ক্বিরান হজ যেভাবে আদায় করবেন


প্রকাশিত: ০৬:৪০ এএম, ১৮ আগস্ট ২০১৬

মুসলিম উম্মাহর জন্য হজ আদায়ের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ আদায়ের নিয়ম হচ্ছে তিনটি। তামাত্তু, ক্বিরান ও ইফরাদ। ইতিপূর্বে তামাত্তু হজ আদায়ের নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। ক্বিরান হজ আদায়কারীদের জন্য ধারাবাহিক নিয়ম তুলে ধরা হলো-

ক্বিরান হজ
হজ ও ওমরার ইহরাম এক সঙ্গে বেঁধে প্রথমে ওমরা সম্পন্ন করবে। অতপর ইহরাম থেকে বের হওয়া যাবে না এবং সকল প্রকার নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকেতে হবে। ৭ তারিখ মক্কায় হজের নিয়ম সম্পর্কিত বয়ান শুনার পর হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। ক্বিরান হজ আদায়ের নিয়ম তুলে ধরা হলো-

১. হজ ও ওমরার ইহরাম (ফরজ)
যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরাসরি মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছেন, তারা নিজ নিজ দেশ থেকে অর্থাৎ মিকাত অতিক্রম করার পূর্বেই ইহরাম বাঁধবেন। ইহরাম বাঁধার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেরে ওজু বা গোসল করে সেলাইবিহীন দু’টি কাপড় পরিধান করা। মহিলারা তাদের ইহরামের পোশাক পরিধান করবেন। অতপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে হজ ও ওমরার নিয়ত করা এবং তিনবার তালবিয়া পাঠ করা-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ওমরাতান; লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারিকা লাক।

২. ওমরার তাওয়াফ (ওয়াজিব)
ওজুর সঙ্গে ইজতিবাসহ তাওয়াফ করা। ইজতিবা হলো ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচে রেখে চাদরের দুই মাথাকে বাম কাঁধের সামনে ও পিছনে ফেলে রাখা।

হাজরে আসওয়াদ থেকে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত ওঠিয়ে তাওয়াফ শুরু করা। প্রথম তিন চক্কর রমল তথা বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদমে দ্রুতগতিতে প্রদক্ষিণ করা। পরবর্তী চার চক্কর সাধারণভাবে হেটে আদায় করা।

সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করে তাওয়াফ শুরু করে রুকনে ইয়ামেনি অতিক্রম করার সময় তা স্পর্শ করা। সম্ভব না হলে ইশারা করাই যথেষ্ট।

রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত তাওয়াফকালে এ দোয়া পড়া-
উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদ্দিুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আ’জাবান নার। অতপর হাজরে আসওয়াদে এসে তাওয়াফ শেষ করা। এভাবে সাতবার চক্কর বা প্রদক্ষিণ করা।

৩. সাঈ (ওয়াজিব)
ক্বিরান হজ আদায়কারীরা সাফা পাহাড়ের ওপরে আরোহন করে সেখান থেকে ক্বিবলামুখী হয়ে সাঈ’র নিয়ত করে সাফা হতে সাঈ শুরু করা। সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী নির্ধারিত চিহ্নিত স্থান দ্রুতবেগে অতিক্রম করা। মারাওয়া পাহাড়ে আরোহন পূর্বক দোয়া করা। অতপর আবার সাফায় আসা। এভাবে সাতবার সাঈ করা। যদি এ সময় সাঈ না করা যায়; তবে তাওয়াফে জিয়ারাতের পর তা আদায় করা ওয়াজিব।

৪. তাওয়াফে কুদুম (সুন্নাত)
ক্বিরান হজ আদায়কারীদের জন্য এ তাওয়াফকে ‘তাওয়াফে কুদুম’ বলা হয়; যা আদায় করা (সুন্নাত)।

৫. সাঈ (ওয়াজিব)
ওমরা আদায়ের জন্য সাঈ করুন। তবে ক্বিরান হজ আদায়ের নিয়তকারীদের জন্য ওমরার সাঈ’র পর চুল ছাঁটা, কাঁটা বা মুণ্ডন নিষেধ। বরং ইহরামের সব বিধান মেনে চলা। অর্থাৎ সকল প্রকার নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা।

৭ জিলহজ হারাম শরিফে হজের নিয়মাবলীর ওপর খুতবা দেয়া হয়। তা মনোযোগ সহকারে শুনা বা বুঝে নেয়া। ৮ জিলহজ জোহরের নামাজের পূর্বে মিনায় পৌঁছা।

জিলহজের ৮ তারিখ জোহরের নামাজের পূর্ব থেকে-
৬. মিনায় অবস্থান (সুন্নাত)
জিলহজের ৮ তারিখ জোহর থেকে ৯ তারিখ ফজর পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ত (জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর) নামাজ মিনায় পড়া (মুস্তাহাব) এবং তথায় অবস্থান করা (সুন্নাত) ।

জিলহজের ৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পর-
৭. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান (ফরজ)
হজের অন্যতম রুকন হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। ৯ জিলহজ সকালে মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে আরাফায় আসার প্রস্তুতি স্বরূপ গোসল করে একবার তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা। জোহরের নামাজের পূর্বেই আরাফায় আসা।

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ’
অতপর দুপুরের পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শ্রবন করা। এবং নিজ নিজ তাবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করা। সেখান থেকে সুর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হওয়া।

৮. মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব)
আরাফার দিন সূর্যাস্তের পর মুযদালিফায় গিয়ে ইশার সময় মাগরিব ও ইশা এক আজানে ও একই ইক্বামাতে একসঙ্গে আদায় করা (সুন্নাত)। প্রত্যেক নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক আদায় করা অর্থাৎ ১৩ জিলহজ আসর নামাজ পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক আদায় করা।

জিলহজের ১০ তারিখ-
তবে ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর সুর্যোদয়ের পূর্বে কিছু সময় অবস্থান করা (ওয়াজিব)।মিনায় কংকর নিক্ষেপের জন্য এখান থেকেই পাথর সংগ্রহ করে রাখা।

৯. কংকর নিক্ষেপ (প্রথম দিন)
১০ জিলহজ ফজর নামাজ মুযদালিফায় আদায় করে সুর্যোদয়ের পূর্বেই মিনায় এসে বড় জামরায় ৭টি (সাত) কংকর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। এ দিন সম্ভব না হলে রাতের শেষ পর্যন্ত সময়ে কংকর নিক্ষেপ করা। কংকর নিক্ষেপের জায়গায় বাংলায় দিক-নির্দেশনা দেয়া হয় তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা।

জিলহজের ১১ তারিখ-
১০. কোরবানি করা (ওয়াজিব)
মিনায় রাত্রি যাপনের করে সকালে কুরবানি নিশ্চিত করা জরুরি।

১১. মাথা মুণ্ডন করা (ওয়াজিব)
কুরবানি সম্পন্ন করার পর মাথা হলক বা মুণ্ডন করা বিশ্ব নবির আদর্শের অনুসরণ করা (ওয়াজিব)। তবে চুল ছেঁটে নিয়েও হবে।
সতর্কতা- কংকর নিক্ষেপ, কুরবানি ও মাথা মুণ্ডনের মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি।

শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া সব কাজ করা যাবে
১২. তাওয়াফে জিয়ারাত (ফরজ)
হজের সর্বশেষ ফরজ কাজ। এ তাওয়াফে জিয়ারাত ১২ জিলহজ সুর্যাস্তের পূর্বেই সম্পন্ন করা। ১২ তারিখের পর এ তাওয়াফ দম বা কুরবানি দিতে হবে। যারা তাওয়াফে কুদুমের পর সাঈ না করলে তা আদায় করে নিতে হবে।

১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান এবং কংকর নিক্ষেপ-
১৩. কংকর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)
১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থিত তিন জামরায় ৭টি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব। প্রথমে ছোট জামরায় তারপর মধ্যম, অতপর বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা। সর্বক্ষেত্রে দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতের বেলায় কংকর নিক্ষেপ করা উত্তম।

১৪. মিনায় রাত যাপন
১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থানের সময় সেখানে রাত যাপন করা (সুন্নাত)। ১৩ জিলহজ কংকর নিক্ষেপ শেষ করে মিনা থেকে ফিরে আসা সুন্নাত। (এর মাঝে মক্কায় এসে তাওয়াফে জিয়ারাত সম্পন্ন করে আবার মিনা যাওয়া।)

১৫. মিনা ত্যাগ
১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে মিনা ত্যাগ করা। সুর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম।

১৬. বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)
সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত সকল হজ যাত্রীদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। তবে হজ শেষে যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফ পরিণত হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তামাত্তু হজ যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।