আগে পরে হলে তার বিধান
যদি কোনো ব্যক্তি সেহরি খাওয়ার পর জানতে পারল যে, যেই সময়ে সেহরি খেয়েছে এর আগেই সময় শেষ হয়ে গেছে। অথবা সূর্যাস্ত হয়ে গেছে ভেবে ইফতার করল। অতঃপর দেখা গেল এখনো সূর্যাস্ত হয়নি। তাহলে সেদিনের অবশিষ্ট সময়টুকু বিরতি পালন করবে এবং অন্য সময়ে তা কাজা আদায় করে নেবে। [হেদায়া, প্রথম খণ্ড, কিতাবুস সওম।]

রোজা অবস্থায় স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসব হলে

রোজা অবস্থায় যদি কোনো স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাব হয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। যতগুলো রোজা বাদ যাবে বছরের অন্য সময়ে তা কাজা আদায় করে নেবে। সন্তান প্রসব করলেও একই বিধান। অর্থাৎ রক্তস্রাব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত রোজা রাখবে না। ছুটে যাওয়া রোজাগুলো অন্য সময়ে কাজা আদায় করবে। [হেদায়া, প্রথম খণ্ড, কিতাবুস সওম।]
গ্রন্থনা : মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।